হঠাৎ-ই, সেদিন অফিস বিল্ডিং’র ড্রংই-রুম থেকে চেঁচামেচি শুনতে পেয়ে তাড়াতাড়ি নামতে নামতে তিনি শ্বশুর মশাই, সূর্য ও শকুন সিং’র মধ্যে তীব্র বাদানুবাদ শুনতে পান;ঠাকুর বংশের ধারা তো সবার মধ্যেই,সূর্য টেবিল চাপড়ে শকুনিকে কী সব বলছে;শ্বশুর মশাই হঠাৎই চেয়ার থেকে উঠেই দেওয়াল থেকে বন্দুক নিয়ে শকুনির দিকে তুলেছেন, সূর্য, বিপদ বুঝতে পেরে বাবার হাত থেকে বন্দুক কেড়ে নিতে গিয়েই যত বিপত্তি, গুলি বেড়িয়ে সূর্য’র মাথা ভেদ করে দেওয়ালে গেথে গেছে। শ্বশুর মশাই হতভম্ভ;শকুনি অফিস-ঘর থেকে সবাইকে ডেকে এনে সব বলছে। মালকিনের কোলে সূর্য, রক্তে ভেসে গেছে অফিস-ঘর;তাঁর জীবনের সূর্য অস্ত গেল। থানা -পুলিশ, কত কী হল, মালকিনের একটাই কথা, “আমি স্বচক্ষে সূর্যকে আত্মহত্যা করতে দেখেছি”। কোর্টে, তাঁর কথাই প্রাধান্য পায়, শ্বশুর মশাই বে-কসুর খালাস পেলেন;শকুনির সমস্ত চালই সেদিন তিনি বানচাল করে দিয়েছেন। সেদিন থেকেই শ্বশুর মশাই কেমন যেন নিশ্চুপ হয়ে গেছেন, তাঁকেই সব কিছু র ভার নিতে হয়েছে। উত্তরাধিকার নেই তাই অনেকেই সম্পত্তির আশা য় আসা-যাওয়া শুরু করেছে।
শ্বশুর মশাই, শুধু ই কেঁদে চলেছেন। একদিন শাশুড়ি-মা’র ফটোর সামনে দাঁড়াতে ই তিনি যেন ‘আদেশ করছেন, বহুঁ, তুমি শ্বশুর মশাই কে সাদি কর, বংশগতির ব্যবস্থা কর।’ তিনি চিন্তা করলেন, শ্বশুর মশাই কে নিয়ে গিয়ে আইন মোতাবেক তাদের সাদি হ’ল—। এক বছর পরই, নারায়ন এল, তার দু বছর পরই সংকর এলো। বাপের বাড়ির সাথে সম্পর্ক টুটে গেছে।শাশুড়ি-মা’র ছবির সামনে দাড়ালে মনে হোত, যেন তিনি বলছেন,’মা,আমি আছি, ভয় কি, এগিয়ে চল,আমি সব সময় তোমার সঙ্গে আছি, তুমি তো আমার ঘরের লক্ষ্মী।’ কিছু দিন পরেই শ্বশুর মশাইও উপরে চলে গেলেন।তিনি একাই সব সামলেছেন।একদিকে ব্যবসা, অন্যদিকে ছেলেদের ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষায় শিক্ষিত করে কী অমানুষিকভাবে যে শাশুড়ি-মা’র আশীর্বাদে তিনি অসম্ভবকে সম্ভব করে তুলেছেন, আজ ভাবলে তিনি নিজেই বিস্মিত। তিনি অর্ধচেতন অবস্থায় মনে মনে বলছেন, ‘মা, আমি তোমার কথা রাখতে পেরেছি, তোমার নাতিরা আজ দাঁড়াতে সক্ষম হয়েছে, ওদের আশীর্বাদ কর। ‘
দূরে ব্যান্ড-পার্টির আওয়াজে সংবিৎ- এ ফিরে এসেছেন। ইট-ভাটা থেকে সাদা ধোঁয়া উঠছে। আজ সমস্ত কুলি, কামিনী, সবাই কে মাঠে পাত পেড়ে খাওয়াবেন–সকলের অভিভাবক যে তিনি, তাঁকে যে এ জীবনে শুধু দিয়েই যেতে হবে-সংসারের কাছে তিনি বলি প্রদত্ত।
পক্ষী-মাতার সব কিছুই তিনি আগলে রেখেছেন। এবার তাঁর সংসার থেকে ছুটি নেওয়ার পালা;ছেলেদের সাদি দিয়ে তিনি বহুঁদের হাতে সংসারের ভার দিয়ে বদ্রীনাথ ধামে শেষ দিন গুলো কাটাবেন।