সাপ্তাহিক ধারাবাহিকে উজ্জ্বল কুমার মল্লিক (পর্ব – ১৬)

সাদা মিহি বালি

তৃতীয় অধ্যায় – দ্বিতীয় পর্ব

রাঘবেন্দ্র ঘোষালের সংগে নারায়ণ ঘোষালের সদ্ভাব থাকলেও ওনার মেজ- ভাই মাধবের সংগে তিক্ততার সম্পর্ক। সেও নিকটবর্তী কারখানায় ঠিকাদারি করে, রাঘববাবুর মেজ- ভাই, শিবশংকরের প্রতিদ্বন্দ্বী;স্বার্থে র সংঘাত তো থেকেই যায়। আবার, মাধব ঘোষালও শাসকদলের অন্য নেতার অনুগামী, ফলে রাজনীতির জগতে মো- সাহেবী ক্ষেত্রে, রাঘববাবুর প্রতিদ্বন্দ্বী বলা চলে। ওনারা ব্যবসায়ী, অর্থ- উপার্জনের জন্যই রাজনীতির সংগে যোগসাজশ, কখনই
শাসন-ব্যবস্থায় অংশ নিতে উদ্যোগী নয়, তবে, যেহেতু রাজনৈতিক দাদাদের ভাই, তাই
রাজনীতির গন্ধ গায়ে লেগেই যায়। মাধব ঘোষালও নির্বাচনের সময় সক্রিয় অংশ গ্রহণ করে, তবে সেটা নিজের নিজের দাদার নির্বাচনের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকে– সেখানেই কেবল তাদের ভূমিকা লক্ষ্য করা যায়। ঠিকাদারির ব্যবসার জন্য, মাধব ঘোষালের কাছেও প্রায় শ’খানেক ছেলে- ছোকরা কাজ করে;সবাই প্রায় উদ্বাস্তু পরিবার থেকেই এসেছে;স্কুল- ছুট, মার- দাঙ্গায় একেবারে কৈশোর থেকেই সিদ্ধহস্ত। শিব-শংকরের ছেলেদের সংগে, মাধবের ছেলেদের প্রায়ই স্বার্থজনিত কারণে সংঘাত লেগেই থাকে; হয় হাতাহাতি, পরে
বোমাবাজি। রাত- বিদেশে ছুটে চলে লোকাল থানার পুলিশের গাড়ি। পুলিশের তো হাত- পা বাঁধা;
লোক দেখানো, দু’পক্ষের লোককেই ধরে নিয়ে যাওয়া, তারপর থানা থেকেই জামিন দেওয়া।কখনো, কখনো কোর্টে চালান দেয়;সেখান থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে এসে, আবার জড়ায় ঐ হাতাহাতিতে, চলে বোমার কসরতি; হৈ, হৈ চীৎকার- ধারা প্রবহমান। এলাকার মানুষ রয় আতঙ্কিত, ভীত সন্ত্রস্ত।

স্থানীয় একটা ক্লাবের উপর নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে শিব-শংকর ও
মাধবের মধ্যে শুরু হয় রেষারেষি। মাধব ঘোষাল, ঐ ক্লাবকে ভেঙ্গে অন্য একটা জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যায়। রাজনীতির ছত্রছায়ায় থাকায়, সেখানে গড়েছে ক্লাব ও তার পাশেই একটা জুনিয়র হাই স্কুল। শিক্ষক/শিক্ষিকার নিয়োগ সম্পূর্ণ তার হাতে, ফলে অঞ্চলের
যুব- সম্প্রদায়ের মধ্যে তার প্রভাব বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশে কাতারে কাতারে ছিন্নমূল মানুষ আসছে; ঘোষালদের জায়গা ও অন্যান্য সরকারি অধিকৃত জায়গায় বসতি হয়েছে। বাসস্থান হলেও অন্নসংস্থানের উপায় বের করতে যেতে হয় ঐ ঠিকাদারদের কাছে; সহজেই কাজ পাওয়া যায়। ছেলেরা তো স্কুল- ছুট, আবার দুঃসাহসী, পিছ- টানহীন। সুতরাং, ওদের দিয়েই মাধব ঘোষাল ঐ স্কুলের লাগোয়া, প্রায় দু’বিঘে জমির উপর অট্টালিকা সমেত সম্পত্তি জলের দরে কিনেছেন; না, কিনেছেন বললে, ভুল হবে, এক রকম দখলদারি উচ্ছেদ করে, স্কুলের নামে জমি- বাড়ির মালিকানা নামান্তর ঘটেছে।

কুমারেরা, এ অঞ্চলের পুরনো বাসিন্দা। প্রয়োজনের তাগিদে তাঁরা কোলকাতায় ছিলেন। পুব- বাংলা থেকে আসা এক বর্ধিষ্ণু পরিবারকে অসহায় অবস্থায়
নিজেদের অট্টালিকায় থাকবার অনুমতি দিয়েছিলেন; নিরাশ্রয়কে
আশ্রয় দিয়ে তাঁরা খুবই অন্যায় করেছিলেন। তাই কয়েক বছর পর নিজেরা ফিরে আসতে চাইলে উপকার- গ্রহিতা, তাঁদের ঢুকতে বাধা দেয় এবং কোর্টে মামলা ঠুকতে বাধ্য করে। এ দেশের সিভিল- কোর্টের মামলার কী হাল, ভুক্ত- ভোগীই জানে। কুমারেরা, শেষ পর্যন্ত অঞ্চলেই একটা জরাজীর্ণ প্রাসাদে আশ্রয় নিয়ে মাধব ঘোষালের শরণাপন্ন হয়।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।