আন্তর্জাতিক || পাক্ষিক পত্রপুট || এ উজ্জ্বল বন্দ্যোপাধ্যায় (ধারাবাহিক)

একবচন বনাম বহুবচন
যখন আমরা কিছু লিখি,একটা বাড়তি সচেতনতা ভেতরে ভেতরে কাজ করে।কেননা অনেক মানুষ সেটা পড়বে।ভুল বা অশোভন কিছু থাকাটা উচিত নয়।স্বাভাবিক শালীনতা আর শুভ অশুভ বোধ থেকে এটা ঘটে।ছোটবেলা থেকেই শুনে আসছি, শ তং বদ,না লিখ।অর্থাৎ মুখে শত শত কথা বলো,কিন্তু লিখো না।লিখতে গেলে দশবার ভাবো।
এখন থেকেই আসছে লেখার ভাষা আর মুখের ভাষার পার্থক্য।মুখের ভাষাই বেশি জীবন্ত।কেননা তাতেই আমরা ভাবের আদান প্রদান করি।সেই মুখের ভাষা এত বিবেচনা করে মুখ থেতে বেরিয়ে আসে না।তার আকার প্রকার ভালো মন্দ সম্পর্কে পূর্ব সচেতন প্রস্তুতি থাকে না।ফলত আলটপকা কিছু শব্দ বেরিয়ে যাচ্ছে।বেরিয়ে যাচ্ছে বলেই ভুল বোঝাবুঝি হচ্ছে।অসৌজনার অভিযোগ উঠছে।
আজকের আলোচনা ভাষা নিয়ে।লক্ষ একটাই।মুখের ভাষা বনাম লেখার ভাষার প্রায়োগিক বিষয়টা কোন ব্যাকরণ মেনে চলবে।একটা উদাহরণ দিই।এক লপ্তে এই টাকা ফেরত দিতে হবে।অথবা
এই আইন লাগু করা হবে।এই শব্দ মুখে,লেখায় প্রকাশ পাচ্ছে।এই দুটি বাংলা শব্দ কিনা ভাবতে হবে।বাংলা ভাষায় হাজার হাজার বিদেশি ভাষা ঢুকেছে। আরবি,ফারসি ঢুকেছে।তাতে ক্ষতি তো হয়নি,উল্টে নমনীয় বাংলা তাদেরকে আত্মস্থ করেছে।নিজেকে সমৃদ্ধ করার এটা একটা পথ।
ভাষা নিয়ে ছুঁত মার্গ না থাকায় ভালো।দিবে আর নিবে, মিলাবে মিলিবে….কবির উদার ডাক।
শহিদ,ইনকিলাব জিন্দাবাদ তো এখন বাংলাই হয়ে গেছে।চেয়ার টেবিল গেলাস …সব বাংলা।এসব নিয়ে তর্কের কোনও জায়গা নেই।ভাষা সন্ত্রাস নিয়ে যে বিতর্ক,সেটা রাজনৈতিক।সংবেদনশীল ভাষা প্রেমিক ভালোবেসে,সাম্মানিক যে সব শব্দ ব্যবহার করেন,সেটাই সুস্থ,স্বাভাবিক।গেল,গেল করে লাভ নেই।সময় বদলাবে,শব্দের পুরোনো অর্থ বদলে যাবে।
প্রশ্নটা অন্যত্র।কোনও শব্দ কে কীভাবে গ্রহণ করছেন,তার ওপরে তার ভালো মন্দ,সৌজন্য,অসৌজনের প্রশ্ন উঠছে।সমাজ,রাজনীতি সব ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য।
উনি এল আই সি র এজেন্ট।আর উনি এল আই সি র দালাল…প্রথমটিতে আপত্তি নেই।পরেরটি এমনভাবে প্রয়োগ হয়ে চলেছে,সেটা সম্মানজনক নয়।কাউকে কারুর দালাল বললে তার সন্মান বাড়ে না।অথছ প্রতিনিধি বললেই যাবতীয় অসৌজন্য দুর হয়ে যায়।
এটা একটা আলংকারিক নির্বাচন।চক্ষু বিশেষজ্ঞ,আর চোখের ডাক্তার এক নয়।প্রথমটি বেশি সাম্মানিক।আর আই স্পেশালিস্ট বললে তো আরও সম্মানজনক হয়।গরুর রচনা লিখতে হয়।অসুবিধা নেই।কাউকে গরু বলা যাবে না।বাজার থেকে
সেরা মাল কিনে আনা যাবে।কাউকে মাল বললে অপমান করা হবে।দুপেয়ে মানুষকে দ্বিপদ বিশিষ্ট বললে তাকে মর্যাদা দেওয়া হয়।গলা আর পা নিরপরাধ।যদি কারুর গলায় পা দেবার হুমকি দেওয়া হয়,তো সেটা ভালো কথা নয়।বউয়ের ভাই শালা।কাউকে তাবলে শালা বলা যায় না।একটা বাবু লাগাতে হয়।বক্তা,শ্রোতা আর পরিপ্রেক্ষিত অনুযায়ী শব্দের প্রায়োগিক তাৎপর্য অনেকটা নির্ভর করে।লেখা আর বলা,দুটি ক্ষেত্রেই এর গুরুত্ত অনেক।আজ এই পর্যন্ত।
চলবে