কবিতায় তাপস কুমার পাল

রঙ দিস না লো সই
রঙ দিস না লো সই ,রঙ দিস না ।
আমার সব রঙ কেড়ে নিয়ে
ও চলে গেছে এই রঙ খেলার দিনে ***
ও এমন রঙ খেলেছিল
তাতে ওর সর্বাঙ্গ হয়েছিল লাল,
আমার সিঁথির লালও কেড়ে
আমার জন্য রেখে গিয়েছিল রং-হীন বিবর্ণ সাদা থান ।
তার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল
এমনই এক দোল পূর্ণিমার দিনে ,
আমি আমার নব-যৌবনের ডালি সাজিয়ে ছিলাম একরাশ পলাশ আর কৃষ্ণচূড়ায় ।
ও আমার বসন-বদন রাঙিয়ে ছিল লাল আবীরে,
সে রঙ লেগেছিল আমার মনের মনিকোঠায় ।
তারপর পরিচয় ,ভালোলাগা-ভালোবাসা
মন দেওয়া-নেওয়া ,
দুজনে দেখা করেছি বিজনে-বিহনে ।
ও ছিল শিল্পী ,
সুন্দর ছবি আঁকতো ,
পাথর কেটে বানাতো অবয়ব ।
ওর সুন্দর একটা মন ছিল ,
রোজকার ছিল না তেমন ।
আমি ভালবেসেছিলাম ওর সুন্দর মনটাকে ***
বাড়ির অমতে বিয়ে করেছিলাম —
দোল পূর্ণিমারই দিনে ,
রাধামাধব কে সাক্ষী রেখে ।
তারপর প্রেমের সঙ্গীতে জীবনটা হয়ে উঠল মধুময় আমাদের সংসারে অভাব ছিল,
কিন্তু ভালোবাসা সে অভাব পূর্ণ করে দিয়েছিল , বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ও আমার কোলে দিয়েছিল ভালোবাসার ফসল ।
অভাবের অক্টোপাশ চারিদিক থেকে ঘিরে ফেলেছিল ,
ও রাজনীতিতে যোগ দিলো ।
একটা বিজয় মিছিলের আগে আগে
লাল আবীর ছড়াতে ছড়াতে
ও ই হাঁটছিল সবার আগে ।
সেদিনও ছিল দোল –
ঠিক কি হয়েছিল জানিনা ,
খবর পেয়ে যখন গেলাম দেখলাম
রক্তে-আবীরের রঙ মেখে ও যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে ।
তারপর আমার সব রঙ কেড়ে নিয়ে
আমায় নিঃস্ব করে ও চলে গেল দূরে -বহুদূরে !
তাই লাল আবীর দেখলে আমার ভয় হয় ,
পলাশ-কৃষ্ণচূড়ায় রঙ লাগলে —
মনে হয় বসন্ত বুঝি কেড়ে নিতে এলো
কারো তরতাজা প্রাণ ।