• Uncategorized
  • 0

|| অণুগল্প ১-বৈশাখে || বিশেষ সংখ্যায় তুষার গুহ

ভালবাসা কারে কয়

সময়টা ১৯৮৫ সাল। ডিসেম্বর মাস।শীতকাল।
গল্পের নায়ক সুজিত আজ অফিস যায় নি। সে আজ মনে মনে ঠিক করেছে মনিষাকে নিয়ে সিনেমা দেখতে যাবে। ভাল একটা পিকচার লাগিয়েছে ঊর্বশী হলে,নায়ক সৌমিত্র,আর নায়িকা মাধবী। মনির মা বাবা তাদের কাজে বের হবে বলে তৈরি হচ্ছে। ওনারা বের হলেই সুজিত আজ মনিকে সোজাসুজি বলবে, মনি আজ আমার অফিস নেই, ছুটি নিয়েছি। তুমি কি আমার সাথে সিনেমা দেখতে যাবে? যদি মনি সিনেমা দেখতে যেতে রাজী হয়, তাহলে ফেরার পথে সুজিত আজ বুকে জোর নিয়ে মনিষাকে স্পষ্ট বলবে, আমি তোমাকে ভালোবাসি মনি। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই। আমি এতটুকু তোমাকে বলতে পারি- আমি তোমাকে কখনও দুঃখ কষ্ট পেতে দেবো না।
সুজিত ওর ঘর থেকে ছাদে উঠে এলো।
ছাদে মনি ভেজা কাপড় শুকাতে দিচ্ছে। সে এই মাত্র স্নান করেছে। চুল দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে পিঠে। ভিজে থাকা পিঠে জল বিন্দু গুলো মুক্তোর মতো লাগছে। কি অপূর্ব না লাগছে মনিকে। কি সুন্দর, শান্ত, স্নিগ্ধ । মনির মুখটা বড় পবিত্র। সহজ সরল। মুখ দেখেই বোঝা যায়- পার্থিব কোনো পাপ আজ পর্যন্ত তাকে স্পর্শ করতে পারে নি। সুজিত কোনো ভনিতা না করেই বলল, মনি আজ আমার সাথে সিনেমা দেখতে যাবে? আমি জানি, তুমি সিনেমা দেখতে পছন্দ করো,তাই অগ্রিম দুটো টিকিট কেটে রেখেছি। চলো না যাই,,,প্লীজ।
মনি খুব সহজ সরল মেয়ে।বয়স সবে আঠারো বছর। দুনিয়ার জটিলতা সম্পর্কে তাঁর কোনো ধারনা নেই। সে বাবা মায়ের একমাত্র,বড় আদরের মেয়ে। আর সুজিত হচ্ছে তাদের ভাড়াটিয়া। অবশ্য মনির বাবা মা দুজনই সুজিতকে খুব পছন্দ করে। প্রায়ই সুজিতকে ডেকে তাদের সাথে খেতে বলেন। সুজিতও খুব মার্জিত,শিক্ষিত,ভদ্র ছেলে। মোটামুটি ভদ্রগোছের একটা চাকরী প্রাইভেট কোম্পানিতে করছে। সুজিত দুরু দুরু মনে জিজ্ঞেস করল, মনি কিছু বলছো না যে? যাবে না? মনি বলল, হ্যা যাবো। আপনি অপেক্ষা করুন আমি রেডি হয়ে আসছি। এত সহজেই মনি রাজী হয়ে গেলো! খুশিতে সুজিতের নাচতে ইচ্ছা করছে।ওর স্বপ্ন আজ সফল হতে চলেছে।
মনিষার রেডি হতে অনেক সময় লাগলো। সে অনেক সুন্দর করে সেজেছে। অবশ্য অত সাজার কোন দরকার ছিল না। ও এমনিতেই খুব সুন্দর। মনি একটা তুত রঙের জর্জেটের শাড়ি পড়েছে। ডান হাতে একটা হাত ঘড়ি। কপালে একটা ছোট্ট টিপ,চোখে হালকা কাজল। অপূর্ব লাগছে মনিকে। সুজিতের ইচ্ছা করছে টানা মনির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে। সুজিত মনে মনে ভাবছে- একটা মানুষ এত সুন্দর হয় কি করে? সাক্ষাৎ একটা পরী। এই মেয়েকে সারা জীবনের জন্য পেলে জীবন ধন্য হয়ে যাবে তাঁর।
তারা বের হলো,সুজিতের হিরো হুন্ডা নিয়ে।রাস্তায় কোনো জ্যাম নেই। আজকের দিনটাই খুব সুন্দর। চারিদিকে রোদ চকচক করছে। অথচ রোদের তেমন কোনো তাপ নেই। বরং মিষ্টি বাতাস বইছে। বাইকে উঠে মনিষা একটা হাত সুজিতের কাঁধে রেখেছে খুবই সহজ ভাবে। কোনো জড়োতা নেই। যেন এটা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। বিধান মার্কেটের কাছে আসতেই হঠাৎই একটা অটো রিক্সা গলীর ভেতর থেকে খুব জোরে বেড়িয়ে এসে ওদের ধাক্কা দিল। তারপর আর সুজিতের কিছু মনে নেই।
তিনদিন পর সুজিতের জ্ঞান ফিরলে ও প্রথমেই মনিষার খোঁজ করল।কিন্তু ওকে কেউ কিছু বললো না।আরও দুদিন পর অনেকটাই সামলে উঠল কিন্তু তাকে অন্তত তিন মাস বিছানায় থাকতে হবে,ডান পাটা খুব বাজে ভাবে জখম হয়েছে,প্রায় পুরো পাটাই প্লাসটার করা আছে।
আজ সুজিতের ছুটি হবে,দেখতে দেখতে পনের দিন পার হয়ে গেল।সুজিতের আর তর সইছে না,কখন বাড়ি যাবে আর কখন মনিষার সাথে দেখা হবে।
তারপর ছত্রিশ বছর পার হয়ে গিয়েছে।আজ মনিষার ছত্রিশতম মৃত্যু বার্ষিকী।সুজিত আজও মনিষার স্মৃতি আঁকরে বেচে আছে।মনিষার মা বাবাকে ছেড়ে চলে যেতে পারেনি,বৃদ্ধ-বৃদ্ধার কাছে সুজিত আজ একমাত্র অবলম্বন।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।