গল্পের জোনাকিতে তনুশ্রী দেবনাথ…

গল্প হলেও সত্যি…

মনটা একদম তেতো হয়ে আছে মৌমির , এরকম একটা ঘটনা যে মানুষটা ঘটাতে পারে তা চিন্তার বাইরে ছিল। বইমেলায় প্রতি বছর নানান অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয় , তবে এবারেরটা একদম অন্যরকম। মিশুকে সহজ সরল স্বভাবের জন্য অনেকেই খুব ভালবাসে , স্নেহ করে মৌমি কে।মৌমি ও খুব আন্তরিকতার সাথে মেলামেশা করে, কখনো খারাপ কিছু হতে পারে ভাবেইনি।
একদিন দুদিন নয় , প্রায় বছর দশেকের পরিচিত তমাল দা , বরাবর ওনার স্নেহের পরশ পেয়েছে মৌমি , দেখা হলেই চা খাওয়া, গল্প গুজব , ফটো শ্যুট , নানা সময়ে ফোনালাপ ও হতো । কথায় কথায় বলতেন ,’তোমাকে আমি খুব ভালবাসি মৌমি ‘। যেহেতু বড় দাদার চোখে দেখেছে তাই ভালবাসি শব্দটার মধ্যে কোনো কদর্যতা খুঁজে পায়নি। বরং উল্টে বলেছে ‘জানি তো দাদা আপনি আমাকে খুব ভালবাসেন ‘। মাঝে মাঝেই আবদার আসতো ‘আমার সাথে একটা ছবি তোলো তো , সুন্দরী মহিলার পাশে ছবি তুলতে বেশ লাগে। না, কখনো খারাপ লাগেনি , খারাপ কিছু মনেও হয় নি মৌমির ।লেখার ব্যাপারে বরাবর খুব উৎসাহ দিয়েছেন ,মৌমির বই বেরোলে নিজে তো নিয়েছেন , অন্যান্য পরিচিত জন দের বলেছেন, ‘মৌমির বইটা নিন ,ওর লেখা পড়ুন , বেশ ভালো লেখে মেয়েটি।’ মৌমি মনে মনে খুশিই হয়েছে। যারা একটু আধটু লেখা লিখি করে তারা অন্যের মুখে লেখার প্রশংসা শুনলে খুশিই হয়।
সেই সম্মানীয় মানুষ টির এমন অধঃপতন কিছুতেই মেনে নিতে পারেনা মৌমি। চা খেতে যাচ্ছিল অমিত দার সঙ্গে,মাঝ রাস্তায় জুড়ে গেল তমাল দা। তমাল দার গা ঘেঁষে হাঁটা টা ঠিক যেন ভালো লাগছিল না মৌমির , হঠাৎ তমাল দা বলে ওঠে ,’তুমি কিন্তু বেশ রোগা হয়েছ, আগের থেকে অনেক বেশি সুন্দরী হয়ে উঠেছ , বলছিনা আগে খারাপ ছিলে,আগেও সুন্দরী ছিলে , তবে এখন যেন আরো সুন্দরী লাগছো ‘। কথা গুলো বলতে বলতে হঠাৎই মৌমির হাতটা শক্ত করে ধরে মানুষ টা , মৌমি ঠিক এ অবস্থার জন্য প্রস্তুত ছিল না, সরাসরি তাকায় ওনার চোখের দিকে ,এ দৃষ্টি তো আগে দেখেনি, লোভাতুর দৃষ্টিতে চেয়ে আছে মানুষটা মৌমির দিকে। চারপাশে লোক থিকথিক করছে, অবস্থা টা বুঝে উঠতে মাত্র কয়েক সেকেন্ড, ঝাড়ি দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নেয় মৌমি। বলে ওঠে,’কি হলো, হাত ধরছেন কেন? হাত ছাড়ুন ‘। সমস্ত পৃথিবী যেন দুলে ওঠে মৌমির, এই মানুষ টাকে সে এত সম্মান করেছে ! দাদার জায়গায় বসিয়েছে!কি বোকা ও! মেজাজ টাই বিগড়ে ওঠে। লোকটার দিকে তাকাতেও ঘেন্না করছে। মানুষ এতো নীচে কি করে নামতে পারে! নাহ্ একে আর প্রশ্রয় দেওয়া যাবে না। খুব ভালো করে বুঝিয়ে দিতে হবে যা করেছে তা খুবই অন্যায় করেছে ,ক্ষমার অযোগ্য।
মনে মনে ঠিক করে নেয় মৌমি,যে মুখোশের আড়ালে মানুষ টা থাকে সেই মুখোশ টেনে ছিঁড়ে দিতে হবে। এটা কিছুতেই চাপা দেওয়া যাবে না। খুব কাছের কয়েকজন কে ঘটনাটা জানায়, তারা যা বলে তাতে আরো চমকে যায় মৌমি। অনেকেই বলে লোকটা ওরকমই নোংরা, শুধু তুই বুঝতে পারিসনি। অনেকের সঙ্গেই নোংরামী টা করেছে। মৌমি ভেবে পায়না কাকে বিশ্বাস করবে! এই পৃথিবীতে কি কাউকে বিশ্বাস করা যায় না!

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *