T3 || স্বাধীনতায় খোঁজে || বিশেষ সংখ্যায় তুলিকা বন্দ্যোপাধ্যায়

জন্মকথা

“সোনা আমার ” —আদর শুনে পেছন ফিরি।বছর তেরোর কিশোরীর কোলে নবজাতক।পিটপিট চোখে বুঝি দুনিয়া দেখছে।মায়ের রোগা হাতে প্লাস্টিকের শাঁখাপলা।মায়ে পোয়ে সংসার পেতেছে স্টেশনের মোটা থামের গা ঘেঁষে। সদ্য মায়ের চোখেমুখে আহ্লাদ। “এ এ দুলালী, সে কানুদা ডাকতেছে তরে।দে,ব্যাটারে আমি ধরি, তুই শুনি আয় গা…” কমবয়সী একজন বউ এসে বললো। দুলালী।না ও কোনও আলালের ঘরের দুলালী নয়।স্টেশন চত্ত্বরের কারোর কামনার ফসল। অনাকাঙ্ক্ষিত, অনাদৃত।
এ পথে আমার যাওয়া আসা প্রতিদিন। এমন দৃশ্য প্রায়ই দেখি।সেদিন দেখলাম, সেই মেয়ে তার ছেলে কোলে। সরু আঙুল দিয়ে ছেলের চোখে, ভুরুতে,কপালে কাজল দিচ্ছে। ছোট্ট কৌটোতে রাখা পাউডার দিলো।কি মুগ্ধ হয়ে চেয়ে রয়েছে সন্তানের দিকে সেই মা!!মুখে আদরের বুলি।
কেটে গিয়েছে কয়েক মাস।নজরে এলো সেই মা।সেই সন্তান টলমলিয়ে হাঁটছে আর কি কান্না!” মর মর,মরিস না কেন? খা, আমারে খা….”মায়ের আদরের বুলি এখন অভিশাপ।জন্মে যাওয়া সন্তান এখন তার যন্ত্রণা। নিজের পেটে খিদে,সন্তানেরও। এর মধ্যে পেট ভরেছে আরও এক সন্তানে।জন্ম নেবে সে ও।এই তো শুরুর শুরু।জীবন পথে ঐ কিশোরী নিঃশ্চিত জন্ম দেবে আরও অনাকাঙ্ক্ষিত সন্তানের। সেই শিশুরা খিদের জ্বালায় কাঁদবে।খিদে মেটাতে অপরাধ করবে।নষ্ট করবে নিজেদের।এমন ভাবেই কতো “মা”য়ের কতো আদর অন্ধকারে তলিয়ে যায়। তবুও থেমে থাকে না জন্ম।অনভিপ্রেত জন্ম।।।

সমাপ্ত

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।