সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব – ২৬)

কেমিক্যাল বিভ্রাট

কেউ কেউ সন্দেহ প্রকাশ করলেন, এখানে হয়তো এমন কোনও বিচিত্র গাছ জন্মাতে শুরু করেছে, যে গাছগুলো সমস্ত রোগভোগ শুষে নিয়ে গোটা রাজ্যটাকেই রোগহীন জোন করে দিয়েছে। সে কথা শুনে কেউ কেউ আবার বললেন, তাই যদি হয়, তা হলে সেই গাছটাকে চিহ্নিত করতে হবে। অন্যান্য দেশে নিয়ে গিয়ে দেখতে হবে, ওই সব দেশের জল, বায়ু, মাটি আর আবহাওয়াতেও ওই গাছ টিকে থাকতে পারে কি না এবং এই একই রকম ভাবে কাজ করে কি না। যদি করে তা হলে আর চিন্তা নেই। একেবারে কেল্লা ফতে। এই গাছের পেটেন্ট পেয়ে যাবে এই দেশ। আর সেই সুবাদে এই রাজ্য তথা দেশ মাত্র এক বছরে যে অর্থ উপার্জন করবে, আমার ধারণা, সারা জীবন পেট্রল বিক্রি করে গোটা আরব দুনিয়াও তা আয় করতে পারবে না।

কেউ কেউ আরও এক ধাপ এগিয়ে এসে বললেন, বড় বড় হাইরাইজ বিল্ডিং তোলার জন্য এ রাজ্যে যে ভাবে খোঁড়াখুঁড়ি হচ্ছে, বলা যায় না, হয়তো এমন কোনও জায়গায় ঘা পড়েছে, সেখান থেকে হুহু করে বেরিয়ে এসেছে এত দিন বদ্ধ হয়ে থাকা এমন এক অজানা গ্যাস, যার সন্ধান আমরা এখনও পাইনি। গন্ধ এবং রংহীন দেখে, যাঁরা খোঁড়াখুঁড়ি করছিলেন, তাঁরাও টের পাননি। সেই গ্যাসের সঙ্গে বাতাসের বিক্রিয়া ঘটার ফলেই হয়তো এমন এক ‘অ্যান্টি অল ডিজিজ’ গ্যাসের সৃষ্টি হয়েছে, যার দরুন এখানকার সমস্ত রোগ এবং রোগের যাবতীয় উৎস একেবারে গোড়া থেকে নির্মূল হয়ে গেছে। কিন্তু হাজার চেষ্টা করেও সে রকম কোনও সূত্র তাঁরা খুঁজে পেলেন না।

সারা রাজ্য থেকে রোগ উধাও হয়ে গেছে। এ নিয়ে সাধারণ মানুষ খুশি হলেও চিন্তিত বিদগ্ধজনেরা। আগুনে পুড়ে যাওয়া রোগী যখন ভাল হতে শুরু করে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিপর্যয় কিন্তু তখনই ঘটে। সে রকমই, এটা আবার খুব খারাপ কিছু ঘটার প্রাক্ মুহূর্তে ভাল কিছু করে লোককে খুশি করা নয় তো!

চিন্তিত অনেকেই। চিন্তিত ঔপমানবও। কিন্তু হাতেনাতে তেমন কোনও প্রমাণ না পেলে তিনি কিছু বলেন কী করে! তাই মুখই খুললেন না তিনি। যে যা বললেন, চুপচাপ শুধু শুনে গেলেন। তার পর ল্যাবরেটরিতে গিয়ে ঢুকলেন। কিন্তু না, এক মুহূর্তও সেখানে থাকলেন না। সঙ্গে সঙ্গে ঝট করে বেরিয়ে এলেন। তার পর রুদ্ধশ্বাসে বড় ব়ড়় পা ফেলে সোজা ভেতর ঘরে চলে গেলেন।

জবালা তখন সবেমাত্র স্কুল থেকে ফিরেছেন। কাঁধের ব্যাগটা পর্যন্ত নামাননি। তবু হন্তদন্ত হয়ে ঔপমানব তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, আমার ল্যাবরেটরিতে লাস্ট  কে ঢুকেছিল?

জবালা বললেন, কই, কেউ আসেনি তো।

— আসেনি বললে হবে?

— সত্যিই কেউ আসেনি।

— না এলে সামনের টেবিলে থাকা গোলাপি রঙের কেমিক্যাল ভরা জারের মধ্যে ও পাশের তাকের টেস্টটিউবে রাখা সবুজ রঙের কেমিক্যালটা মেশালো কে?

— কই, কাউকে তো ল্যাবরেটরিতে ঢুকতে দেখিনি।

গলা চড়ালেন ঔপমানব, দেখোনি! একটা লোক ল্যাবরেটরিতে ঢুকে একটা কেমিক্যালের সঙ্গে আর একটা কেমিক্যাল মিশিয়ে চলে গেল, আর তুমি বলছ কিনা দেখোনি? কী করো কি সারা দিন?

— আমি তো স্কুলে গিয়েছিলাম।

— অ।

ঔপমানব একটু দমে গেছে দেখে জবালা প্রশ্ন করলেন, তুমি কোথায় ছিলে?

— শরীরটা ভাল লাগছিল না বলে আমি দুপুরবেলায় এ ঘরে এসে একটু চেয়ারে বসে ঝিমোচ্ছিলাম। কখন যে চোখ দুটো লেগে এসেছিল…

— ও। অভিমন্যু ছিল না?

— ছিল তো…

জবালা জিজ্ঞেস করলেন, ও কাউকে দেখেনি?

— কী জানি…

— তুমি তো শোনো না, তোমাকে কত দিন বলেছি, তুমি যখন ল্যাবরেটরি থেকে বেরিয়ে আসবে, দরজাটা ভাল করে আটকে আসবে। আমার কোনও কথা শোনো?

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।