সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব – ৩৩)

কেমিক্যাল বিভ্রাট
দশ
রোল কল করতে গিয়ে জবালা অবাক হয়ে গেলেন। এ কী!
টিচার্স রুম থেকে নাম ডাকার খাতা নেওয়ার সময় অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকার মতো তিনিও অবাক হয়েছিলেন। তাঁর জীবনে আজ পর্যন্ত যা হয়নি, তাই হয়েছে। সাধারণত সেশন শুরু হওয়ার সময় নামডাকার যে খাতাটা তৈরি হয়, কোনও কারণবশত ছিঁড়ে ফালা-ফালা হয়ে না-গেলে, সেটাই বছরভর চলে। কিন্তু গত কাল অবধি যে খাতাটা নিয়ে তিনি রোল কল করেছেন, এক-একটা সংখ্যা শুনে ক্লাসের ছেলেমেয়েরা ‘উপস্থিত’, ‘ইয়েস ম্যাডাম’, কিংবা ‘প্রেজেন্ট প্লিস’ বলে নিজেদের হাজিরা জানান দিয়েছে, সেই খাতাটা নিতে গিয়ে দেখেন, শুধু ওটাই নয়, খাতা রাখার জায়গায় সব ক’টাই একেবারে ঝকঝকে নতুন খাতা।
তখনই শুনেছিলেন, কাল স্কুল ছুটি হয়ে যাওয়ার পরে শিক্ষা দফতর থেকে নাকি একটি জরুরি নির্দেশ এসেছিল। এবং সেই নির্দেশ অনুসারেই, কেবল তাঁদের স্কুলেই নয়, গোটা রাজ্যের সমস্ত স্কুলে অফিস-ক্লার্কদের চমকে দেওয়া ওভারটাইম দিয়ে এক রাতের মধ্যেই তৈরি করানো হয়েছে এই খাতা।
জবালা ভেবেছিলেন, রাজনৈতিক নেতা-মন্ত্রীরা যে ভাবে নতুন নতুন কর্মসূচি নিয়ে কাট মানি পাওয়ার জন্য কাউকে কাউকে সেই কর্মসূচির সরকারি বরাত পাইয়ে দেন, এটা হয়তো সে রকমই কোনও উদ্যোগ। না হলে, যখন বলা হচ্ছে সরকারি কোষাগার প্রায় শূন্য, মাসের পর মাস বন্ধ হয়ে পড়ে থাকা চা-শ্রমিকেরা অনাহারে-অবহেলায় সকালে-সন্ধ্যায় মারা যাচ্ছে, সেই মৃত্যু-মিছিল দেখেও টাকার অভাবে সরকার যখন তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে পারছে না, তখন ভাল অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও কেন পুরনো রেলিং উপড়ে ফেলে নকশা-করা নতুন রেলিং দিয়ে পার্কগুলিকে ঘেরা হচ্ছে! টাকার জোগান নেই বলে যখন সরকারি হাসপাতালে মিলছে না সামান্য তুলো, ব্যান্ডেজ, ইনজেকশনের সিরিঞ্জ, তখন সৌন্দর্যায়নের নামে কেন কোটি কোটি টাকা খরচ করে নদীর পাড় সাজানো হচ্ছে! ক্লাবঘরে বসে সন্ধ্যার সময় যে ক্লাবের ছেলেরা শুধু গুলতানি মারে আর তাস খেলে, হাতে রাখার জন্য খেলাধুলো করার নামে প্রতি বছর তাদের পকেটে কেন ভরে দেওয়া হচ্ছে দু’লাখ-চার লাখ করে টাকা! এবং সেই তালিকায় বছর বছর কেন যোগ করা হচ্ছে রাজনৈতিক দাদা-দিদিদের মদতে নিত্য-নতুন গজিয়ে ওঠা একের পর এক ক্লাব!