সাপ্তাহিক ধারাসম্পাতে সিদ্ধার্থ সিংহ (পর্ব – ৫)

কেমিক্যাল বিভ্রাট

তাই তাঁকে ওঁদের স্কুলের সমস্যাটা জানিয়ে তার সমাধানের একটা ব্যবস্থা করতে বলেছিলেন তিনি। উনি জানতেন, মন্ত্রী যদি একটা ফোন করে দেন কিংবা দু’ছত্র চিঠি লিখে দেন, তা হলেই কেল্লা ফতে।

মন্ত্রী কোনও অজুহাত দেখাননি। নানা রঙের দামি দামি কলম ভর্তি সামনের কলমদানি থেকে একটা কলম তুলে নিজের প্যাডেই খসখস করে লিখে দিয়েছিলেন চিঠি। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি, সেই চিঠি দিয়ে কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

জবালা পরে জেনেছিলেন, ওই মন্ত্রীর নাকি সর্বত্র ইনস্ট্রাকশন দেওয়া আছে, আমি যাকেই যা লিখে দিই না কেন, সবুজ কালি ছাড়া অন্য কোনও কালিতে লেখা চিঠিকে কেউ যেন কোনও গুরুত্ব না দেয়।

উনি জবালাকে কালো কালিতে চিঠি লিখে দিয়েছিলেন।

কথায় কথায় সে কথা একদিন পয়মন্তকেও উনি বলেছিলেন। তাই পয়মন্ত কোনও ফোন করছে না বলে তাঁর মনে হয়েছিল পয়মন্ত বোধহয় তাঁকেও ওই ধরনের লোক ভেবেছে। ভেবেছে, ওর সামনে সেক্রেটারিকে ফোন করেছে ঠিকই, কিন্তু ও চলে যেতেই ফের তাঁকে ফোন করে জানিয়ে দিয়েছে, একটু আগেই যেটা বললাম, সেটা করার কোনও দরকার নেই। আসলে যে বাচ্চাটির কথা বললাম, তার মা আমার পরিচিত। এমন ভাবে ধরেছে, মুখের উপরে ‘না’ করতে পারলাম না। কী করব! তাই ওর হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যই… ও সামনে ছিল বলে ওর সামনেই আপনাকে ফোন করতে বাধ্য হয়েছিলাম। কিছু মনে করবেন না।, কেমন?
হ্যাঁ। ও এটা ভাবতেই পারে। জবালা আরও জানেন, এই রকম ছোটখাটো অনেক ঘটনা অনেক সময়ই অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে। দু’জনের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়। ফলে যত তাড়াতাড়ি এ সব মিটিয়ে নেওয়া যায়, ততই ভাল। তাই অটো থেকে নেমেই জবালা যখন পয়মন্তকে দেখতে পেলেন, নিজে থেকেই বললেন, কী রে, তুই এখানে? কী ব্যাপার?

পয়মন্ত বলল, তোর সঙ্গে দেখা হয়েছে খুব ভাল হয়েছে। তোকেই ফোন করতে যাচ্ছিলাম। ও ভর্তি হয়ে গেছে।

— কে?

— কে আবার? আমার ছেলে।

— কোথায়?

— কোথায় মানে? তোর মনে নেই? তুই-ই তো ফোন করে দিয়েছিলি ওদের স্কুলের সেক্রেটারিকে…

— ও… ওখানে ভর্তি হয়ে গেছে?

— এই তো ওদের স্কুলের ভর্তি ফি আর এক বছরের মাইনে ইউকো ব্যাঙ্কে জমা দিয়ে এলাম।

— একসঙ্গে? সে কী রে, সে তো প্রচুর টাকার ব্যাপার… ওদের স্কুলের মাইনে তো…

— না না। ওহোঃ, তোকে তো বলাই হয়নি। জানিস, এ বছর থেকে ওরা খুব ভাল একটা পদক্ষেপ নিয়েছে। যাঁদের বাৎসরিক আয় ছ’লক্ষ টাকার নীচে, তাঁদের ছেলেমেয়েদের কোনও মাইনে দিতে হবে না। আর স্কুলের ভর্তি ফিও সৎসামান্য।

— যৎসামান্য!

— হ্যাঁ। সামান্যই তো। ওখানে ভর্তি হতে গেলে যেখানে অন্যদের আশি-নব্বই হাজার টাকা লাগে, সেখানে আমাদের লাগল মাত্র একশো এক টাকা। আর মান্থলি ফি? বারো টাকা করে…

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।