T3 || আমার উমা || বিশেষ সংখ্যায় শিবাজী সান্যাল

সময়ের ব্যবধান

এই প্রথম মুম্বাইতে ছেলের বাড়িতে এসেছে কাকলি আর অজয় । রাজা অনেকদিন থেকেই বলছিল , তবে নানা কারণে আসা হয়নি । আসলে রাজার ওপর কিছুটা রাগই হয়েছিল যখন ও নিজে থেকে রিটাকে বিয়ে করে খবর দিয়েছিল। ব্রাহ্মণ ঘরে যতই বল একটি মাহিষ্য মেয়ে মেনে নিতে সময় লেগেছিল। তারপর দুজনেই চাকরি করে । সারাদিন ওদের একা থাকতে হবে , কি করে সময় কাটাবে ? যাই হোক , এখানে আসার পর এদের নতুন যুগের চাল চলন দেখে কাকলি সত্যিই ভীষণ অস্বস্তি বোধ করতে লাগল। আর রিটাকে যাই বলে , চুপচাপ শোনে কিন্তু পালন করে না। বাড়ির বউ , না আছে সিঁদুর , শাঁখা , কোনো ঠাকুর , আর পোশাক পরিচ্ছদ তাকিয়ে দেখা যায় না। অফিস যাচ্ছে , জামা কাঁধে ঝুলছে আর ব্রার ফিতে বেরিয়ে আছে । অজয় অবশ্য বারবার বলে , “ দেখ , ওদের জীবন , ওদের মত চলতে দাও। আমরা কদিনের অতিথি , কি দরকার ওদের বিষয়ে কথা বলে অশান্তি করার ? ”
রিটা রাতে রাজাকে বলল , “ মা মনে হয় আমাকে এখনও পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারেন নি । সবকিছুতে শুধু খুত ধরে উপদেশ দিচ্ছেন । ”
“ তুমি ভুল বুঝেছ। তোমাকে গ্রহণ না করলে মা এখানে আসত না। আর জেনারেশন গ্যাপ থাকবেই। তাই মা যা বলে তা নিজস্ব ধারনা আর বিশ্বাসের জন্য , তা নিয়ে মন খারাপ কর না। ”
কিন্তু ব্যবধান বাড়ছিল। সেদিন কাকলি রাজার জন্মদিন বলে নানারকম রান্না করে রেখেছিল , কিন্তু রিটা ফিরে বলল , “ মা আমি ওর পছন্দমত সব খাবার অর্ডার করে দিয়েছি । আপনার গুলো না হয় কাল খাওয়া যাবে। ”
একদিন রিটা অনেক রাত করে ফিরলে কাকলি বলল , “ এটা একটা বাড়ি ফেরার সময় ? কি এমন কাজ কর তুমি , যারা তোমার সংসারের কথা বা সুরক্ষার কথা পর্যন্ত ভাবে না ? ”
রিটা আজ আর না বলে পারল না। বলল , “ আমাদের কাজে প্রতিদিন ঘড়ি দেখে বাড়ি ফেরা সম্ভব নয় । আমি নিজের সুরক্ষা করতে জানি। আপনি এসব নিয়ে আমাকে দয়া করে কিছু বলবেন না । ” কাকলি রিটার এই ঔদ্ধত্যে আহত ও স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। কদিন একান্ত প্রয়োজন না হলে কথাও বলেনি।

হঠাৎ খবর এল রিটার মা খুব অসুস্থ হয়ে পরেছে । রাতের মধ্যে ওকে হাসপাতালে ভর্তি করা হল। সেখানে কাকলি আর অজয় গিয়ে পৌঁছল। কাকলি বলল , “ চিন্তা কর না , ডাক্তার তো বলেইছে তেমন চিন্তার কিছু নেই। আমি রাতে ওনার কাছে থাকব। তোমারা বাড়ি যাও। ” পরপর তিনদিন কাকলি সবসময় হাসপাতালে থেকে , উনি একটু ভাল হয়ে উঠলে , ওরা ট্যাক্সিতে করে ফিরছিল। কাকলি বলল , “ বৌমা , ট্যাক্সিকে আমাদের বাড়িতে যেতে বল। ” রিটা অবাক্ হয়ে তাকাল। কাকলি বলল , “ এইমাত্র হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়েছেন , এসময় ওনার একা থাকা ঠিক হবে না। এখন কিছুদিন আমাদের কাছে থাকলে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠবেন। ”
বাড়িতে এসে রিটার মায়ের দেখাশোনা , সময়মত ওষুধপত্র দেওয়া , পথ্য ব্যবস্থা সব কাকলি করতে লাগল। রান্নাঘরে কাকলি দুধ গরম করছিল। রিটা পেছনে এসে দাঁড়াল। ওকে দেখে কাকলি বলল , “ কিছু বলবে ? ”
ভাঙা গলায় রিটা বলল , “ মা আমি আপনাকে বুঝতে ভুল করেছি। আপনার মন অনেক বড়। আমার কোনো ব্যবহার আপনার ভাল না লেগে থাকলে আমাকে ক্ষমা করে দেবেন। ”
পরম স্নেহে ওর গালে হাত রেখে কাকলি বলল , “ না মা , তেমন কিছুই হয় নি। তুমি আমার ছেলেকে ভালবাস , ওর যথেষ্ট খেয়াল রাখ , এই আমার এক পরম শান্তি। ”

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।