ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ৯১)

সুমনা ও জাদু পালক
হূডুর তর্জন গর্জনে বিন্দুমাত্র না ঘাবড়িয়ে সুমনা আরো এগিয়ে যেতে থাকলো হূডুর দিকে।
সবুজ পাখির পালক থেকে বিচ্ছুরিত আলো হূডুর চোখে পড়তেই ও এবারে আর চিৎকার নয়, কাকুতি মিনতি করতে থাকল, আমি তোর কাছে হাত জোড় করে মিনতি করছি রত্নমালা, ঐ সবুজ পাখির পালক তুই সরিয়ে নে। ওই সবুজ রঙের পাখির পালকের থেকে বেরিয়ে আসা সবুজ আলো আমি সহ্য করতে পারি না।
—— আমি তা জানি জাদুকর। সবুজ পাখির দ্বীপের রাজা আমাকে সেটা জানিয়েছেন।
——– জানিস যদি তো আমার দিকে ওই পালক হাতে এগিয়ে আসছিস কেন? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে।
——- তুমি যখন তোমার জাদু দন্ড দিয়ে পুষ্পনগর রাজ্যকে শ্মশান করে দিয়েছিলেন বা মহারাজ রুদ্র মহিপাল আর তার রানী মায়াবতী কে বিকৃত দেহ করে দিয়েছিলে, তখন কষ্ট হয়নি তাদের?
—– রাজা রুদ্রমহিপাল আমাকে কারারুদ্ধ করেছিল আর সেই রাগেই আমি ওর রাজ্যকে শ্মশান করে দিয়েছি আর ওদের করেছি বিকৃত দেহ।
——– সবুজের দেশের রাজা, রানী ,রাজকুমারী আর সেদেশের লোকরা কি এমন অপরাধ করেছিল যে তাদের মারাত্মক ক্ষতি করলে তুমি? কেন তুমি রাজকুমারী চন্দ্রকান্তা কে কুৎসিত মণ্ডুকী বানিয়েছিলে?—- ও তোমাকে বিয়ে করতে চায়নি বলে?
——— হ্যাঁ।
—— কিন্তু কেন? চন্দ্রকান্তা কাকে বিয়ে করবে বা না করবে সেটা তার ব্যক্তিগত মতামত। তুমি ওকে কোন অধিকারে জোর করতে পারো?
হূডু নিরুত্তর।
সুমনা আবার বলে, চন্দ্রকান্তা বিয়ে করতে চায়নি বলে তুমি পুরো সবুজের দেশটাকে মরুভূমি করে দিলে? চন্দ্রকান্তার মা-বাবা এবং সমগ্র দেশের প্রজাদের গাছ বানিয়ে দিলে? কেন হূডু?—– তুমি এত নিষ্ঠুর কেন?
—— চন্দ্রকান্তা আমাকে প্রত্যাখ্যান করাতে আমি রাগে অন্ধ হয়ে গেছিলাম।
——- আর হাসিখুশি দ্বীপের কনক নগর রাজ্য—– ওদের কি অপরাধ ছিল হূডু? কেনই বা সমগ্র রাজপুরীকে ‘ঘুমন্ত রাজপুরী’-+ করে দিলে? আর রাজকুমার হীরকের বা কি অপরাধ ছিল?
——- ওখানে তো অপরাধ ছিল তোর রত্নমালা।
আমি তো রাজসভায় বসেই ছিলাম। তুই তো আমার চেহারা দেখে বিদ্রূপের হাসি হেসেছিলি।
তাইতো আমি রেগে তোকে সঙ্গে নিয়ে আসতে চাইলাম। আর তোর বাবা কনকনগর রাজ্যের রাজা তাতে সম্মত না হওয়ায় ওদের পুতুল করে দিলাম।
—— আর মিথ্যা কথা বলে তুমি পরীরানীকে কেন নিয়ে এসেছিলে?—- কেন তাকে বন্দী করে রেখেছিলে রথের ভিতরে?
——- সে এক গুপ্ত কথা।সে রহস্য আমি তোর কাছে ব্যাখ্যা করতে পারবো না। পরীরানীর মায়া দন্ডটা আমার বিশেষ প্রয়োজন ছিল।
—— মিথ্যা কথা বলছো তুমি। তোমার যদি ওই মায়াদন্ডটার এতটাই প্রয়োজন ছিল তাহলে কেন ওটাকে মহারাজা রুদ্র মহিপালের শয়ন কক্ষে
লুকিয়ে রেখেছিল?
——– বললাম না সেই গুপ্ত রহস্য আমি বলতে পারবো না।
—–বেশ, আমিও তাহলে এই সবুজ পাখির পালক সরাতে পারবো না।
কথা শেষ করে সুমনা আরো এগোতে থাকলো।
সবুজ পাখির পালক থেকে বেরোতে থাকলো সবুজ আলো ,আরো উজ্জ্বল হয়ে, আরো দুরন্ত গতিতে।
চিৎকার করে উঠলো হূডু, জ্বলে গেল, জ্বলে গেল ,আমার সমস্ত শরীর জ্বলে গেল!
সুমনা এবার হূডুর হাত থেকে জাদু দন্ডটি কেড়ে নেওয়ার ইঙ্গিত জানালো রাজা রুদ্র মহিপাল কে।
মুহূর্তের মধ্যে রাজা রুদ্রমহিপাল সর্বশক্তি প্রয়োগ করে এক টানে হূডুর হাত থেকে তার জাদুদণ্ড ছিনিয়ে এলো।
হূডু পড়ে গেল ভূমিতে।
চলবে