• Uncategorized
  • 0

|| অণুগল্প ১-বৈশাখে || বিশেষ সংখ্যায় সুকন্যা সাহা

সিগারেট

ফি হপ্তায় শনিবার সন্ধ্যে বেলায় শোভনদের বৈঠক খানা ঘরটা জমজমাট হয়ে ওঠে তাদের ব্যান্ডের রিহার্সালের কল্যানে । এ পাড়ায় শোভনদের বাড়িটাই একমাত্র টিঁকে থাকা সবচেয়ে বড় আর পুরোনো বাড়ি … বেশির ভাগ বাড়িই বাঁচতে পারেনি প্রোমটারের থাবা থেকে , কৌলিন্য হারিয়ে এখন
ছোট ছোট পায়রার খোপ ;দিশা কি বোর্ড বাজায় এই ব্যান্ডে … শোভন গীটার, পলাশ ড্রাম , জ্যাজ … মোট ছজন তারা , ছয় মূর্তি … এরকমই এক শনিবার বিকেলে তন্ময়কে রিহার্সালে নিয়ে আসে শোভন … বলে ” মিট তন্ময় , আমাদের লিড সিংগার , একটা হলুদ রঙের পাঞ্জাবি পড়ে
এসেছিল তন্ময় ,লম্বা ঝুলের , একমাথা ঝাঁকড়া চুল,সেটা আবার পনিটেল করা ,মুখে দাড়ি গোঁফের জঙ্গল , চেহারার মধ্যে অসাধারণত্ব কিছু ছিল না … কিন্তু মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে যখন তন্ময় ধরেছিল, “হয়তো তোমারই জন্য / হয়েছি প্রেমে যে বন্য…” তার গমগমে গলার অসাধারণ টোনাল কোয়ালিটিতে মুগ্ধ হয়েছিল সব্বাই … আর দিশা তো একেবারে ফিদা … যাকে বলে ক্লিন বোল্ড ।

রিহার্সাল শেষে প্রতি শনিবারই একপ্রস্থ আড্ডা জমে শোভনদের বাড়িতে … চা জল খাবারের সৌজন্যে শোভনের মা ; এ ব্যাপারে কাকিমা একেবারে মাই ডিয়ার । দলের সবাই তারা চাকরি বাকরি করে কোনো না কোনো প্রফেশানের সঙ্গে যুক্ত । সারা সপ্তাহ প্রচন্ড পরিশ্রম যায় । সপ্তাহান্তে একটু রিল্যাক্স । একজোট হওয়া মিউজিককে ভালোবেসে ।

আড্ডায় অল্পদিনের মধ্যেই তন্ময় মধ্যমণি হয়ে ওঠে । শোভন তাদের লিরিসিস্ট । কি রকম গান লেখা উচিত ব্যান্ডের জন্য … মর্ডান গানের ট্রেন্ড এই নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই জোর আলোচনা চলে শোভন আর তন্ময়ের মধ্যে । তন্ময়ের গমগমে ভরাট গলা আর সবে বিষয়ে অসাধারণ জ্ঞান … দিশা শুধু মুগ্ধ হয়ে শোনে … দিশার দু চোখের মুগ্ধতা তন্ময়ের দৃষ্টি এড়ায় না … কিন্তু সেই দৃষ্টি কখনই ঝড় তোলে না তন্ময়ের বুকে … তার শয়নে স্বপনে চিন্তায় জাগরণে সায়নী.. শুধুই সায়নী … কলকাতার একটা কলেজে পড়ায় তন্ময় সেখানেই আলাপ সায়নীর সঙ্গে … সায়নী ওর কলিগ … ডাকসাইটে সুন্দরী সায়নী পাত্তাই দেয় না তন্ময়কে … কলেজে ওর এক ঝাঁক স্তাবকের মধ্যে তন্ময়ও একজন … তবু তন্ময় চাতকের মতো তাকিয়ে থাকে সায়নীর দিকে যদি ছুঁড়ে দেয় একটুকরো হাসি একটু প্রশ্রয় মাখানো দৃষ্টি … তাতেই সার্থক তন্ময়ের জীবন …
চেন স্মোকার তন্ময় ; সিগারেট ধরিয়ে যায় একটার পর একটা … ধোঁয়ার রিং ছাড়ে … দিশার যে কি মিষ্টি লাগে গন্ধটা … একটা ম্যানলি স্মেলছড়িয়ে পড়ে সারা ঘর জুড়ে তন্ময় এলেই … আগে আগে শুধু শনিবারই দেখা হতো তন্ময়ের সঙ্গে … সারাটা সপ্তাহ হা পিত্যেশ করে বসে থাকত দিশা। তারপর একদিন রিহার্সাল শেষ হতে বেশ রাত হয়ে যাওয়ায় শোভনই তন্ময়কে বলে, দিশাকে বাড়ি পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ে আসতে ; তন্ময়ের বাইকের পিছনে খুব সন্তর্পনে আলগোছে বসেছিল দিশা ,তন্ময়ের ছোঁয়াচ বাঁচিয়ে …
তবু সিগারেটের একটা মিষ্টি মৃদু গন্ধ তাকে ঘিরে রইল সারাক্ষন … আসার পথে সারাটা রাস্তা একাই বক বক করছিল তন্ময় … যেমন করে; হুঁ-হাঁ র বেশি খুব একটা উত্তর করে নি দিশা ,একটা ঘোরের মধ্যে বুঁদ হয়ে ছিল সে … সারা রাত সেই ঘোরটা তার সঙ্গে সঙ্গে ছিল … সেই থেকে দিশাদের বাড়িটা চিনে যায় তন্ময় , এখন শনিবার ছাড়াও চলে আসে আড্ডা মারতে ;তবে সাবধান করে দিয়েছে দিশাকে তন্ময় , আমরা কিন্তু বন্ধু জাস্ট বন্ধু , আমি চাইনা তুই এর থেকে কিছু বেশি ভেবে মনে মনে কষ্ট পাস …
আজকাল প্রায়ই আয়নার সামনে দাঁড়ায় দিশা ; নিজেকে দেখে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে … উজ্জ্বল ফর্সা রঙ তার , তবে বেশ শর্ট হাইট আর গড়নও রোগা পাতলা … একটা মাঝারি মাপের আই টি কোম্পানিতে বেশ উচুঁ পদেই চাকরি করে সে , কি বোর্ড বাজানো তার প্যাশান .. শোভন বলে সে নাকি বেশ ভালোই বাজায় … জানে না সে , তবে তন্ময়ের সঙ্গে বাজাতে তার বেশ ভয় ভয় করে আজও … এই বুঝি পাছে নোটেশানে ভুল হয়ে যায় … সুরে না লাগে ; সায়নীর কথা কোনোদিন দিশাকে বলে নি তন্ময় … কি জানি কি ভাবে নেবে ! যা অভিমানী মেয়ে !
সেদিন কয়েকজন অফিস কলিগের সঙ্গে সিটি সেন্টার ওয়ানে গিয়েছিল দিশা , কিছু প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সারতে , হঠাত একটা পিলারের পেছন থেকে সেই চির পরিচিত গোল্ড ফ্লেকের গন্ধটা পায় …কৌতূহল বশতঃ এগিয়ে গিয়ে দেখে তন্ময় , জায়গাটা বেশ আলো আঁধারি , দিশার দিকে পিছন ফিরে ছিল বলে তন্ময় দেখতে পায় নি দিশাকে, দিশা দেখেছে ঠিক… একটা মেয়েকে চুমু খাচ্ছিল তন্ময় ; দুজনের ঠোঁট মিশে
গিয়েছিল, মেয়েটির কোমরে তন্ময়ের হাত , পরম ভাললাগায় চোখ বুজে ছিল মেয়েটি। মেয়েটির মুখের দিকে চোখ পড়তেই বিদ্যুত পৃষ্ট হয় দিশা … সায়নী না ? দিশার স্কুল জীবনের সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবী … ডাকসাইটে সুন্দরী সায়নী রায় চৌধুরী … আর একমূহূর্ত ওখানে দাঁড়ায় না দিশা … গলার কাছে একটা কষ্ট দলা পাকিয়ে উঠতে থাকে; ঝাপসা হয়ে যায় দুচোখ …একবার বুক ভরে শ্বাস নেয় পেছন ফিরে … সেই সিগারেটের গন্ধটা …
গোল্ড ফ্লেক …
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।