ধারাবাহিক ভ্রমণ সিরিজ আমেরিকার ডায়েরি || সুব্রত সরকার – ১৬

।। আমেরিকার ডায়েরি ।।

(শেষ পর্ব)

।। জর্জিয়ার সাভানা, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ।। 

  চার্লসটন থেকে আজ চলে যাব জর্জিয়ার সাভানা। লং রুটের বাসে যাব। বাসের সময় বেলা তিনটে। চার্লসটনের হোটেল লা কুইন্টায় চেক আউট এগারোটায়। হাতে সময় রইল চারঘন্টা।

হোটেল চেক আউট করে লাগেজ নিয়ে এসে বসলাম রিসেপশন লাউঞ্জে। বেশ বড় ছড়ানো জায়গাটা। এখানে বসে Ashley river কে দেখা যায়। নদী পারের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। আজ শনিবার। তাই দেখলাম আমেরিকান বহু পর্যটক আসছেন। উইকএন্ড কাটানোর আদর্শ জায়গা এই নদী বন্দরের শহর চার্লসটন। এক ঝাঁক হাসিখুশি বালিকারা এলো লা কুইন্টায়। মনে হল ওরা হয়তো কোনও কলেজ বা ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট। শনি- রবি হুল্লোড় করবে। Ashley river এর জলে নৌকো বিহার করবে। সপ্তাহান্তের দেদার মজা করার জন্যই ওদের আসা।

এখানে বসে কিছুটা সময় কাটিয়ে শেষবারের মত নদীর ধারটা একটু বেড়িয়ে এলাম। মন কেমন যেন করছিল। এত সুন্দর নির্জন  জায়গাটায় দু’দিন থাকলাম। হৃদয় মন শান্ত করা আনন্দ উপভোগ করলাম। ফিরে যাওয়ার সময় মন একটু তো বিষন্ন হবেই।

Ashley কে বিদায় জানিয়ে উবেরে গিয়ে বসলাম। বাস স্টেশন প্রায় পঁচিশ মিনিট লাগবে।

শেষবারের মত চার্লসটনকে দেখতে দেখতে চলেছি। এই শহরটা প্রথম দেখাতে মুগ্ধ করে না সেভাবে মনকে। কিন্তু একটু থাকলে, চারপাশ ঘুরে দেখলে শহরের মায়ায় জড়িয়ে যায় মন। ঐতিহাসিক শহরের এটাই বৈশিষ্ট্য।

চার্লসটন থেকে জর্জিয়ার সাভানা খুব বেশি পথ নয়। বাস জার্নি কম বেশি তিন ঘন্টা। গ্রেহাউন্ডের বাসে উঠে বসেছি। আমেরিকার এই বাস সার্ভিস ভালো। কিন্তু সহযাত্রীরা সবাই সমান নয়। কেমন একটু ভয় ভয় করে অনেককে দেখলে। হতে পারে তারা হোমলেস, ড্রাগ অ্যাডিক্ট, ডিপ্রেসড। খুব সাধারণ আমেরিকানরাই বাসে চড়ে। তাই বাসও বড় কম।

আমেরিকার জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের এক সুন্দর নদী বন্দরের প্রাচীন শহর সাভানা ( SAVANNAH )। সাভানা বললে অনেক সময় সেই বিখ্যাত গ্রাসল্যান্ডকে বোঝায়। যা বড় বড় ঘাস ও বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদের মিশ্রণে তৈরী একটা বাস্তুতন্ত্র। পর্যাপ্ত সূর্যের আলোয় যে ঘাস জন্মায় সেই গ্রাসল্যান্ডকে সাভানা বলে। এমন অনেক সুন্দর সুন্দর গ্রাসল্যান্ড দেখা যায় আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া ও দক্ষিণ আমেরিকার কিছু জায়গায়। কিন্তু আমি আজ চলেছি আমেরিকার প্রাচীন শহর জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের  সাভানায়।  “Savannah  is a charming Southern escape where art, period architecture, trendy boutique  and haunted stories are all set under a veil of Spanish moss.” এই কথাগুলো লেখা আছে সাভানার প্রচার পুস্তিকায়।

গ্রেহাউন্ডের বাস ছুটছে। রাস্তা মসৃণ। গাড়ির গতি এখানকার নিয়ম মেনেই চলছে। আমি ছাড়া বাসে খুব বেশি হলে আর চোদ্দ পনেরোজন যাত্রী। আমিই একমাত্র ভারতীয়। বাকিরা বেশির ভাগ অ্যাফ্রো- আমেরিকান। চেহারা দেখলেই বোঝা যায় এরা সবাই খুব সাধারণ আমেরিকান। দিন আনে, দিন খায় জীবনযাপন। নেশাখোর চেহারা তো কয়েকজনের একদম স্পষ্ট।

জানলার পাশে সিট নিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে দেখতে চলেছি।  আজ খুব উজ্জ্বল রোদ উঠেছে। আকাশকে আমাদের শরৎকালের আকাশের মত মনে হচ্ছে।

এই তিনঘণ্টার বাস সফরটা চমৎকার। কত যে সুন্দর সু্ন্দর নাম না জানা নদী, জলাশয় ও ধূ ধূ প্রান্তর দেখলাম। আশ্চর্য এপথে সত্যি সত্যি কিছু সাভানা জাতীয় গ্রাসল্যান্ডও চোখে পড়েছে। সে সব সবুজ ঘাসজমিগুলো চোখের আরাম বৈকি!..

বাস স্ট্যান্ডে নামতেই ডুলুং এর ফোন, “নিশ্চয়ই পৌঁছে গেছো?”

বেশ বড় বাস স্ট্যান্ড। কিন্তু কেমন যেন শুনশান। লোকজন যাও দু’একজনকে দেখলাম, ভরসাযোগ্য নয়। ডুলুং উবের বুক করে দিয়েছে। আমি গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে চারপাশকে দেখছি। দূর বিদেশে এমন একা একা অচেনা অজানা জায়গায় ভ্রমণে যত রকমের রোমাঞ্চ, বিস্ময় ও আনন্দ আছে আমি সবই উপভোগ করছি।

হোটেল শহর থেকে একটু দূরে- গার্ডেন সিটিতে। হোটেলের নাম – Baymont।  আমেরিকায় এটাই হবে এবারের মত শেষ হোটেলে থাকা। সাভানায় দু’দিন কাটিয়ে আমি  ফিরে যাব ডুলুং এর কাছে, সাউথ ক্যারোলাইনায়। সেখানে আরও পাঁচ দিন ওর সাথে কাটিয়ে গুডবাই আমেরিকা!..চল্লিশ দিনের সফর শেষ।  ফিরে যাব আমার স্বদেশে।  আমার শহরে।

হোটেল বেমন্ট একদম বড় রাস্তার ধারে খুব সুন্দর এক নির্জনতায় দাঁড়িয়ে থাকা পান্থশালা। পাশ দিয়ে এক উদাসী রেললাইন চলে গেছে। কখনো সখনো মালগাড়ি যায়। রেললাইনের দু’ ধারে অনেক ফুরুশ গাছ সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে আছে। চমৎকার দৃশ্য। তাই প্রথম দেখাতেই ভালো লাগল। উবের থেকে নেমে রিসেপশনে গিয়ে দাঁড়াতেই হেসে ওয়েলকাম জানালেন একজন অ্যাফ্রো- আমেরিকান লেডি ম্যানেজার। আমি পাসপোর্ট দেখিয়ে রেজিস্টারে নাম পরিচয় লেখা শেষ করতেই হেসে বললেন, “স্যার, টুডে ইজ স্যাটারডে। ভেরি স্পেশাল ডে।এনজয় দ্যা নাইস উইকএন্ড। ” বলেই একটা ক্যান বিয়ার- MODELO এগিয়ে দিয়ে বললেন,” ইট ইজ কমপ্লিমেন্টারি।” আমি হেসে বললাম, “ও নাইস, আই লাইক ইট।”

ওমা! তা শুনে সে দেখি আরও দুটো ক্যান বিয়ার এগিয়ে দিলেন। আমি তো দ্বিধায় জড়িয়ে পড়েছি। নেব কি নেব না ভাবছি। মহিলা এবারও হেসে বললেন, “স্যার, টেক অ্যাস মাচ অ্যাস ইউ ক্যান। নো প্রব্লেম। এনজয় ইওর ট্রিপ।”

তিনটে ক্যান বিয়ার ফ্রিতে পেয়ে আমি তো আহ্লাদে আট নয়, আঠেরোখানা হয়ে গেছি! এদেশে তো ফেল কড়ি, মাখো তেল!.. সেখানে একটা নয় তিনটে বিয়ার কমপ্লিমেন্টারি!..  আমি তো ডিলাক্স বা এক্সিকিউটিভ রুমও নিই নি। একদম বেসিক একশো দশ ডলারের রুম নিয়েছি, তাতেও শনিবার বলে কমপ্লিমেন্টারি ক্যান বিয়ার পাওয়া যায়। বেমন্ট জিন্দাবাদ!

হোটেলের রিসেপশন লাউঞ্জে অনেক লিফলেট ও ম্যাপ সাজানো রয়েছে বুক সেল্ফে। সবই সাভানাকে জানতে ও ঘুরে বেড়াতে কাজে লাগার জন্য। ফ্রিতে পাওয়া যায়। আমি বেছে বেছে কয়েকটা লিফলেট ও ম্যাপ নিয়ে আমার রুমে চলে গেলাম।

বেমন্ট খুব মাঝারি মাপের হোটেল। কিন্তু ঘরগুলো বেশ সাজানো গোছানো। একার জন্য তো দারুণ। ঘরে বসে লিফলেটগুলো একটু পড়ে নিয়ে ডুলুং এর সাথে ফোনে কথা বলে ঠিক করে নিলাম আগামীকাল একটা সিটি টুর করব। এখানকার TROLLEY TOUR যাকে বলে। বেশ সুন্দর Hop On Hop Off বাসে করে ঐতিহাসিক সাভানা শহরটাকে দেখব। বাস বিভিন্ন জায়গা দিয়ে যাবে। আমি ইচ্ছেমত নামতে উঠতে পারব। নিজের পছন্দ মত জায়গাগুলো ঘুরে ঘুরে দেখব। তারপর আবার এই বাসে করেই ফিরে আসব। ওদের বেশ আকর্ষণীয় প্রচারের ভাষাও সুন্দর -” Explore Savannah,.. We can’t wait to show you around our hometown… Colourful anecdotes, humorous stories and historical information are combined narrative that will both entertain and educate.”, যে কোনও ঐতিহাসিক শহর বেড়ানোর এটাই মজা একইসঙ্গে দেখা ও ইতিহাস জানার আনন্দ উপভোগ করা যায়। সাভানা প্রায় তিনশো বছরের এক প্রাচীন শহর।  ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ইতিহাসে সমৃদ্ধ শহর। তাই সাভানা ভ্রমণ সবসময়ই খুব আকর্ষনীয়।

এই সিটি টুরে Trolley Stops গুলো হল- Savannah Visitor Centre, Franklin Square,  Madison  Square,  Forsyth Park, Cathedral Basilica of St. John, City Market, River Street, Colonial Park Cemetery ও আরও কয়েকটা স্টপ আছে।

শনিবারের বিকেলটা হোটেল বেমন্ট এর আশপাশে পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়ালাম। একটু দূরেই ছিল একটা মল্। সেখানেও গেলাম। দেখলাম অনেক কিছু। রাস্তাঘাট ভীষণ নির্জন। হঠাৎ হঠাৎ লোকজনকে দেখা যায়। এখানে সন্ধে হয় অনেক পরে। তাই ফিরে যখন এলাম ঘড়িতে প্রায় আটটা। ডিনার কিনে নিয়ে এলাম BURGER KING থেকে। সস্তায় পুষ্টিকর বলতে সেই চিকেন চিজ বার্গার নিয়ে এসেছি।

সাভানার প্রথম দিন রাত্রির রোজনামচা একটু লিখে রাখলাম ডায়েরির পাতায়। রাত একটু গভীর হয়েছে। জানলা দিয়ে দেখলাম আকাশ জুড়ে মেঘ। ঝিরিঝিরি বৃষ্টিও হচ্ছে। আনমনে কিছুক্ষণ বৃষ্টিকে দেখলাম। আমেরিকায় এসে বৃষ্টিকে পেয়েছি নিউইয়র্কে পা দিয়েই। তারপরও বৃষ্টি অনেকবার ভ্রমণে বিঘ্ন ঘটিয়েছে। জানি না আগামীকাল কি হবে। কালই আমার শেষ দিন। আমেরিকা ভ্রমণ মোটামুটি শেষ করে ফিরে যাওয়া ডুলুং এর কাছে। তারপর লাগেজ গুছিয়ে কটা দিন বিশ্রাম নিয়ে মন চলো নিজ নিকেতনে গাইতে গাইতে পৌঁছে যাওয়া এয়ারপোর্টে!..

বিয়ার সহযোগে বার্গার ডিনার বেশ সাহেবি ফিলিং হচ্ছিল। এই  MODELO  Mexican বিয়ার মায়ামিতে খেয়েছিলাম। একটার দাম পড়েছিল এগারো ডলার। এখানে ফ্রিতে তিনটে পেলাম!.. ভাবা যায়!..ক্লান্ত শরীর এবার ঘুমের দেশে পাড়ি দিতে চাইছে। ঘুম নেমে এলো চোখের পাতায়। আয় ঘুম আয় রে!… শুভরাত্রি!..

।। সাভানার সিটি টুর।। 

আজ ঘুম থেকে উঠেই দেখলাম বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে এবং আকাশজুড়ে মেঘ। জানলাম এ নাকি নিম্নচাপের বৃষ্টি।  দু’দিন এমন থাকবে।

সিটি টুর এর টিকিট কালই অনলাইনে ডুলুং বুক করে রেখেছে। সকাল ন’টায় পৌঁছে যেতে হবে স্ট্যান্ডে। উবের ডেকে চলে গেলাম। বৃষ্টিকে সাথে নিয়েই শুরু হল সাভানা শহর বেড়ানো।

সুন্দর এই বাসটায় আমরা বসেছি মাত্র সাতজন। তিনজন সিনিয়র সিটিজেন আমেরিকান কাপল। আর আমি একা এক ভারতীয়। আমেরিকায় সিনিয়র সিটিজেনের বয়স ৬৫ না হলে হয় না। এরা সবাই সে বয়স অতিক্রম করেও বেশ সুঠাম ও সুন্দর রয়েছেন। আর দু’জনে কুজনে বেশ প্রেমময়। আমাকে তো ওদের ফোটোও তুলে দিতে হয়েছে বেশ কয়েকবার। এক মেমসাহেব তো বলেই বসলেন, “হোয়াই ইউ আর সিঙ্গল নাও? গো ফর সেকেন্ড ম্যারেজ?” আমি হেসে প্রসঙ্গ পাল্টেছি। এরা সবাই আমেরিকার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাভানায় বেড়াতে এসেছেন। জীবনকে উপভোগ করছেন বয়সকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে।

বাসে বসে বসেই শহরের অনেকটা দেখলাম। চালক বেশ সুন্দর বলে বলে দিচ্ছেন। মজাও করছেন। বৃষ্টি নাছোড়বান্দা হয়েই রয়েছে। আমি বেছে বেছে কয়েকটা জায়গায় নামলাম, ঘুরে ঘুরে দেখলাম- Forsythe Park, City Market,  Cathedral Basilica,  River Street। সিটি মার্কেটে সুন্দর সুন্দর আর্ট গ্যালারি রয়েছে। শিল্পীরাও বসে রয়েছেন নিজস্ব ছোট ছোট স্টুডিওতে। ছবি আঁকছেন। খুব ভালো লেগেছে এই গ্যালারিগুলো দেখে। কয়েকজন শিল্পীর সাথে কথা বললাম। গল্প করলাম। আমাদের বিখ্যাত  বিখ্যাত আধুনিক চিত্রশিল্পী এম এফ হুসেন, গণেশ পাইন, মনজিৎ বাওয়া, অমৃতা শের গিল, প্রকাশ কর্মকারদের নাম বললাম। কিন্তু দেখলাম ওরা জানে না এই শিল্পীদের কথা। তখন নিজেরাই গুগুল সার্চ করে দেখে নিয়ে বললেন, “ও নাইস!.. নাও উই নো…”

ক্যাথিড্রাল বেসিলিকা খুব সুন্দর এক ঐতিহাসিক চার্চ। ওদের গাইড বইতে লেখা আছে- “SISTINE OF THE SOUTH – with its striking, neo – Gothic architecture, this 1800s basilica feels like a slice of Paris’s Notre Dame right here in Savannah”। আজ রবিবার। বৃষ্টি মাথায় করেই কত মানুষ চার্চে প্রেয়ার করতে চলে এসেছেন। ভেতরে যাওয়া আমাদের নিষেধ। বাইরে থেকেই দেখলাম চার্চের অপরূপ নির্মাণ শৈলীকে।

রিভার স্ট্রিট দারুণ এক জায়গা। সাভানা নদীকে খুব কাছ থেকে দেখলাম। নদী দেখতে আমার ভীষণ ভালো লাগে। নদীতে অনেক বোট। খুব চওড়া নদী নয়। এই নদীতে পর্যটকদের জন্য নৌকোবিহারের ব্যবস্থা রয়েছে। Georgia Queen বিখ্যাত এক রিভারবোট। এই বোটে চড়ে সুন্দর সুন্দর ক্রুজ করা যায়। ওদের Holiday Cruise গুলো বেশ সুন্দর – Valentine ‘s Day Cruise,  4 th of July, Thanksgiving Day, Easter, Christmas Eve, New Years Eve, Father’s  and Mother’s Day Cruise.

আমি মায়ামিতে রিভার বোট ক্রুজ করেছি। খুব ভালো লেগেছিল। কিন্তু এখানে আর করার মত সুযোগ হল না। তার ওপর সারাদিন ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হয়েই চলেছে।

নিজের খেয়ালখুশিমত এই ঐতিহাসিক শহরকে একা একা ঘুরে দেখলাম। অনেক মানুষের সাথে কথা বললাম। আলাপ হলো। আমার মত সোলো ট্রাভেলার কাউকে পেলাম না।  বৃষ্টিস্নাত সাভানা একটু অন্যরকম ভাবেই আমার চোখে ধরা পড়েছে। এই প্রাচীন শহরে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে মনে হচ্ছিল, একটা দিন  বড় কম এমন এক শহরকে জানা বোঝার জন্য। এই শহরের   ইতিহাস খুব সমৃদ্ধ। সবটা দেখা বোঝা হল না।মনে আফসোস রয়ে গেল। তবু অনেক ভালোলাগা নিয়ে সাভানা থেকে ফিরে এসেছি সাউথ ক্যারোলাইনায়। সাভানার স্মৃতি ধূসর হবে না কখনো!..

 

।। সাউথ ক্যারোলাইনায় শেষ কয়েকটা দিন।।

জর্জিয়ার সাভানা থেকে আবার সেই গ্রেহাউন্ড এর বাসে করে সাউথ ক্যারোলাইনায় চলে এলাম। তিন ঘন্টার এক সুন্দর সবুজ সফর। হাইওয়ে চমৎকার। পথের দু’ধারের দৃশ্যও উপভোগ করার মত মনোরম।

আজ সোমবার। ডুলুং এর ক্লাস আছে। ও কলেজ চলে যাবে। ফোনে কথা হয়েছে, আমার লাঞ্চ রেডি করে রেখে যাবে। আমি এসে ঘরের ভাত খেতে পারব।

বাস স্ট্যান্ড থেকে উবেরে সাগায় পৌঁছোতে মিনিট কুড়ি লাগল। সাগা অ্যাপার্টমেন্টে ডুলুং থাকে। ওর রুমমেট কোয়েল, পি এইচ ডি র প্রথম বর্ষের ছাত্রী। আমি রুমে চলে এলাম। কোনও অসুবিধা হল না। কোয়েল ছিল।

আজ অনেকদিন পর একটু মাছ ভাত খেলাম। ডুলুং এর রান্না করা খাবার।

বিকেলে ডুলুংও চলে এল। তারপর আমার গত সাত- আটদিনের একলা ভ্রমণের টুকরো টুকরো কিছু গল্প ডুলুং ও কোয়েলকে শোনালাম। টাটকা ভ্রমণের গল্প বলতে ও শুনতে খুবই মজা লাগে। বিকেল- সন্ধে এভাবেই গল্পে গল্পে কেটে গেল।

পাঁচদিন এখন সাউথ ক্যারোলাইনায় থাকব। এই পাঁচদিনের একটা প্রোগ্রাম ডুলুং বানিয়ে রেখেছে। আগামীকাল পুরো রেস্ট। পরশুদিন ওদের এক সিনিয়র কলিগ বাংলাদেশের সোহেল রানার বাড়িতে আমার সৌজন্যে ডিনার পার্টি আছে। তারপরের দিন আমরা একটা পার্ক ও ড্যাম দেখতে যাব। এবং একদিন আমরা বাইরে ডিনার করব। এখানে ‘আমরা’ বলতে এখন আর আমি ডুলুং নই। আরও দুজন আছে। একজন বারুইপুরের মেয়ে কোয়েল, অপরজন বাংলাদেশের ঢাকার ছেলে অরুণাভ।  কোয়েল অরুণাভ দুজনেই পিএইচডি ( ইংরেজি) র প্রথম বর্ষ। ওদের সাথে আমার বেশ বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। ওরাও আমাকে ভালোবেসে সময় দিচ্ছে। আশেপাশে বেড়াতে নিয়ে যাচ্ছে। এক একসময় মনেই হচ্ছিল না আমি যে আমেরিকায় এসেছি!..

।।স্মোক অ্যালার্ম…।।

সাগায় এই পর্বে এক ভয়ংকর অভিজ্ঞতা এই স্মোক অ্যালার্ম!.. একদিন মধ্যরাতে হঠাৎ বেজে উঠেছিল। তারপর সে আর থামে না!.. বেজেই চলেছে কান ফাটানো সাইরেন। ভয়ে আতংকে  সবাই ঘর ছেড়ে বাইরে চলে এসেছি। অনেক ছাত্র ছাত্রীরা তো একদম বড় রাস্তায় চলে গেছে। ওরা ল্যাপটপ, ব্যাগ, ভিসা, পাসপোর্ট সহ বেরিয়ে গেছে। আমরা কিছুই না নিয়ে বাইরে চলে এসে চিন্তায় ছটফট করছি। যদি সত্যিই আগুনে সব পুড়ে ছাই হয়ে যায় তো কি হবে!..

পুলিশের গাড়ি চলে এলো!.. ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট চলে এলো। কোথায় আগুন? কোথায় ধোঁয়া?…

অনেক পরে জানা গেল অ্যালার্মের ত্রুটি!..

সে এক দুঃশ্চিন্তার মধ্যরাতের প্রহর গোনা শেষ হল বিরক্তিকর হতাশায়!.. আমেরিকায়ও এমন হয়!..

ঘরের মধ্যে আগুন লাগলে, বা কেউ সিগারেট ধরালে এমন স্মোক অ্যালার্ম বেজে ওঠে। কিন্তু এর কোনওটাই হয় নি!.. শুধুই হয়রানি ও আতংকের অভিজ্ঞতা!..

।।সোহেল রানার বাড়ি।।

মিনি এশিয়ান জমায়েত হয়েছিল ডিনারে সোহেল রানার বাড়িতে। সোহেল ঢাকার ছেলে। পি এইচ ডির সিনিয়র ছাত্র। ইউনিভার্সিটিতে সোহেল খুব জনপ্রিয় । সবাই ওকে চেনে।  প্রথমে কফি খেতে খেতে একটু আড্ডা হল। তখন ওদের ইউনিভার্সিটির প্রফেসরদের কয়েকজনের নাম জানতে পারলাল, ইলাই, গ্রেগ ফটার, অ্যান গুলিক। ইলাই নাকি খুব ফানিম্যান!.. রোজই সে হোয়াইট শার্ট পড়ে ইউনিভার্সিটিতে আসেন! এবং ওরা  হাসতে হাসতে বলল, ওটাই নাকি ওঁর একমাত্র শার্ট!..পৃথিবীর সর্বত্র ছাত্র ছাত্রীদের গল্পে এমন সব মজার কথা থাকবেই!..

সোহেলের বাড়ির এই জমায়েতকে অরুণাভ মজা করে বলল, “সার্ক ভুক্ত দেশের ডিনার পার্টি!..”

ভারত, বাংলাদেশ ও পাকিস্তান মিলিয়ে মোট সাতজন এশিয়ান সেদিনের সন্ধ্যা- রাত্রিটা দারুণ আনন্দে হৈ হৈ করে কাটিয়েছি।

ভারতবর্ষের আমি ডুলুং কোয়েল। বাংলাদেশের সোহেল, ওর বউ বিন্দু ও অরুণাভ। এবং পাকিস্তানের লাহোরের মেয়ে আর্শিয়া কওসর। অবশ্য আরও একজন ছিল, সে সোহেলের সদ্যজাত কন্যা ইকরা। আর্শিয়াও ইংরেজি নিয়ে পি এইচ ডি করছে। ও আর ডুলুং একই ইয়ারের।

ডিনারের মেনুও ছিল চমৎকার এবং অনেক আইটেম। সোহেল- বিন্দু দুজনে মিলেই রান্না করেছে আমাদের জন্য।

এমন দূরে এক অচেনা বিরাট মহাদেশে আমরা কয়েকজন প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মানুষ একসাথে বসে গল্প করে, হাসি গান করে ডিনার করলাম। এই সব অমূল্য স্মৃতি চিরদিনের সোনালি স্মৃতি হয়ে রয়ে গেল।

কোথায় কলকাতা! আর কোথায় সাউথ ক্যারোলাইনা! আর আমার সঙ্গী কারা এই অসাধারণ আনন্দ সন্ধ্যার – মেয়ে ও মেয়ের বন্ধুরা! জীবন যে এমন কত মধুর মুহূর্ত উপহার দিতে পারে, এসব ঘটনাগুলো যখন সত্যি ঘটে বোঝা যায়। অনুভবে ধরা দেয় এ মহানন্দ!  প্রণাম তোমায় হে মহাজীবন!..

।। লেক মারে ( Lake Murray)।। 

সাউথ ক্যারোলাইনার অন্যতম সুন্দর একটা জায়গা হলে লেক মারে। আমরা উবের বুক করে চলেছি। সাগা অ্যাপার্টমেন্ট থেকে লেক মারে কমবেশি তিরিশ/ চল্লিশ কিমি। যাওয়ার সময় কোঙ্গারী নদী-সেতুর ওপর  দিয়ে গেলাম। এপথে সুন্দর সুন্দর কয়েকটা জনপদ চোখে পড়ল- Lexington, Newberry,  Saluda, Richland। এগুলো সাউথ ক্যারোলাইনার অপূর্ব সুন্দর সব কাউন্টি। দেখলেই ভালো লাগে। মুগ্ধতা তৈরী হয়।

লেক মারে পৃথিবীর অন্যতম বৃহৎ এক কৃত্রিম জলাধার। সালুদা নদীর জল থেকে সৃষ্টি এই লেক ও ড্যাম। ১৯২০ সালে এই হাইড্রোইলেকট্রিক পাওয়ার ড্যাম তৈরী শুরু হয়েছিল। এর চিফ ইন্জিনিয়ার ছিলেন William S Murray। তাঁর নাম থেকেই এই বিখ্যাত লেকের নামকরণ হয় Lake Murray । এই লেকের আয়তন ৬৬ কিমি লম্বা, ২৩ কিমি প্রশস্ত। আর ড্যাম ২.৪ কিমি লম্বা ও ২২০ ফিট উচ্চতাবিশিষ্ট। এই জলবিদ্যুৎ সাউথ ও নর্থ ক্যারোলাইনার সম্পদ।

লেক মারের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য খুবই আকর্ষণীয়। প্রথম দেখাতেই আচ্ছন্ন করে মনকে। আমরা সন্ধ্যালগনে পৌঁছেছিলাম বলে সানসেটের এক অপূর্ব আলোর খেলা দেখেছি লেকের জলে। এই লেকের জলে বোটিং ও ফিশিং করা যায়। চারপাশে কিছু রিসর্ট ও রেস্টুরেন্ট রয়েছে।

ডুলুং কোয়েল অরুণাভ ও আমি এই চারমূর্তির এক সুন্দর সফর ছিল এক বিকেলের লেক মারে।

।। কলম্বিয়া ক্যানেল ও রিভার ফ্রন্ট পার্ক।।

সাউথ ক্যারোলাইনা ইউনিভার্সিটির খুব কাছেই এই কলম্বিয়া ক্যানেল ও কোঙ্গারী রিভার ফ্রন্ট পার্ক। আমরা চারমূর্তি পায়ে হেঁটেই পৌঁছে গিয়েছিলাম এবং সুন্দর এক বিকেল কাটিয়েছি।

কলম্বিয়া ক্যানেল একদম যেন আমাদের ভারতবর্ষের চেনা কোনও গ্রামের খাল পার। ভীষণ মিল পাওয়া যায় আমাদের গ্রামবাংলার খালপার, ঝিলপারগুলোর সাথে। অমিল একটা জায়গায়, ক্যানেল পারের গাছগুলোয় দেখলাম প্রচুর স্প্যানিশ মশ ঝুলছে। কি সুন্দর লাগছে গাছগুলোকে।

কোঙ্গারী রিভার ফ্রন্ট পার্কও ভালো লেগেছে। খুব বড় নয় নদী এখানে। কিন্তু নদীর চারপাশের দৃশ্য খুব সুন্দর। জলের প্রবল বহমানতা নেই, গর্জন নেই, উত্তাল নয় নদী- তবু এই কোঙ্গারীকে দেখতে ভালো লাগে। ভালোবেসে নদীর দিকে চেয়ে আমরা অনেকক্ষণ বসে গল্প করেছি। এগুলো সবই ছোট ছোট আনন্দ-বিকেল। কিন্তু কি মূল্যবান মহার্ঘ্য স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে আমার জীবনে।

হে মহাজীবন, কৃতজ্ঞতা জানাই তোমাকে!..

 

 

।। ফাইভ পয়েন্ট ও  থার্টিন ডলার ডিনার।।

ফাইভ পয়েন্ট সাউথ ক্যারোলাইনার কলম্বিয়া  শহরের খুব কাছের এক মিনি মার্কেট। এখানে সবাই আসে খাওয়া দাওয়া, শপিং করা, একটু বেড়ানোর মজা নিতে। খুব ছোট্ট কিন্তু সুন্দর পরিচ্ছন্ন জায়গাটা। এখানে এক দারুণ ফার্মাস মার্কেট দেখেছি। সেখানে কত রকমের ফুল, ফল ও বিরাট বিরাট সাইজের পমকিন মানে কুমড়ো দেখে অবাক হয়েছি। এক একটা কুমড়ো সাইজে ও ওজনে বিশাল। ডুলুং বলল, এগুলো নাকি ফলব্রেকের সময় মানুষজনরা ইনডোর ডেকোরেশন এর কাজে লাগায়। কুমড়ো দিয়ে বাড়ি সাজানো!.. ভাবলেই যেন হাসি পায়। কিন্তু সত্যি এই বিশাল কুমড়ো দিয়ে শিল্পকর্ম হয় এই দেশে। ফাইভ পয়েন্টে নতুন এক ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টের ব্যানার চোখে পড়ল…opening shortly । ওটা দেখেই কোয়েল হেসে বলল, “সুচেতনাদি, আমরা কিন্তু প্রথমদিনই আসব!..”

অরুণাভ বলল, ” ইশ্, অ্যাঙ্কেল তো চলে যাবেন! নাহলে সবাই মিলে মজা করা যেত।” আমি তখন হঠাৎ টেনিদার মত ফুরফুরে ঢঙে বললাম, ” আরে চলে আসব আমি। ক্যারোলাইনা থেকে কলকাতা আর কতদূর!..” ওরা তখন হো হো করে হাসল।

আজ শেষদিন। থার্টিন ডলার ডিনার খাওয়া হবে ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস ভিলেজের বিশাল ডাইনিং হলে। এটা আমার কাছে একটু অভিনব। স্টুডেন্টদের সাথে বসে যত খুশি খাও এর এই আয়োজনে অংশ নেওয়া। তেরো ডলারে ( ট্যাক্স নিয়ে পড়ে যায় ষোল ডলার) পেট পুরে কব্জি ডুবিয়ে যা পারো তুমি খেয়ে নাও। অনেক অপশন। অনেক মেনু।

কোনওদিন কি ভেবেছিলাম এমন অদ্ভুত আনন্দ অভিজ্ঞতাও অপেক্ষা করে আছে আমার জন্য!..

।। যেও না নবমী নিশি!..।।

ডিনার করে ফিরছি। ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস  ভিলেজ থেকে ডুলুং এর সাগা অ্যাপার্টমেন্ট পায়ে হাঁটা পথ। আজই আমার আমেরিকায় শেষ রাত্রি। আজ নবমী। কাল বিজয়া!..

চল্লিশ দিন ধরে আমেরিকার এগারোটা অঙ্গরাজ্য ঘুরে বেড়ালাম। নিউইয়র্ক, ম্যাসাচুসেটস, কানেটিকাট, ওয়াশিংটন, ইলিনয়, ইন্ডিয়ানাপোলিস, লুইজিয়ানা, ফ্লোরিডা, জর্জিয়া, সাউথ ক্যারোলাইনা, নর্থ ক্যারোলাইনা। তেরোবার আকাশপথে উড়েছি। কত সুন্দর সুন্দর এয়ারপোর্ট দেখলাম। নদী, সমুদ্র, মহাসমুদ্র দেখলাম। অসাধারণ কত শহর দেখলাম।  বন্দর দেখলাম। লেক দেখলাম। বিখ্যাত বিখ্যাত ইউনিভার্সিটি দেখলাম। কত স্মৃতি। কত অভিজ্ঞতা নিয়ে এবার ঘরে ফেরার পালা।

আগামীকাল সকালে চলে যাব নর্থ ক্যারোলাইনার শার্লট এয়ারপোর্টে। তারপর আকাশপথে উড়ে নিউইয়র্ক। তারপর আবার উড়ে দোহা। তারপর দোহা থেকে কলকাতা। দেশে ফেরা। বাড়ি ফেরা। অন্যভুবনে ফেরার একটা চাপা আনন্দ হচ্ছে।  কিন্তু আবার বুকের ভেতর কোথায় যেন একটু চিন চিনও করছে, মন কেমন করছে, এক স্বপ্নের ভ্রমণে চল্লিশটা দিন কি সুন্দর কাটালাম। কত কিছু দেখলাম। কত আনন্দ অভিজ্ঞতায় মন প্রাণ ভরে গেছে। এই সব স্মৃতিকথা লিপিবদ্ধও করেছি “আমেরিকার ডায়েরি” তে।

আজ রাত ফুরোলোই কাল আমার বিদায়! বলতে হবে, “গুডবাই আমেরিকা!..বাই বাই আমেরিকা!.. “

চারজনে গল্প করতে করতে সাগায় পৌঁছে গেলাম। এবার আমি, ডুলুং, কোয়েল চলে যাব আমাদের ঘরে। অরুণাভ বিদায় জানিয়ে বলল, “আঙ্কেল, আবার আসবেন। এবার এসে অনেকদিন থাকবেন।”

রাতে লাগেজ শেষবারের মত ভালো করে গুছিয়ে  নিলাম। ডুলুং বুঝিয়ে দিল ফেরার টিকিট, এয়ারপোর্টের চেকইন, লেওভার সব কিছু। আমি শুনলাম, কিন্তু মন দিয়ে কি সত্যিই সব শুনলাম!..মনটা তো কেমন যেন করছে!.. কেন এমন হয়!..  একজন একলা মানুষ, আমার মত মুসাফির মানুষের তো এমনটা হওয়া উচিত নয়!..

ভোরের আকাশে আজ মেঘ। বৃষ্টিও হচ্ছে ঝিরিঝিরি। একটু পরেই শাটেল ( SHUTTLE)  আসবে। সাগার নিচে এসে লাগেজ নিয়ে দাঁড়িয়েছি। পাশে ডুলুং, কোয়েল।

আমি বললাম, “তোরা দু’জনে আনন্দ করে থাকবি। রান্নাবান্না একসাথে করবি। খাওয়া -দাওয়া করবি ঠিক মত। শরীরের খেয়াল রাখবি!..” এগুলো কি আমার বলার কথা ছিল!.. তবু বলতে হলো!..

গাড়ি চলে এসেছে। উঠে বসলাম।

ওরা টাটা করল। ডুলুং বলল, “সাবধানে যাবে। আপডেট দিতে থেকো।”

বৃষ্টির ফোঁটা গাড়ির কাঁচে ঝরে পড়ছে। চালক বারবার ওয়াইপার ঘুরিয়ে চলেছেন, বৃষ্টিভেজা কাঁচ পরিষ্কার হয়ে উঠছে, আবার ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে…

আমার চোখও ভিজে ঝাপসা এখন।

চোখের জলের জন্য তো আর কোনও ওয়াইপার হয় না। পকেট থেকে রুমাল বের করে চোখ মুছলাম!..

বাইরের আকাশে মেঘ ও বৃষ্টি, আমেরিকার মাটি ভিজে যাচ্ছে। আর আমার অন্তরেও তখন বৃষ্টিধারা!.

“চোখের জলের হয় না কোনও রং, তবু কত রংয়ের ছবি আছে আঁকা”… আমি সেই দুঃখী  চিত্রকর… কত জলছবি এঁকে চলেছি একা একা…আরও কত পথ যেতে হবে একা একা!..

সমাপ্ত

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।