গদ্যানুশীলনে সুব্রত সরকার

অণুগল্প 

ছোরা

পাহাড় নদী অরণ্য, এই তিন নিয়ে অনন্য এক গ্রামে বেড়াতে এসেছি। পাহাড়ি গ্রামটা খুব শান্ত। নির্জন। নদীর স্বচ্ছ জল পাথরের খাঁজে খাঁজে বয়ে চলেছে। পাখির কলতানে এ অরণ্য কোলাহল মুখর সব সময়।

একা একা গ্রামটা ঘুরে বেড়িয়ে দেখতে দেখতে পথে হঠাৎ দেখা হয়ে গেল তিন কিশোরী কন্যার সঙ্গে, হেসে বললাম, “হ্যালো।”

“হ্যালো।”

“তুম লোক স্টুডেন্ট হ্যায়।”

“হাঁ। আজ এক্সাম থা।”

“কৌন  ক্লাস? কৌন সা পেপার আজ থা?”

” ক্লাস টেন। নেপালি।”

” ক্যায়সা হুয়া?”

“আচ্ছা হুয়া।” তিন কিশোরী কন্যাই হেসে বলল।

এরপর তিন কন্যার নাম জানলাম। রীণা ছেত্রী, মণিকা ছেত্রী ও বিউটি থাপা।

ওরা পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরছিল। বেশ সহজ সরল তিন কিশোরী কন্যার সঙ্গে গল্প করতে করতে রীণার বাড়ির কাছে চলে এসেছি, সুপুরি গাছ দিয়ে ঘেরা ওদের বাড়িটা মস্ত বড় উঠোনের মাঝে। রীণা বলল, “আইয়ে না হামরো ঘর মে!..”

মণিকা, বিউটি টা টা করে চলে গেল। আমি রীণার বাড়িতে গুটি গুটি পায়ে প্রবেশ করলাম।বাড়িতে নতুন মানুষ, অপরিচিত আদমি ঢুকেছে দেখে ঘর থেকে একে একে বেরিয়ে এল রীণার মা, ঠাম্মা ও দুই বোন।

“নমস্তে”বলে হাতজোড় করলাম।

মা, ঠাম্মাও নমস্তে বলে সম্ভাষণ করে এগিয়ে দিলেন বসার চেয়ার।

বাড়িটা বেশ ছড়ানো। অনেক গাছপালা। গরু, ছাগল, মুরগী সব আছে। বাড়ির সামনে একটা ছোট্ট মুদি দোকানও আছে। কথায় গল্পে জানলাম দোকানটা বাড়ির সবাই মিলে চালায়। রীণার বাবা কেরলে রান্নার কাজ করে। বছরে দু’বার বাড়িতে আসে। রীণার বাকি দু’বোন সিক্স ও ফোরে পড়ে। রীণার খুব ইচ্ছে ইংলিশ অনার্স নিয়ে কলেজে পড়বে।

পর্যটকের চোখে গ্রাম বেড়াতে বেড়াতে গ্রামের মানুষজনের সঙ্গে ভাব হয়ে গিয়ে চাও পেয়ে গেলাম হাতে। হাসতে হাসতে রীণার মাকে বললাম, “আপনার তিন মেয়েই তো খুব ভালো। ওরা পড়াশোনা করে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখছে। সুইটি বলল, বড় হয়ে নার্স হবে। অনুষ্কা বলল, ল’ইয়ার হবে।”

রীণার মা মৃদু হেসে বলল, “মেরা তিন লেড়কিই বহুত আচ্ছা হ্যায়।” রীণার ঠাম্মা উঠোনের এক কোণায় বসে সুপুরি ছাড়াচ্ছিলেন। হঠাৎ সে বেশ গর্বিত হয়ে বলে উঠলেন, “শুনো বেটা, মেরা বহু কা এক ছোরা ভি হ্যায়!..”

আমি তখন তাকিয়ে আছি রীণার মার দিকে। রীণার মা কেমন যেন লজ্জা লাল মুখে খুব আস্তে বলল, “ও সব কা ছোটা হ্যায়। তিন সাল কা লেড়কা।”

“আচ্ছা!” আমি মাথা নেড়ে কথাটা বললাম।

তারপর আর এই প্রসঙ্গ নিয়ে কোনও কথা হল না।

আরও কিছু গল্পকথা শেষ করে উঠে দাঁড়ালাম।তিন বোন উঠোনে জড়ো হয়ে আমাকে বিদায় জানাল। আমি ওদের মা, ঠাম্মাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফিরে আসছি।

রীণার মার লজ্জা লাল মুখটা তখনও লাজুক হয়েই আছে!..

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।