ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সমীরণ সরকার (পর্ব – ৯৫)

সুমনা ও জাদু পালক

মহারাজ রুদ্র মহিপালের আদেশ মত তামার ঘটে বন্দী জাদুকর হূডুকে নিয়ে গেল রাজার বিশ্বস্ত সৈনিকেরা।
পুষ্প নগর রাজ্যের পশ্চিমে খাড়াই সুউচ্চ দুর্গম পাহাড় দিয়ে ঘেরা হিংস্র শ্বাপদের আবাসস্থল কালকাসুন্দির জঙ্গলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত খরস্রোতা কপালেশ্বরী নদীর অভ্যন্তরে প্রোথিত করা হবে ওই ঘট। রাজ্যের সেনাপতির প্রতি সেই রকমই নির্দেশ দিলেন রাজা রুদ্র মহিপাল।
ওরা চলে যাওয়ার পর পরীরানী রাজার উদ্দেশ্যে বললেন, এবার আমাকে যাওয়ার অনুমতি দিন হে রাজন। পরীরাজ্য ছেড়ে
বহুদিন বাইরে আছি আমি। আমার মন খুব অস্থির হয়ে আছে।
রাণী মায়াবতী বললেন, অবশ্যই হে পরীরানী। তবে আপনি আমার সন্তানকে উদ্ধার করেছেন। আপনার কাছে আমি চির কৃতজ্ঞ। আমাদের রাজ্য ছেড়ে চলে যাওয়ার আগে আপনাকে আমি একটি ক্ষুদ্র উপহার দিতে চাই। আপনি দয়া করে আমার উপহার গ্রহণ করুন পরীরানী।
পরীরানী বললেন, অবশ্যই হে মহারানী। আপনার দেওয়া উপহার আমার কাছে মহামূল্যবান।
রানী মায়াবতী তাঁর কন্ঠ থেকে একটি বহু মূল্যবান গজমোতির হার খুলে দিলেন পরীরানীর হাতে।
পরীরানী হাত পেতে সেই উপহার গ্রহণ করলেন এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই কন্ঠে ধারণ করলেন সেই অপূর্ব সুন্দর হার।
পরীরানী এবার তার মায়াদণ্ড ঘুরিয়ে বিড়বিড় করে মন্ত্র পড়তে শুরু করলেন। মুহূর্তের মধ্যে তার হাতে এসে গেল খুব সুন্দর একটি ছোট্ট গোলাকৃতি মুকুর। পরীরানী সেই মুকুরটি মহারানী মায়াবতীর হাতে তুলে দিয়ে বললেন, আমার তরফ থেকে আপনার জন্য রইল এই ক্ষুদ্র উপহার। এটি সবসময় আপনার সঙ্গে রাখবেন হে মহারানী।এটি একটি মায়া মুকুর। এটি দেখতে ছোট হলে কী হবে, এর অসীম ক্ষমতা। যেকোনো জায়গায় ,যেকোনো সময় বিপদে পড়লে আপনি এই মুকুরটি হাতে নিয়ে সাহায্য প্রার্থনা করলেই মুহূর্তের মধ্যে সেই বার্তা পৌঁছে যাবে আমার কাছে। আমি আমার সাধ্যমত আপনাকে সাহায্য করার চেষ্টা করব।
রাজা রুদ্র মহিপাল বললেন, বাহ্! দারুন তো!
আপনার মায়া-মুকুর ভারি অদ্ভুত তো হে পরীরানী। তবে আমার একটি অভিযোগ আছে।
——কী?
——মহারানী মায়াবতী আপনাকে কণ্ঠহার উপহার দিলেন বলেই কি আপনি রানী মায়াবতীকে অত সুন্দর একটা উপহার দিলেন?
পরীরানী উত্তর দেওয়ার আগেই রানী মায়াবতী বললেন, মহারাজ, আমার উপহার দেখে আপনার কি হিংসা হচ্ছে?
—–না না, তা হবে কেন? মহারাজ আমতা আমতা করে বললেন।
ওঁর কথা বলার ধরন দেখে সবাই হেসে উঠলো হো হো করে।
চন্দ্রদ্বীপের রাজকুমার দনুজদমন বললেন, আমাকেও এবার বিদায় দিন হে মহারাজ। আমিও বহুদিন দেশ ছাড়া। হে রাজন, আপনি,রাজকুমারী রত্নমালা, রাজকুমারী চন্দ্রকান্তা, পরীরানী সবাই সাহায্য না করলে আমি আমার আসল রূপে হয়তো কোনদিনই ফিরতে পারতাম না। ফিরতে পারতাম না আমার রাজ্যে, আমার পিতা-মাতার কাছে।
আপনাদের সবার কাছে আমি চির ঋণী হয়ে রইলাম।
রাজকুমারী চন্দ্রকান্তা বলল, কিন্তু আপনি আপনার রাজ্যে ফিরবেন কিভাবে, হে রাজকুমার?
পরীরানী বললেন, সে ব্যবস্থা আমি করছি।
উনি তার মায়াদণ্ড ঘুরিয়ে আহ্বান করা মাত্র একটি সুন্দর রথ যেন হাওয়ায় ভাসতে ভাসতে এসে উপস্থিত হলো সেখানে। দুধরাজের মতো হুবহু দেখতে একটা সাদা ঘোড়া আছে রথের একদম সামনে।
সুমনা বলল, কী আশ্চর্য!
পরীরানী বললেন, কী হলো রাজকুমারী রত্নমালা?
—- যে সাদা ঘোড়াটা ডানা মেলে উড়তে উড়তে, রথটাকে নিয়ে এলো এখানে, ও তো হুবুহু দুধরাজের মতো দেখতে।
সুমনার কথা শুনে পরীরানী মৃদু হেসে বললেন, তা তো হবেই।
—–মানে?
——ওই রথটাকে যে এখানে নিয়ে এলো, ওর নাম ক্ষীররাজ। ও দুধরাজের ছোট ভাই।
——–তার অর্থ দুধরাজ কী আপনাদের পরী রাজ্যের ঘোড়া? তাই কি সেদিন দুধ নদীর পাড়ে পরী বন্ধুরা দুধরাজের গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল?
—–তুমি একদম ঠিক বলেছো রাজকুমারী রত্নমালা। সত্যিই তুমি অসাধারণ বুদ্ধিমতী!
——-দুধরাজ তাহলে পরীরাজ্যে থাকেনা কেন?
——-ও একবার একটা ছোট্ট ভুল করে ফেলেছিল। তাই ওকে নির্বাসন দণ্ড দিয়েছেন আমার বাবা ।
—-আপনার বাবা?
——-হ্যাঁ রত্নমালা, আমার বাবা ছায়া রাজ্যের অধীশ্বর মায়ারাজ। দুধরাজ ও ক্ষীররাজ দুটো ঘোড়াই আমার বাবার। বাবা উপহার হিসেবে আমাকে ঘোড়া দুটো দিয়েছিলেন। একবার দুধরাজকে আমি বাবার কাছে পাঠিয়েছিলাম, এক বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য। কিন্তু সেই দায়িত্ব ও সঠিকভাবে পালন না করার কারণে বাবা শাস্তি দিয়েছিলেন দুধরাজকে। আর সেই শাস্তি হলো পরী রাজ্য থেকে বারো বছরের জন্য নির্বাসন।
—বারো বছর নির্বাসন?
——সেই মেয়াদ আর শেষ হয়ে এলো বলে।
দুষ্টু জাদুকর হূডু পরাভূত হয়েছে। রাজা রুদ্র মহিপাল তার রাজ্য ফিরে পেয়েছেন। আশা করি সবুজের দেশ অভিশাপ মুক্ত হবে। হাসিখুশি দ্বীপের কনকনগর রাজ্য আবার জেগে উঠবে। ফিরে পাবে তাদের রাজকন্যা রত্নমালাকে। দুধরাজের কাজ ফুরিয়ে যাবে, ও ফিরে যাবে পরী রাজ্যে।
—–বাহ খুব ভালো!
আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠলো সুমনা ও রাজকুমারী চন্দ্রকান্তা।
পরীরানী বললেন, আমি আমার রথেই রাজকুমার দনুজদমনকে নিয়ে যাব, পৌঁছে দেব তার রাজ্য চন্দ্রদ্বীপে।
রাজকুমার দনুজদমন বলল, এ তো আমার পরম সৌভাগ্য হে পরীরানী।
সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল পরী রানী ও রাজকুমার দনুজদমন ।
অদৃশ্য কন্ঠ এবার সুমনার কানের কাছে ফিসফিস করে বলল, দুধরাজকে আহ্বান করেছি। ও আসছে। এবার আমাদের কনকনগর রাজ্যে ফিরে যেতে হবে রাজকুমারী রত্নমালা।
——অবশ্যই!

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।