ভ্রমণ সিরিজে শতদ্রু ঋক সেন – ৬

দুই পা ফেলিয়া

জয় হো জয় হো শঙ্করা, আদি দেব শঙ্করা… কাল রাতে ঘুম আসতে দেরী হচ্ছিলো বলে জি5 এ কেদারনাথ দেখছিলাম। আগেও অনেকবার দেখেছি, তাও আবার দেখলাম। বেশ খানিকক্ষণ দেখার পর, কি মনে হলো, আমার গুগল ফটোর ফোল্ডার টা খুললাম। আছে, সযত্নে রাখা আছে আমার কেদারনাথ ভ্রমণের মণিমুক্তো। ১০ বছর হয়ে গেল, ঘুরে এসেছি, অথচ মনে হয় যেন এই তো সেদিন। কতো স্মৃতি ভিড় করে এলো, তাই ভাবলাম, একটু লেখালেখি করি।
কেদারনাথ আমার প্রথম যাওয়া, ২০০৩ সালে, এইচ এসের পর। গোমুখ থেকে ফিরে, আমি হাঁটা পথ ধরে উঠতে পারিনি, তাই একাই ঘোড়ার পিঠে গিয়ে পূজা দিয়েছিলাম। বাবা, পিসি, পিসেমশাই পরে হেঁটে উঠে দর্শন করেছিলেন। বাবা কেঁদে ফেলেছিলেন দর্শন করে, তা আমার আজও মনে আছে। একে দেব দর্শন, তার ওপর মা কে না নিয়ে যেতে পারার কষ্ট, এটা বাবাকে অভিভূত করে তুলেছিল। ঠিক করেছিলাম, আবার আসবো। উখিমঠে ভারত সেবাশ্রম সংঘের তরুণ পরিচালক সন্ন্যাসী মহারাজের সাথে খুব আলাপ হয়ে গেছিলো, উনি বারংবার ফিরে আসতে বলেছিলেন।
২০১০ সাল, বাবাকে না নিয়ে যেতে পারলেও, তাঁর পিন্ড দানের ইচ্ছাকে শিরোধার্য করে আবার ফিরে গিয়েছিলাম গাড়োয়ালে। বদ্রীনাথের ব্রম্হোকপোলে পিন্ড দান করার আগে, পাকদন্ডী বেয়ে আমার দ্বিতীয় বারের কেদারনাথ যাত্রা। সেবার আমি একা, গৌর ট্রাভেলস এর ব্যবস্থাপনায়, ওদের দলের সাথে গেছিলাম। উখিমঠে পরিচিত হওয়া সেই তরুণ মহারাজ তখন কেদারনাথ ভারত সেবাশ্রম সংঘের কর্ণধার, খুব খুশী হয়েছিলেন আমাকে দেখে, সারা বিকেল ওনার সাথে নানা গল্প আলোচনায় কেটে গেছিলো। দেব দর্শন ও পূজা সফল হয়েছিল, সেবার শুধু নিজের নয়, আরো অনেকের পূজাও আমি দিয়েছিলাম, তাঁদের অনুরোধে, এবং ফিরে আসার পর সবার আশীর্বাদ লাভ আমায় পরম তৃপ্তি দিয়েছিল। ইচ্ছা ছিলো, খুব শীঘ্রই আবার ফিরে আসবো।
তারপর দশ বছর কেটে গেছে। আর যাওয়া হয়ে ওঠেনি। পারিবারিক, মানসিক নানা কিছু সামলেছি,আরো অনেক জায়গা ঘুরেছি, কিন্তু বাবা কেদারনাথ আমার এখনও অধরা থেকে গেছেন। সেখানেও নানা বিপর্যয় ঘটেছে, ২০১৩ সালের সেই বিদ্ধ্বংসী বন্যায় ভারত সেবাশ্রম সংঘের বাড়িটি নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, আমার পরম পূজনীয় সেই মহারাজ শহীদ হয়েছেন। পথের মাঝে আমার দুবারের বিশ্রাম স্থল রামোয়াড়া চটিও আর নেই, নতুন পথ ধরে সবাই এগিয়ে চলে তাঁর কাছে।
তিনি আছেন, আজো অনেক ভক্ত কে ডাক পাঠান, তারা যায় তাঁর কাছে, সফলভাবে দেব দর্শন ও পূজা সাঙ্গ করে তারা আবার ফিরে আসে। ইচ্ছা আছে সেই দলের ভিড়ে মিশে আবার যাবো তাঁর কাছে, তাঁর মন্দিরের চাতালে বসে, এক মনে ধ্যান করে যাদের হারিয়ে ফেলেছি, নিজের মনের মাঝে আবার তাঁদের কে খুঁজে আনবো।
ফিরে যে আমাকে যেতেই হবে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।