ধারাবাহিক ভ্রমণ সিরিজে শতদ্রু ঋক সেন – ৭৭

ফেরা
ঈশান কোণে তাকিয়ে দেখি ঘন কালো মেঘ এগিয়ে আসছে। মুহুর্তের মধ্যে, এতোক্ষণ যে ঝকঝকে আবহাওয়া ছিলো, পাল্টে গেলো। কোথা থেকে ছুটে এলো কুয়াশা, কাছাকাছি লোককে দেখতে পাওয়াই দুস্কর। আর মিনিট পাঁচেকের মধ্যে বড়ো বড়ো বৃষ্টির ফোঁটা, সাথে কনকনে ঠান্ডা হাওয়া। বেশ বুঝতে পারলাম, আশেপাশে একটা হুড়োহুড়ি লেগে গেছে। যে যেদিকে পারছে ছুটছে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য। আমি নিজেও তার ব্যতিক্রম হলাম না। যে চায়ের ঝুপড়ি থেকে চা কিনেছিলাম, ছুটে গিয়ে সেঁধোই তার অন্দরে। আর খানিকটা সময়ের মধ্যেই ভিড়ে ভিড়। এতোটাই ভিড় যে মাঝে মাঝে শ্বাস নেওয়া চাপ হয়ে যাচ্ছিলো। কোনোমতে বাইরের দিকে মুখ করে এক কোনা আঁকড়ে দাঁড়িয়ে থাকি। বৃষ্টি কমা তো দূর, উল্টে বাড়তে থাকে।
ঐতো।দলের কয়েকজন আসছে ছুটতে ছুটতে। অধিকাংশ ভিজে চুপ্পুর, হঠাৎই বৃষ্টি আসায়, বর্ষাতি পরার সময়টুকু পায়নি। ঝটিতি পিঠ ব্যাগের সাইড চেইন থেকে স্বস্তার রেনকোট বার করে গলিয়ে নি। ফিনফিনে এই বস্তুটি সব তীর্থযাত্রীদের কাছেই আছে, গৌরীকুন্ড থেকে সংগ্রহ করা। বস্তুত ঐ রাস্তায় যারাই যায়, তারাই এটি কেনে, ফেরত আসার সময় দেখা যায় ছিঁড়ে ফর্দাফাই হয়ে গেছে। কপালগুনে ছিঁড়ে না গেলে অনেকে এটি স্যুভেনির হিসেবে বাড়িতেও নিয়ে আসেন।
যাইহোক, দলের যারা এসেছিল তাদেরকে নিয়ে চলে যাই মন্দিরের পাশে ভারত সেবাশ্রম সংঘে। আমার সেই পুরনো আশ্রয়স্থল।
আমরা যেদিন কেদারনাথ গেছিলাম, তার ঠিক তিন বছর পরে ঐ একই দিনে বিদ্ধংসী বন্যায় আমার সেই প্রিয় আশ্রয়স্থল টি চিরতরে ধ্বংস হয়ে যায়। শুধু রয়ে যায় আমার ও আরো অনেকের স্মৃতির পাতায়।।