T3 নববর্ষ সংখ্যায় সুদীপ্তা রায়চৌধুরী মুখার্জী

।। আদালত ও এক মুখ্যমন্ত্রী ।।
অভয়া আন্দোলনের মুখ থুবড়ে পড়া এবং ছটা উপনির্বাচনে বিপুল জয় দেখে শাসক ভেবেছিল এভাবেই ‘ঠাকুর ঠাকুর’ করে আর একটি বছর কাটালেই দাঙ্গা ও দানের তরীতে চেপে বৈতরণী পার হওয়া যাবে । ঠিক এই সময়ই দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে বাংলার প্রায় ২৬,০০০ শিক্ষকের চাকরি বাতিলের নিদান এলো । যদি আবার কোন আন্দোলন মাথা চারা দেয় এই আশঙ্কায় মুখ্যমন্ত্রীর তড়িঘড়ি আসরে নামলেন । কী বললেন? না শিক্ষকরা যেন বিনি মাইনেয় স্বেচ্ছাশ্রম দেয় ।
নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে দেওয়া এই মরিয়া চাল বলা ভালো পরিস্থিতিকে আরও ‘ঘেঁটে’ দিল । না চাকরি ফেরতের কোন দিশা দিলেন না কোন স্পষ্ট আশ্বাস, বরং যোগ্য- অযোগ্যের সীমারেখা মুছে দেওয়ার এই প্রচেষ্টায় আসলে অযোগ্যদেরই আশকারা দেওয়া হল। অর্থাৎ মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের কাছেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যাঁদের থেকে তিনি বা তাঁর দল সরাসরি উপকৃত অর্থাৎ আর্থিক লেনদেনে জড়িত । আশ্বাস পেয়ে আসরে নেমে পড়ল পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা যে কিনা অযোগ্য হিসেবে পূর্বেই চিহ্নিত কলকাতা হাইকোর্ট দ্বারা । সেই সাথে তৃণমূলের যুব শাখা সেই পুরনো অভ্যাস মতো ধিক্কার মিছিল করতে নেমে গেল যেমন অতীতেও গেছে আর কি! চিটফান্ড কেলেঙ্কারির পড়ে “আমরা সবাই চোর” লেখা ব্যানার পরে মিছিল অথবা অভয়া আন্দোলনের সময়ে we want justice বলা অবস্থান । অবশ্য সেক্ষেত্রেও বড় রকমের কেলেঙ্কারি হয়েছিল, নিজেই নিজের কাছে ‘জাস্টিস’ চাইতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী “নির্যাতিতার ফাঁসি চাই” বলে ফেলেছিলেন…
মুখ্যমন্ত্রীর ইন্ডোর বৈঠক থেকে শিক্ষকদের চাকরি বহাল রইল না বরখাস্ত হলো তার কোনো রূপরেখা পাওয়া গেল না, এবার ‘স্বেচ্ছাসেবক’ শিক্ষকরা কি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বর্তমান কন্ট্রাকচুয়াল কর্মীতে পরিণত হলেন? বোঝা গেল না। আবার তাঁরা যদি তাঁদের পুরনো কর্মক্ষেত্রে ফিরে যান মানে মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস মেনে, তবে আদালত অবমাননার মতো গুরুতর অপরাধ করে ফেলবেন, সন্দেহ নেই । এমতাবস্থায় শিক্ষকরা তাঁদের ন্যায্য দাবিতে আন্দোলন করলে পুলিশ দিয়ে পিটিয়ে, ‘লাথি’ মেরে সবক শেখানো হলো ঠিকই কিন্তু বাংলার শিক্ষিত সম্প্রদায় কে যে ২০২৬-এ ‘সততা’র পাঠ আর পড়ানো যাবে না সেই সত্যও প্রতিষ্ঠা পেল । তাই মালদা জ্বলছে, মুর্শিদাবাদে দাঙ্গায় মৃত্যু হয়েছে তিনজনের।
অর্থাৎ ভর্তুকি ও দাঙ্গার যুগপৎ সহযোগিতায় চুরি,দুর্নীতি ও তোলাবাজি থেকে নজর ঘোরানো যাচ্ছে । এও আর এক ‘থ্রেট কালচার’ । আমাদের ভোট না দিলে জীবন দুর্বিষহ করে দেব! আর এভাবেই সাম্প্রদায়িক শক্তিকে রোখার নামে ভুল জুতোয় পা গলাচ্ছে “আলির উপর কালি না কালির উপর আলি” ভাবা বাংলা । আর এই ফর্মুলায় বারবার ভোটে জিতে যাওয়ার ‘সিলসিলা’ চলছিল ।”সহসা ঘুমের তল্লাট ছেড়ে শান্তি পালাল” মেয়েদের রাত দখলের দাবিতে । কেঁপে গেল সরকার, তথ্য প্রমান বিনষ্ট করা সত্ত্বেও বিচার কিন্তু দ্রুত এগোচ্ছে । যদিও ‘জাস্টিস’ আজও অধরা!
“মাস্টারমশাই আপনি কিছুই দেখেননি” বলা বাংলায় বুকে লাথি খাওয়া শিক্ষক “জন সিংহের ক্ষুব্ধ নখর” । বাঙাল ভাষায় “লাত্থায় সিধা করুম” খুব কমন ডায়লেক্ট সেটারই প্রয়োগ হয়েছে, জানেনই তো “ওরা যত বেশি জানে তত কম মানে” তাই লাঠ্যৌষধি, তবে এর মধ্যেও “অনাহারে বড় ক্লেশ/ চাটাতেই সাক্সেস” বলা লোকও আছে। তারাই দিন শেষে সংখ্যাগুরু । সব শেষে প্রতিবেদকের অভিজ্ঞতা এই বলে যে আপনি যদি স্বেচ্ছাশ্রম দেন এই সরকার আপনাকে সবচেয়ে বেশি ‘বুলি’ করবে । হে শিক্ষক আপনার কানে গীতার বাণী শোনাবে তৃণমূলের সিকি দুয়ানি নেতাও “কর্ম করে যাও ফলের আশা ব্যতিরেকে” । অতএব সাধু সাবধান “লাথির রাজ্যে সবই অনুপ্রেরণাময়/ শিক্ষাব্যবস্থা যেন ফেলে দেওয়া চটি”!