কবিতায় সুনৃতা রায় চৌধুরী

বাইশে শ্রাবণ
সেই শ্রাবণের বাইশে বৃষ্টি ছিল না
খর রৌদ্রে পুড়ছিল ধরণী
নক্ষত্র পতনের নিদারুণ শোকে
শ্রাবণ বুঝি তুলেছিল তার কর্তব্য
যে দেবোপম শরীর কিছুক্ষণ আগেও ছিল
এক দেব দুর্লভ আত্মার আধার
জীর্ণ বসনের মত রইলো পড়ে
আত্মা দিলো পাড়ি রাতের রেলগাড়ির মতো
কোন্ ‘নিদ্রার পারে’ ‘পরিচয়হারা দেশে’
মানুষের আবেগ কখন সভ্যতার সীমা লঙ্ঘন ক’রে
নৃশংস হয়ে উঠে কলঙ্কিত করেছে কলুষ স্পর্শে
সদ্য পরিত্যক্ত সেই দেহকে।
গভীর শোক নাকি মানুষকে পাথর করে দেয়
এক্ষেত্রে শোক প্রকাশের নামে যা হয়েছে
তাকে কি বলে?
উন্মত্ততা, বর্বরতা, অবিমৃষ্যকারিতা?
কোন্ সুরে বাঁধা পড়ে কবির দিন অবসান বেলা?
স্মারক সংগ্রহ করার এই কি রীতি?
দাহ হলোনা তাঁর সাধের শান্তিনিকেতনে
পেলেন না ছেলের হাতের আগুন
বিপুল ভীড়ের বাধা তাঁকে যেতে দেয়নি
স্মরণ হয়নি কোনো চৈত্রের শালবনে
শেষ চাওয়া আর শেষ পাওয়ার তুমুল ব্যবধানে
না জানি কত বেদনা রয়ে গেল সংগোপনে
সেই শ্রাবণের বাইশে বৃষ্টি ছিল না
আকাশের রবি এই দৃশ্য দেখে শিউরে উঠে
শ্রাবণের মেঘকে ডেকে বলেছিল
তার মুখ ঢেকে দিতে
অগণিত মানুষের বাষ্পাকুল দৃষ্টিও
এই দৃশ্যকে ঝাপসা হতে দেয়নি
সেই শ্রাবণের মাটি ভিজেছে চোখের জলে
ত্রপিত মেঘ ঢাকেনি আকাশ
প্রতিটি শ্রাবণ আজও কাঁদে
সেই পাপে, সেই গ্লানিতে,
সেই শোক প্রকাশের লজ্জায়
জাতির আত্মধিক্কারে।