• Uncategorized
  • 0

কথা সাগরে মৎসকন্যা (ধারাবাহিক) – শম্পা রায় বোস

পুরী ভ্রমণ

(প্রথমেই বলেছিলুম এবারের পুরী যাওয়ার অনুভূতি একদম অন্যরকম। আজ শুরু করলাম সেই জগন্নাথ দর্শনের কথা নিয়ে আমার এবারের পুরী ধামে যাওয়ার গল্প)

ডাক্তারের চোখে চোখ রেখে বলেছিলাম সামনের শুক্রবার (৭/৩/২০২৫) আমার পুরীর টিকিট কাটা আছে ভগবান দর্শনে যাব। আমাকে যেতেই হবে এটা আমি কিছুতেই ক্যানসেল করতে পারব না সে যা হয় হোক আমার। ফিরে এসে আপনার সব কথা শুনব।

খুব বড়ো ডাক্তার। মুখে এতটুকু মিষ্টতা নেই। রোগীর সঙ্গে কোনরকম আগঢাক না রেখেই স্পষ্ট কথা বলেন এবং ঠিক টা ঠিক বলতে এতটুকু গলা কাঁপে না তার। কঠিন থেকে কঠিনতম কথা অনায়াসেই রোগীকে বলার ক্ষমতা রাখেন এই নামকরা অর্থোপেডিক সার্জন ডঃ মানবেন্দ্র নাথ বসু মল্লিক। এইরকম পার্সোনালিটির একজন ডাক্তারকে তাঁর দুজন এসিস্ট্যান্ট এর সামনে যখন কথাটা বলেছিলাম কি জানি কিভাবে যেন বলে ফেলেছিলাম একটুও ভয় না পেয়ে। এম আর আই, এক্সরে
রিপোর্ট দেখার পর ডাক্তার বাবুর কথা শুনে আমি তখন মরণাপন্ন রোগীর মতো হয়ে গেছি। ঘাম হচ্ছে প্রেসার বাড়ছে বুঝতে পারছি। এতটাই হাঁকাচাকা খেয়ে গেছি যে মাথাটা কেমন ফাঁকা হয়ে গেছে,, কি করব কি ভাবব কিছুই বুঝতে পারছি না। কিন্তু তবুও কিভাবে যেন ঢোঁক গিলে শুকনো গলাটা ভিজিয়ে প্রচন্ড সাহসের সঙ্গে কথাটা বলেই ফেলেছিলাম।ভেতর থেকে সাহস যে কে জুগিয়েছিল সে কথা তো সবাই জানে। মনে হল কে যেন বলিয়ে নিল কথাটা।
আমার বলার মধ্যে এতটাই দৃঢ়তা ছিল যে ডাক্তার বাবু প্রথমটা একটু যেন থমকে গিয়েছিলেন। প্রেসক্রিপশনটা ছুঁড়ে বলতে পারেন নি যে যা খুশি তাই করুন। উল্টে উনি প্রচণ্ড অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে খুবই মৃদু স্বরে বললেন, ঠিক আছে যেটা ভালো বুঝবেন করবেন আমি আর কি বলব কিন্তু মনে রাখবেন একমাস ডান পা মাটিতে ফেলা যাবে না। ফেললে অপারেশন অনিবার্য আর না ফেললে আপনার হাঁটুর কচকচি জোড়া লেগে গেলেও যেতে পারে। না লাগলে তখন অন্য পথেই হাঁটব।
আমি বললুম জগন্নাথ দর্শন করব সেই কবে থেকে অপেক্ষা করে আছি পা উনিই সামলাবেন। তাঁকে দর্শন করলে আর তাঁর ভোগ খেলে আমি ঠিক ভালো হয়ে যাব ডাক্তার বাবু। একদিনের জন্য তো যাব ফিরে এসে আপনি যা বলেছেন সেটাই করব আমি।

মনে মনে আরও বললুম ডাক্তার বাবু,, তাঁকেই যদি না দর্শন করতে পারি তাহলে আমার এই পা সারিয়ে কিই লাভ? তাঁর কাছে যাব তাঁকে দর্শন করব এইজন্যই তো পা টাকে সারাতে চাইছি। তাই বলে টিকিট ক্যানসেল করে ,, তাকে দর্শন না করে একমাসের জন্য নির্বাসনে যেতে পারব না। পা এর যা অবস্থা হেঁচড়ে হুঁচড়ে ঠিক তাঁর কাছে পৌঁছে যাব। একমাসের জন্য প্রায় একদম বেড রেস্টে থাকা কি মুখের কথা? এনথ্যু পাব কি করে তাঁকে দর্শন না করে আসলে?

ডাক্তার কে টা টা করে আমি ভেতরে ভেতরে একটা অসম্ভব আত্মবিশ্বাস নিয়ে বন্ধু কাকলিকে সঙ্গে করে বাড়ির পথে হওনা দিলাম। দাঁত চেপে পায়ের ব্যাথা সহ্য করে আবারও মনে মনে বললুম দর্শন আমি করবই তাই যেতে আমাকে হবেই,,,,,,জয় জগন্নাথ

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।