• Uncategorized
  • 0

|| অণুগল্প ১-বৈশাখে || বিশেষ সংখ্যায় শম্পা রায় বোস

মেমেন্টো

ছোট্ট মেমেন্টোটা বুকে জড়িয়ে রাজেশ্বরী ছুটল রবীন্দ্রসদন মেট্রো স্টেশনের দিকে। যে করেই হোক বর অফিস থেকে আসার আগেই তাকে বাড়ি পৌঁছাতে হবে।
তাড়াহুড়োতে কাউকে বলেও আসতে পারল না। আজ জীবনানন্দ সভাগৃহে কবিতা পাঠের আসরে গিয়েছিল রাজেশ্বরী।
এই সব অনুষ্ঠানে সকলের অমতে একটু জোর করেই যায় সে। এত বছর বিয়ে হয়ে গেছে এখন একটু নিজের মতো করে বাঁচতে ইচ্ছে করে তার।
মেমেন্টো টা একবার দেখে আবার জড়িয়ে নেয়।
সুপ্রভাতের কথাগুলো কানের কাছে বাজতে থাকে।
বাড়িতে এত জঞ্জাল বাড়ালে তো মুশকিল। বাড়িটা তো জঞ্জাল করেই ছাড়লে এখন ফ্ল্যাটটাকে যে মনের মতো সাজাব তারও উপায় নেই। দুটো একটা ঠিক আছে যাহোক ম্যানেজ করা যায়। সারা জীবনে পেতেই থাকবে এসব। এত রাখার জায়গা কোথায়?
কী যে করবে রাজেশ্বরী বুঝতে পারেনা। সাহিত্য পাড়ায় কবি হিসেবে একটুআধটু নাম আছে তার। বাড়ি থেকে বেরোনোটা অনেক কমিয়ে দিলেও মাসে একদুবার তো কোনো না কোন পত্রিকা প্রকাশ অনুষ্ঠানে যেতেই হয়।
রাজেশ্বরীর একমাত্র ভালোবাসার জায়গা বলতে এই নন্দন পাড়া। অবশ্য সেকথা জানিয়ে কথা বাড়াতে চায় না সে। সুপ্রভাত মনে করে কবি মাত্রেই চরিত্রহীন। কবিতা কবিতা করে মেয়েদের সঙ্গে ফস্টিনস্টি করা।
রাজেশ্বরীকেও সন্দেহ করে সুপ্রভাত। বুড়ো বয়েসে চুলকানি।
তখন বড্ড নোংরা মনেহয় মাল্টি ন্যাশানাল কোম্পনির সিনিয়র ম্যানেজার সুপ্রভাতকে।
চোখ ভিজে আসে। আজও হাতে একটা মেমেন্টো।
এসময় বড্ড কষ্ট হয় বাপ মা মরা অনাথ রাজেশ্বরীর। একটা নিজের বাড়ি যদি থাকত দেওয়ালে সুন্দর করে বাবা মার ছবি টাঙিয়ে রাখত। আর এই জঞ্জাল গুলো ওদের ছবির নিচে একটা টেবিলে সুন্দর করে সাজিয়ে রাখত।
সুপ্রভাতের আজকাল খুব জ্বালা হয়েছে। ফ্ল্যাটে অফিস পার্টি হলে এইসব জঞ্জাল গুলো ওয়াড্রোবে লুকিয়ে রাখতে হয়। কতটা যে সময় নষ্ট হয় ওর! আবার পার্টি শেষ হলে ইচ্ছে না থাকলেও এইসব জঞ্জাল গুলোকে আবার সাজিয়ে রাখতে হয় তাকে।
দুই মেয়ের বাবা যে!
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।