কথা সাগরে মৎসকন্যা (ধারাবাহিক) – শম্পা রায় বোস

এবারের পুরী ভ্রমণ ২

পড়ে যাওয়া আমার কুষ্টিতে যে বড়ো বড়ো করে লেখা আছে সে আমি এবং আমার পরিচিতজনেরা সবাই জানে। তাই এটাকে আমি আর বিশেষ পাত্তা দিই না। সেই ছোট্টোবেলা থেকে আমি পড়ে পড়ে এই এতদূর এলাম।
ছাদে উঠতে গিয়ে পাঁচিল থেকে, ফুল পাড়তে গিয়ে ফুলগাছ থেকে, তাছাড়া আম, লিচু পেয়ারা পাড়তে গিয়ে, সাইকেল চালাতে গিয়ে, মোটরসাইকেলের পেছনের চাকায় পা ঢুকে গিয়ে কতবার পড়েছি! এছাড়া মাঠেঘাটে ফুটবল খোকো ছোঁয়াছুঁয়ি খেলতে গিয়ে পড়েছি,,হাত পা ভেঙেছে, থুতনি ফেটেছে ঠোঁট কেটে গেছে সেলাই পড়েছে। ভয়ে যন্ত্রণায় হাউমাউ করে কান্নাকাটিও করেছি তবু আমি শান্ত হয়ে বসে থাকতে পারিনি কোনদিন। এই সব ব্যাপারে বাবা মাকে খুবই টেনশনে রাখতাম আর এখন যেমন রাখছি আমার সিংহ মশাইকে।
সে সবসময়ই আতঙ্কে থাকে এই বুঝি আমি পড়ে গেলাম। রাস্তায় সুন্দর হাঁটছি কথা বলতে বলতে হঠাৎ করেই ধপ করে মুখ থুবড়ে পড়ে গেলাম। সামনে গর্ত ছিল বা কোন সময় আবার বাম্পার খেয়ালই করিনি। মেয়েদের কে স্কুল থেকে আনতে গিয়ে কতবার যে পড়েছি নিজেই হাতটাত ঝেড়েই উঠে পড়ে ছুটতাম স্কুলের দিকে। পরে বাড়ি এসে যে আর্নিকা টার্নিকা খাব সেসব ছিল না। খুব গা ব্যাথা করলে চুপচাপ একটা ক্যালপল খেয়ে নিতাম রাতে শোয়ার সময় কাউকে কিছু বলতামই না। জানি বললে ঝাড় খাব সিংহর কাছে। সহানুভূতির বদলে বকাঝকা আমার মনেহয় কারোরই সেটা ভালো লাগে না।

মনে আছে বেশ একবার বঁটিতে বাঁ হাতের কব্জির উপর দিকটা বিচ্ছিরি ভাবে কেটে গেল। চর্বি টর্বি বেড়িয়ে একাকার কাণ্ড।
কলের জলের মতো রক্ত পড়া দেখে মা আমার কব্জিটা বেশ করে চেপে আগে দু গালে দু থাপ্পড় মেরেছিল। বাবা আসার আগেই। দুই গালে আঙুলের টকটকে দাগ নিয়ে মাকে আড়ি দেখিয়ে বাবার সাইকেলের সামনের তিন কোনা সিটে বসে হাসপাতাল গিয়েছিলাম। ফেরার পথে লজেন্স গালে নিয়ে ফোঁপাতে ফোঁপাতে বাড়ি এসেছিলাম। পাঁচটা সেলাই পড়েছিল। তখন কার সময় ফারাক্কায় স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এমনকিছু উন্নত ছিল না। অবশ ছাড়াই সেলাই হত। বাপরে লাগত। ঐ মোটা ছুঁচ আর মোটা সাদা সুতো উফ্,,,,
এখন মাঝেমধ্যে মনে হয় এই যে এত পায়ে ব্যাথা ঐ পড়ে যাওয়ার ফলে কিনা কে জানে। বুড়ো বয়েসে সব ব্যাথাই তো ফিরে আসে শুনেছি।

তা যা বলছিলাম
আমার কাছে এই ডাক্তার বাবু একরকম ডাক্তার ভগবান বলা চলে। সেই ২০১৭ থেকে পরিবারের বিভিন্ন বিপদে উনি একরকম ভগবানের মতো আমাদের পাশে আছেন। ডঃ এম এন বাসু মল্লিক। যাঁকে এই মুহূর্তে পাওয়া যাবে এপোলো গ্লেনেগেলস্
হাসপাতালে। তিনি কতটা বিখ্যাত আদৌও বিখ্যাত কিনা এসব তর্কে আমি যেতে চাই না। আমার কাছে উনি বিখ্যাত। তাঁর চিকিৎসায় যে যাদু আছে তা আমি এবং আমার মতো অনেকেই সেটা বিশ্বাস করেন। আমার সঙ্গে ব্যক্তিগত ভাবে যোগাযোগ ২০২০ তে।

২০২০ সালে আমি একবার বাড়িতেই পড়ে গিয়ে বাঁ হাঁটুতে বিভৎস ভাবে চোট পেয়েছিলাম এবং উনি যেভাবে আমাকে সারিয়ে তুলেছিলেন তার জন্য আমি তাঁর কাছে সারাজীবন কৃতার্থ থাকব। সেবার তার চিকিৎসার গুণে আমি খুব অল্প দিনেই সুস্থ হয়ে গিয়েছিলাম। অবশ্য তার সঙ্গে আমার জগু দাদারও দয়া ছিল,, কৃপা ছিল। তাঁর কৃপা ছাড়া তো কিছুই সম্ভব নয়,,,,,,,

২০২৪ এর নভেম্বরের শেষের দিকে বন্ধু বর্ণার সঙ্গে গল্প করতে করতে পড়লাম মুখ থুবড়ে। বাড়ির বারান্দায়। এবার ডান পায়ের হাঁটু,,,,
বিশেষ লাগেই নি আমি ঝেড়েঝুড়ে উঠে ছাদে গিয়ে পায়চারি করতে করতে গল্পটা চালিয়েই গেলাম আরোও এক ঘন্টা সেরকম কোন ব্যাথাই টের পেলাম না। কিন্তু মেয়ের বিয়ের দিন যত এগোতে লাগলো যত ছুটোছুটি শুরু হল ব্যাথাও বাড়তে লাগলো একটু করে। কিন্তু তখন আমার এপোলো যাওয়ার সময় নেই। আর তাছাড়া তখন মেয়ের বিয়ের চিন্তা নিজের জন্য ভাবার সময় কোথায়? আসতে আসতে পা ফুলতে শুরু করল। বনহুগলি তে অর্থোপেডিক হাসপাতালে দেখালাম। ঐ যাহোক ব্যাথা ঊনিশ বিশ। তবে পায়ের অবস্থা দেখে আমি বুঝতে পেরেছিলাম ডাঃ বাসু মল্লিকের কাছে আমায় যেতেই হবে। এবং উনি রেস্ট এ থাকতে বলবেন। মেয়ের বিয়ে শেষ হতেই ছোট বেলার বন্ধুর (শম্পা) ছেলে বিয়ে ,,, সেটা কাটতেই আমার স্কুলের বন্ধু স্বাতী শিলিগুড়ি ফেরার আগেই ফটাস করে এপোলোতে ফোন করে ডাক্তার বাবুর এপয়েন্টমেন্ট নিয়ে নিল। ২৬/২/২০২৫ বুধবার বন্ধু বর্ণার সঙ্গে চললুম এপোলো ডাক্তার দেখাতে। ততদিনে কিন্তু আমার পুরী যাওয়ার টিকিট হয়ে গেছে,,,,, জয় জগন্নাথ ❤️

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *