সেদিন সানি বাড়ি ফিরেছিলো ক্লান্ত হয়ে। একটু বেশিই ক্লান্ত। তার বেকার কবি বাবার চোখ এড়ানো কঠিন কাজ। কাজ নেইতো কোনো ওই কবিতা লেখা ছাড়া, তাও যদি কোনো সম্পাদক কৃপা করে লেখা চান তবেই। তাই তার মা মরা ১৭ বছরের ছেলেকে দেখেন খুঁটিয়ে। তার সদ্য যৌবনের গলা ভাঙাটা বাবার কানে বেজেছিলো কিনা জানা নেই, তবে ইদানিং ছেলের গালে ব্রণ বাড়ছে সে বিষয়ে ওয়াকিবহাল বাবা নিজেই কিনে এনে দিয়েছিলেন নিম ফেসওয়াশ। সেই বাবার আজ চোখে পড়েছে ছেলের ক্লান্তি। তবে পরিতৃপ্ত মুখ।
ফেসবুকে ছেলের প্রোফাইল আবিষ্কার করতে সেদিন প্রায় রাত কাবার করে দিয়েছিলেন বাবা। কী সব ভুলভাল নামে প্রোফাইল খোলা! নামের ধরণ কী! Antiseptic Sunny
পরের দিন সানি স্কুল থেকে ফিরে ব্যাগটা বিছানায় টান মেরে ফেলে ওয়াশ রুমে ফ্রেশ হতে গেলো। কিছুক্ষণ পর ফ্রেশ হয়ে বেড়িয়ে দেখলো বাবা সেজেগুজে জীবনান্দ সভাগৃহে যাচ্ছেন কবিতা পড়তে।
রাত তখন ১.১০ বিবস্বানবাবু উঠলেন। ছেলের লকড বেডরুমের দরজার তলা থেকে আলো বেড়তে দেখেলেন। তার চোখ চকচক করে উঠলো। কবি বিবস্বান জীবনে অনেক কবিতা লিখেছেন, অনেক কবিতার জন্য বা তার লেখা কাব্যগ্রন্থের জন্য অনেক পুরস্কারও পেয়েছেন, আগেরবারেতো একাডেমীও পেলেন। একাডেমী পাওয়ার সময় এমন তার হয়নি। আজ তার বুক ধুকপুক করছে। ধীর পায়ে এগিয়ে গেলেন দরজার কাছে। চোরের মত চোখ রাখলেন দরজার লকের ফুটোতে। উঠলেন এবং একগাল প্রশান্তির হাসি হেসে নিজের ঘরে গেলেন। তারপর এক গ্লাস জল খেয়ে খাটে হেলান দিয়ে ডায়রি লিখতে বসলেন। সেদিন কয়েকটা যে এলোমেলো লাইন ডায়েরির পাতায় লিখেছিলেন কবি বিবস্বান মুখার্জি তা এরকম —
সানির ক্লান্তিটা আমার ছোটবেলাকে মনে করিয়েছিলো। ওই পরিতৃপ্তির ক্লান্তি আমারো যে বড্ড চেনা।
ছেলে যে ফেসবুক করে সেটা আমি আগেই ওর মামার থেকে শুনেছিলাম। আমার ছেলে ফেসবুক করে এটা সে আমায় কেন জানায়নি তা বুঝতে পেরেছিলাম তার ফেসবুক স্টেটাস দেখে- What A Fucking Relaxation! Enjoyed pornography…
বুঝেছিলাম ছেলে ব্যাচে পড়তে না গিয়ে বন্ধুর বাড়ি থেকে ফিরেছিলো। আর তার ক্লান্তি কীসের সেটা ভালোই বুঝেছিলাম। ভাগ্যিস ওর প্রোফাইটা লকড ছিলো না…
আজ স্কুল থেকে ফিরে ও ব্যাগটা রেখে ওয়াশ রুমে গেলে আমি নিজে হাতে ওর ব্যাগে একটা চটি বই (নিষিদ্ধ বই) ঢুকিয়ে দিই। ছেলে নিশ্চই কোনো স্কুলফ্রেন্ডের কীর্তি ভেবেছে। একটু আগে লকের ফুটোতে চোখ রেখে আমার সানিকে বড় হয়ে যেতে দেখলাম। শান্তি লাগছে। পড়ার ব্যাচটা আর যেন ও মিস না করে। আমি এটাও চাই না ওর স্বাভাবিক যৌবনে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে। আবার এটাও চাইনা তার যৌনতা তার নিজের পড়া বা কাজের জায়গা দখল করুক। আমি যে ওর বাবা…
ডায়েরি লেখা শেষ করে ফেসবুকে অন হয়ে কবিবাবু একটা স্টেটাস পোস্ট করে সেদিন শুয়ে পড়লেন। কবি বিবস্বানের ফেসবুকে সেদিন যে স্টেটাসটা জ্বলজ্বল করছিলো—