জলিদা অর্থাৎ বসু পরিবারের দ্বিতীয় প্রজন্ম জলধর প্রথম প্রথম নিজের অবস্থার সঙ্গে শাঁখের করাতের তুলনা করতেন । তবে বিবাহের এক দশক পার করে তিনি এখন পোড় খাওয়া পত্নীনিষ্ঠ স্বামী ও মাতৃভক্ত পুত্র সন্তান । দুর্দান্ত ব্যালান্স করে চলেন । কদাচ অফিসের কাজ বাড়ীতে আনেন নতুবা কখনো বাপের সঙ্গে কখনো বেটার সঙ্গে দাবা খেলেন । বাকী সময়টা পাড়ার ক্লাবে গিয়ে ক্যারাম পেটান নয়ত গল্পের বইয়ে মুখ গুঁজে বসে থাকেন । ভুলেও সংসারের খুটিনাটি বিষয়ে নাক গলাতে যান না । টিভি দেখা নিয়ে মা বৌয়ের দ্বৈরথ তুঙ্গে ওঠে । বাংলা চ্যানেল মায়ের দু’ চক্ষের বিষ । উনি কপিল শর্মা শো , তারক মেহেতা কা উল্টা চশমা আর কৌন বানেগা কড়োরপতির অন্ধ ভক্ত । নাতি নাতনীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কার্টুন নেটওয়ার্ক দেখেন । মিষ্টার বিন কে পেলে তো কথাই নেই । আর আছে বিদেশী লাইফ স্টাইল ম্যাগাজিন । ফ্যাশন ও কুকরী শো ওনার ভীষণ প্রিয় । ওদিকে বৌ চায় সাহিত্যের সেরা সময় দেখতে । সা রে গা মা পা লিটিল চ্যাম্প থেকে চোখ ফেরাতে পারে না । কেয়া শেঠের এ্যারোমা থেরাপি আর সাহা টেক্সটাইলের শাড়ী যখন দেখানো হয় তখন তাকে সোফা থেকে নড়ায় কার সাধ্য ! ড্রয়িং রুমের টিভির রিমোট কার দখলে থাকবে সেই নিয়ে পারলে প্রায় পাঞ্জা লড়াই শুরু হয় হয় এমতবস্থায় জলিদা চরম সতর্কতায় সে সমস্যার অভিনব সমাধান করেন । নতুন একখানি টিভি সেট বেড রুমের দেওয়ালে সেঁটে দিলেন । ব্যাস কেল্লা ফতে , ‘না রহেগা বাঁশ না বাজেগা বাঁশুরি’ । ডি টু এইচ কানেকশনের খরচ দ্বিগুণ হলো , তা হোক । সংসারে শান্তি বজায় রাখা সব থেকে জরুরী ।
দামুর অনুরোধে প্রতি তিন মাসে একবার বোলপুর আসতে হয় । শান্তিনিকেতনের লাল মাটিতে পা ফেলে ঘুরে বেড়াতে না পারলে তার দম বন্ধ হয়ে আসে যে ! বলা বাহুল্য দামু হল দামিনীর ডাক নাম । ঐ নামে একটা বাংলা সিনেমা আছে । যেখানে রঘুবীর যাদব নাম ভূমিকায় অভিনয় করেছেন । আর সে এক আধ পাগলা খ্যাপাটে চরিত্র । সব জানা সত্বেও নতুন বৌ মেনে নিয়েছে । কারণ ফুলশয্যার রাতে জলিদা খুব সোহাগ করে অন্যান্য সামগ্রীর সঙ্গে এই নামটি উপহার দেয় । সর্ব সমক্ষে অথবা বাবা মায়ের সামনে ঐ নামে ডাকার কথা কল্পনাই করা যায় না । তখন শুধুই ‘কৈ গো লাড্ডুর মা কোথায় গেলে ?’ এই দিয়ে কাজ চালাতে হয় । ওদিক থেকে উত্তর আসে ‘ওগো শুনছো আমি ব্যালকনিতে’ । প্রসঙ্গতঃ উল্লেখ্য জলি নামটি দামিনীর দেওয়া , মধুচন্দ্রিমার পাল্টা উপহার । সে যাই হোক বৌয়ের আব্দার রক্ষা করলে মায়ের আদেশ উপেক্ষা করা সম্ভব হয় না । নিক্কো পার্ক ইকো পার্ক , এ্যাকোয়াটিকা সাইন্স সিটি , ছুটির দিনে সুযোগ সুবিধা মতো ঢু মারতেই হয় । মোদ্দা কথা হলো মা হুজুগে মানুষ , হৈ হুল্লোড় খুব ভালো বাসে । দামু ঠিক তার বিপরীত এসব তার বিলকুল না পসন্দ ।
তবে উভয় ক্ষেত্রেই লাড্ডু বুন্দি কমন । কাজুর সঙ্গী হওয়াটা নির্ভর করে তার পড়ার চাপের ওপর । আরো একজন আছে যে মাঝে মধ্যে জুটে যায় দলভারী করতে । সে হলো লাড্ডু বুন্দির ভীষণ প্রিয় চাঁদুমামা । হ্যাঁ দামিনীর একমাত্র ছোট ভাই চন্দ্রচূড় । খড়গপুর আই আই টি থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং এর পাঠ শেষ করে সবে মাত্র একটা বহুজাতিক কোম্পানির ফার্মে যুক্ত হয়েছে । কিছু দিন চাকরী করার পর মাস্টার্স করার ইচ্ছে আছে ।
আবার যখন লম্বা ছুটি নিয়ে সপরিবারে বড়সড় ট্যুরে যাওয়া হয় তখনো বিভাজন রেখা স্পষ্ট হয়ে ওঠে । কোন অলৌকিক ক্ষমতা বলে দামীনি এক্সোটিক প্লেসে গিয়েও মন্দির খুঁজে বের করে ও ঢিপ ঢিপ করে প্রণাম করে তা স্বয়ং ঈশ্বরই জানেন ! এক্ষেত্রে বিউটি দেবীর বক্তব্য বেশ স্পষ্ট । পাহাড় জঙ্গল সমুদ্রে আসার কারণ প্রাকৃতিক শোভা উপভোগ করা , পূণ্য সঞ্চয় নয় । পুরী কাশী বৃন্দাবন এসব জায়গাকে তীর্থ ক্ষেত্র না ভেবে তিনি ঐতিহাসিক শহর ভাবতে পছন্দ করেন ।