• Uncategorized
  • 0

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সুদীপ পাঠক (পর্ব – ৯)

বুন্দি ও তার অলৌকিক চশমা 

এরপর যা অনিবার্য তাই হলো । বুন্দি সজোরে দুম দুম করে পা ফেলে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে গোঁসা করে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলো । ঠাকুমা বহু চেষ্টায় আদর করে মান ভঞ্জন করেছেন ও দুপুরের ভাত খাইয়েছেন । এখন সে ঘুমে অচেতন । মধ্যাহ্ন ভোজের পর আলস্য চেপে ধরে । কিন্তু দামিনীর হঠাৎ একটা খটকা লাগলো আর তন্দ্রা ভেঙে গেল । বুন্দি তখন পরপর কাজু আর চাঁদুর নাম করলো কেনো ? কিছু তো একটা কানেকশন আছেই । এদের মতলবটা কি ? কি ফন্দি আঁটছে এরা ? না জানা অব্দি শান্তি নেই । যেমন ভাবা তেমন কাজ । কোজাগরীর ঘরের দরজায় টোকা পড়লো । দরজা খুলতেই কাজুকে একটু যেনো অপ্রস্তুত বলে মনে হলো । চালাক চতুর মেয়ে সঙ্গে সঙ্গে সামলে নিয়ে বলল
– ওহ্ বৌদি এসো এসো । তোমার কথাই ভাবছিলাম । তুমি এসে ভালোই করেছো , অনেক কিছু বলার আছে তোমাকে ।
– তাই নাকি ! সত্যি ? আমার তো মনে হলো তুই অন্য কারকে এক্সপেক্ট করছিলিস ।
– এ্যাঁ হ্যাঁ ঠিকই বলেছো । আসলে তোমার কাছে বকুনি খেয়ে বুন্দি খুব আপসেট তো । তাই ভাবছিলাম বুঝি ও এসেছে ।
– কথা ঘোরানোর চেষ্টা না করে ঝেড়ে কাস । ব্যাপারটা কি ?
– কি যে বলো না তুমি বৌদি তার ঠিক নেই ! নতুন আর কি হবে ?
টেবিলের ওপর কম্পিউটার স্ক্রীনের দিকে হঠাৎ নজর পড়তেই দামিনী দেখতে পেলো সেখানে ভাসমান অবস্থায় হাসি মুখে চেয়ে আছেন শ্রীমান চন্দ্রচূড় বাবাজী । অর্থাৎ ভিডিও কনফারেন্স চলছে । চাঁদু সঙ্গে সঙ্গে বলল
– হাই দিদি কি করছিস রে ?
– করছি তোর মুন্ডু আর মাথা । চললাম বাবা মায়ের কাছে । সব ফাঁস করে দেবো ।
কাজু তৎক্ষণাৎ দামিনীর হাত চেপে ধরে বলল
– এক্সসাইটেড হচ্ছ কেনো বৌদি ? বসো না । বলছি তো ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে ।
– ওহ্ আচ্ছা বুঝেছি । তাহলে আমার অনুমান ঠিক । কি চক্রান্ত চলছে তোদের শুনি ?
এরপর শুরু হলো একটি ত্রিমুখি কনফারেন্স বা আলোচনা চক্র । উদ্যেশ্য দামিনীর মনের অন্ধকার দুর করা । অবশ্য দামিনী নিজে অধিকাংশ সময় শ্রোতার ভূমিকায় ছিল । প্রথমে কোজাগরী মানুষের চোখ ও দেখার থিওরি সম্পর্কে বলল । চোখের একেবারে সামনের অংশে রয়েছে কর্নিয়া , এটি একটি স্বচ্ছ আবরণ । সেটা ভেদ করে ভেতরে ঢুকতে পারলে আছে আইরিশ , বাইরে থেকে যে গোল চাকতিটা দেখা যায় । যেটির রং কালো , বাদামী , ধূসর , নীল , সবুজ হরেক কিসিমের হয়ে থাকে । আলো বাড়া কমার সঙ্গে এটা ছোট বড় হয় । যাকে প্রতিবর্ত ক্রিয়া বা রিফ্লেক্স এ্যাকশন বলে । এর ভিতর দিয়ে লেন্সের ওপর আলো পড়ে । সেই আলোকরশ্মি কনভারজিং পয়েন্টে মিট করে ও ইমেজ ফর্ম করে । লেন্সের পিছনে আছে ধাত্র বা প্লাজমা অর্থাৎ জলীয় অংশ । একেবারে শেষে রেটিনা যেখানে ছবি তৈরী হয় । এটা হলো আয়নার পারদের মতন । রেটিনা ডিটাচমেন্ট হলে দেখার ক্ষেত্রে প্রবল অসুবিধার সৃষ্টি হয় । এরপর অপটিকাল নার্ভ যা মস্তিষ্কে সংকেত বহন করে । চোখের পাওয়ার বেড়েছে মানে ফোকাসিং পয়েন্ট শিফ্ট করে গেছে । ব্যাস তার বেশি কিছু নয় ।
বয়েস বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় অধিকাংশ মানুষের এই রকম হয় । এর কারণ আই বলের আকর বা আয়তনের পরিবর্তন ঘটা । বাচ্ছাদের ক্ষেত্রে তুলনা মূলক ভাবে কম হয় । তবে হলে অস্বাভাবিক কিছু নয় । আমাদের বুন্দির ঠিক তাই হয়েছে । মারাত্নক দুশ্চিন্তা করার মতো কিছু নেই । রেটিনাতে দু’ ধরনের কোষ থাকে । রড এ্যান্ড কোন শেল , আলো ছায়া আর রঙের তফাৎ বুঝতে সাহায্য করে । অধিকাংশ তৃণভোজী চারপেয়ে জন্তুর চোখে কোন্ শেলের উপস্থিতি কম হওয়ার ফলে তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুনিয়াকে সাদা কালো হিসাবে দেখে থাকে । এছাড়া পারসিস্টেন্স অফ্ ভিশন বলে একটা প্রসেস আছে । মজার ব্যাপার হলো সেটা মানুষের কম তাই সে সিনেমা উপভোগ করতে পারে আর প্রাণীদের বেশী তাই তারা পারে না।

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।