এরপর যা অনিবার্য তাই হলো । বুন্দি সজোরে দুম দুম করে পা ফেলে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠে গোঁসা করে ঘরের দরজা বন্ধ করে দিলো । ঠাকুমা বহু চেষ্টায় আদর করে মান ভঞ্জন করেছেন ও দুপুরের ভাত খাইয়েছেন । এখন সে ঘুমে অচেতন । মধ্যাহ্ন ভোজের পর আলস্য চেপে ধরে । কিন্তু দামিনীর হঠাৎ একটা খটকা লাগলো আর তন্দ্রা ভেঙে গেল । বুন্দি তখন পরপর কাজু আর চাঁদুর নাম করলো কেনো ? কিছু তো একটা কানেকশন আছেই । এদের মতলবটা কি ? কি ফন্দি আঁটছে এরা ? না জানা অব্দি শান্তি নেই । যেমন ভাবা তেমন কাজ । কোজাগরীর ঘরের দরজায় টোকা পড়লো । দরজা খুলতেই কাজুকে একটু যেনো অপ্রস্তুত বলে মনে হলো । চালাক চতুর মেয়ে সঙ্গে সঙ্গে সামলে নিয়ে বলল
– ওহ্ বৌদি এসো এসো । তোমার কথাই ভাবছিলাম । তুমি এসে ভালোই করেছো , অনেক কিছু বলার আছে তোমাকে ।
– তাই নাকি ! সত্যি ? আমার তো মনে হলো তুই অন্য কারকে এক্সপেক্ট করছিলিস ।
– এ্যাঁ হ্যাঁ ঠিকই বলেছো । আসলে তোমার কাছে বকুনি খেয়ে বুন্দি খুব আপসেট তো । তাই ভাবছিলাম বুঝি ও এসেছে ।
– কথা ঘোরানোর চেষ্টা না করে ঝেড়ে কাস । ব্যাপারটা কি ?
– কি যে বলো না তুমি বৌদি তার ঠিক নেই ! নতুন আর কি হবে ?
টেবিলের ওপর কম্পিউটার স্ক্রীনের দিকে হঠাৎ নজর পড়তেই দামিনী দেখতে পেলো সেখানে ভাসমান অবস্থায় হাসি মুখে চেয়ে আছেন শ্রীমান চন্দ্রচূড় বাবাজী । অর্থাৎ ভিডিও কনফারেন্স চলছে । চাঁদু সঙ্গে সঙ্গে বলল
– হাই দিদি কি করছিস রে ?
– করছি তোর মুন্ডু আর মাথা । চললাম বাবা মায়ের কাছে । সব ফাঁস করে দেবো ।
কাজু তৎক্ষণাৎ দামিনীর হাত চেপে ধরে বলল
– এক্সসাইটেড হচ্ছ কেনো বৌদি ? বসো না । বলছি তো ইম্পর্ট্যান্ট কথা আছে ।
– ওহ্ আচ্ছা বুঝেছি । তাহলে আমার অনুমান ঠিক । কি চক্রান্ত চলছে তোদের শুনি ?
এরপর শুরু হলো একটি ত্রিমুখি কনফারেন্স বা আলোচনা চক্র । উদ্যেশ্য দামিনীর মনের অন্ধকার দুর করা । অবশ্য দামিনী নিজে অধিকাংশ সময় শ্রোতার ভূমিকায় ছিল । প্রথমে কোজাগরী মানুষের চোখ ও দেখার থিওরি সম্পর্কে বলল । চোখের একেবারে সামনের অংশে রয়েছে কর্নিয়া , এটি একটি স্বচ্ছ আবরণ । সেটা ভেদ করে ভেতরে ঢুকতে পারলে আছে আইরিশ , বাইরে থেকে যে গোল চাকতিটা দেখা যায় । যেটির রং কালো , বাদামী , ধূসর , নীল , সবুজ হরেক কিসিমের হয়ে থাকে । আলো বাড়া কমার সঙ্গে এটা ছোট বড় হয় । যাকে প্রতিবর্ত ক্রিয়া বা রিফ্লেক্স এ্যাকশন বলে । এর ভিতর দিয়ে লেন্সের ওপর আলো পড়ে । সেই আলোকরশ্মি কনভারজিং পয়েন্টে মিট করে ও ইমেজ ফর্ম করে । লেন্সের পিছনে আছে ধাত্র বা প্লাজমা অর্থাৎ জলীয় অংশ । একেবারে শেষে রেটিনা যেখানে ছবি তৈরী হয় । এটা হলো আয়নার পারদের মতন । রেটিনা ডিটাচমেন্ট হলে দেখার ক্ষেত্রে প্রবল অসুবিধার সৃষ্টি হয় । এরপর অপটিকাল নার্ভ যা মস্তিষ্কে সংকেত বহন করে । চোখের পাওয়ার বেড়েছে মানে ফোকাসিং পয়েন্ট শিফ্ট করে গেছে । ব্যাস তার বেশি কিছু নয় ।
বয়েস বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় অধিকাংশ মানুষের এই রকম হয় । এর কারণ আই বলের আকর বা আয়তনের পরিবর্তন ঘটা । বাচ্ছাদের ক্ষেত্রে তুলনা মূলক ভাবে কম হয় । তবে হলে অস্বাভাবিক কিছু নয় । আমাদের বুন্দির ঠিক তাই হয়েছে । মারাত্নক দুশ্চিন্তা করার মতো কিছু নেই । রেটিনাতে দু’ ধরনের কোষ থাকে । রড এ্যান্ড কোন শেল , আলো ছায়া আর রঙের তফাৎ বুঝতে সাহায্য করে । অধিকাংশ তৃণভোজী চারপেয়ে জন্তুর চোখে কোন্ শেলের উপস্থিতি কম হওয়ার ফলে তারা অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুনিয়াকে সাদা কালো হিসাবে দেখে থাকে । এছাড়া পারসিস্টেন্স অফ্ ভিশন বলে একটা প্রসেস আছে । মজার ব্যাপার হলো সেটা মানুষের কম তাই সে সিনেমা উপভোগ করতে পারে আর প্রাণীদের বেশী তাই তারা পারে না।