• Uncategorized
  • 0

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সুদীপ পাঠক (পর্ব – ৭)

বুন্দি ও তার অলৌকিক চশমা

…এর পিছনে যে কটা কারণ কাজ করছে তা নিম্নরূপ :
১. নাতি হাত ছাড়া হয়েছে । বৌমা তাকে নিজের মতন করে গড়ছে । বাচ্ছা ছেলের আলসেমি বংশের লজ্জা । তাই নাতনিকে দলে টানতে পারলে এক চালে বৌমাকে টেক্কা দেওয়া যাবে ।
২. একরত্তি মেয়ে কিন্তু সাংঘাতিক এনার্জি ! চড়ুয়ের সঙ্গে মিলে কতো রকম ডানপিটে কসরত যে শিখেছে ! স্কুল থেকে ইতিমধ্যেই বার পাঁচেক কমপ্লেন এসেছে , উফ্ ভাবলেই মনটা আনন্দে চাঙ্গা হয়ে ওঠে ।
৩. সুতরাং এই সেই মেয়ে যে পারিবারিক কলঙ্ক মোচন করতে পারবে এতে কোনো সন্দেহই নেই ।
৪. ব্যান্ডিট লাইক বেকহ্যাম সিনেমা দেখার ফলে ভেতরে দারুন অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে ।
৫. বুন্দির খেলার সঙ্গে নারীবাদ নারীমুক্তি নারীস্বাধীনতা নারীজাগরণ বৈল্পবিক আন্দোলন ও তার ভবিষ্যৎ এর প্রশ্ন জড়িয়ে আছে । সুতরাং তাকে খেলতেই হবে ।
যে দিন সকালে বুন্দি চড়ুইয়ের সঙ্গে খেলতে খেলতে বাতাবি লেবুতে শট মেরে পুজুরি ভটচাজ ঠাকুরের জানলার শার্শি ভাঙলো সেই দিনই বিকেলে নাতনির হাত ধরে বিউটিদেবী সটান গিয়ে হাজির হলেন নেতাজী সুভাষ স্পোর্টিং ক্লাবে । কোচ হর্ষবর্ধন সমাদ্দার প্রথমে কিছুতেই রাজী হচ্ছিলেন না । সেই চিরাচরিত যুক্তি ;
– ছেলেদের কোচিং ক্যাম্প মাসিমা ! সেখানে একটা মেয়ে কি করে শিখবে ? আর ছেলেদের সঙ্গে একটা মেয়ে খেলবেই বা কি করে ? তাও কি কখনো সম্ভব ?
অনেক অনুনয় বিনয় এর পরেও তিনি অনড় অটল । শেষ পর্যন্ত বিউটিদেবী নিজ মূর্তি ধারণ করতে বাধ্য হলেন ।
– তখন থেকে বলে যাচ্ছি কথা কানে যায় না তাই না ? এতোটুকু বাচ্ছার ছেলেমেয়ের তফাৎ কিসের শুনি ? সে সব হতে অনেক দেরী আছে । আমি ঠাকুমা আমি বলছি কোনো অসুবিধে নেই আর আপনি বড় বিজ্ঞ তাই না ? আপনি যেসব ছেঁদো যুক্তি খাড়া করতে চাইছেন সেগুলো পচে শুঁটকি মাছ হয়ে গেছে , বুঝলেন ? কে আপনার নাম রেখেছে আমি তার সঙ্গে দেখা করতে চাই । করে বলবো ভুল নাম রাখা হয়েছে । হর্ষবর্ধন নয় ওটা গোবর্ধন হলে উপযুক্ত হতো । এখনো যদি আমার কথা না শোনেন তাহলে আমি মহিলা কমিশনে অভিযোগ করবো । তখন বুঝবেন উওমেন্ট এম্পাওয়ারমেন্ট কাকে বলে ।
এর পর আর কোনো কথা চলে না । কোচ বাবাজীর প্যান্টুলুন ঢিলে হবার জোগাড় । তড়িঘড়ি এ্যাডমিশন নিলেন । ভেবেছিলেন থাকনা ক্ষতি কি ? এ্যাডমিশন ফি আর মান্থলি সাবস্ক্রিপশন তো পাওয়া যাবে । বুড়ির শখ হয়েছে নাতনি ফুটবলার হবে । ওহ্ বাপরে বাপ , হাসি চেপে রাখা দায় । ঐ তো লিলিপুটের মতো ছোট্ট একটা মেয়ে । পাঁচ নম্বর বলে শট মারতে গেলেই উল্টে পড়ে যাবে । তখন বুঝবে কত ধানে কত চাল । শখ উবে যাবে আর এমুখো হবে না । কিন্তু অবাক কান্ড ! পঁচিশ বছরের কোচিং লাইফে যা ঘটেনি তাই ঘটলো এবার । কোচ স্যার পুরো বেকুব বনে গেলেন । মাত্র এক বছরের মধ্যে মেয়েটা চোখের সামনে রিমারকেবল ডেভেলপমেন্ট করে দেখালো । ছেলেদের সঙ্গে সমান তালে পাল্লা দিয়ে সুপার ফাইন ফুটবল খেলে সে । বুন্দি এখন কোচ থেকে শুরু করে ক্লাবের প্রত্যেক সদস্যের নয়ণের মণি । যাকে বলে চেরি অন্ দ্যা কেক । কিন্তু
মুশকিল হলো ঐ মোটা ভারী ঢাউস চশমা । এই নিয়ে কি খেলা যায় ? হাজারটা অসুবিধে ।
বছর দু’য়েক আগে বুন্দি তার বাপের সঙ্গে পুকুরে নেমে হাঁপাই জুড়ছিল । জল পরিষ্কার রাখতে ক্লোরিন দেওয়া হয় । সাঁতার কেটে উঠতেই শুরু হলো চোখ জ্বালা । লাল টসটসে হয়ে জল পড়তে লাগলো । সেই সঙ্গে করকরানি ভাব , তিন বছরের শিশুর পক্ষে সহ্য করা কঠিন । তবু বুন্দি চিৎকার চেঁচামেচি কিছুই করে নি । ডাক্তার দেখাতেই সামনে এলো ভয়ঙ্কর তথ্য । দু’চোখেই পাওয়ার সাংঘাতিক , মাইনাস ফাইভ ! এছাড়া স্বাভাবিক দৃষ্টি ক্ষেত্রের প্রসারতা ব্যহত হচ্ছে । অর্থাৎ দু’পাশে যতখানি ওয়াইড এরিয়া কভার করার কথা সেটা হচ্ছে না । পরিভাষায় যাকে ভিশন চপ্পড হওয়া বলে । প্রতিরোধ করার এক মাত্র উপায় ঐ আতস কাঁচ জাতীয় বস্তু দিয়ে তৈরী চশমা পরা । না হলে ভিশন লস ঠেকানো সম্ভব নয়।
চলবে
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।