• Uncategorized
  • 0

ধারাবাহিক কিশোর উপন্যাসে সুদীপ পাঠক (পর্ব – ১০)

বুন্দি ও তার অলৌকিক চশমা

এরপর চন্দ্রচূড় সংযোজন করলো : মাছের চোখ প্রায় ১৮০ ডিগ্রি দেখত পায় । আবার ক্যাট ফ্যামিলির মেম্বার যারা যেমন চিতা বাঘ অথবা ব্ল্যাক প্যান্থার তারা যখন একাগ্র চিত্তে শিকারের সন্ধানে চুপি সাড়ে এগোয় তখন তাদের চার পাশের দৃশ্য ঝাপসা হয়ে গিয়ে শুধু লক্ষ্য বস্তু স্পষ্ট ও সূচীমুখ হয়ে ওঠে । এ এক অদ্ভুত ন্যাচারাল ফেনোমেনন । মানুষ এই গ্রহের সব চাইতে উন্নত প্রাণী হয়েও তার সেই ক্ষমতা নেই । সেই কারণেই ফোটোগ্রাফিতে যে এক্সট্রিম ওয়াইড এ্যাঙেল লেন্স ব্যবহার করা হয় তাকে ফিশ আই লেন্স আর বেশী রেঞ্জের টেলি ফোটো লেন্স কে ক্যাটেড আই অপটিক লেন্স বলে । দামিনী অবাক হয়ে বলল
– কাজু ডাক্তারি পড়ছে , ও না হয় এসব জানে বুঝলাম । কিন্তু তুই তো ইঞ্জিনিয়ার ! তুই এতো সব জানলি কি করে শুনি ?
চাঁদু অধৈর্য হয়ে বলল
– ওফ্ দিদি তোকে নিয়ে আর পারা গেল না । বোকার মতো কথা বলিস না তো ! এটা বেসিক ফিজিওলজি , কমন সাবজেক্ট । সবাইকেই পড়তে হয় ।
কাজু এবার দামিনীর পিঠে আলতো করে হাত রেখে বলল
– হ্যাঁ গো বৌদি চাঁদুদা ঠিকই বলেছে । আরো একটা ব্যাপার কখনো ভেবে দেখেছো কি ? এই যে আমরা চোখ মেললেই যা কিছু দেখি সবই থ্রি ডাইমেনশনাল অর্থাৎ ত্রিমাত্রিক । হাইট ডিস্ট্যানস ডেপথ আর পার্সপেক্টিভ এসবের ধারণা কি করে তৈরী হয় জানো কি ?
– কি ভাবে হয় রে কাজু ?
– কারণ আমাদের দুটো চোখ মাথার ঠিক সামনে পাশাপাশি অবস্থান করছে । তাই আমরা একই সময়ে একই সঙ্গে একই জিনিস দেখি । দুটো চোখের ছবি অর্থাৎ সংকেত মস্তিষ্কে পৌঁছায় । ব্রেন হলো ঠিক কম্পিউটারের সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিটের মতন । সেখানে দুটো আলাদা ইমেজ স্ক্যান করে প্রসেস করে তারপর সেটা মার্জ করে একটা ইমেজ তৈরী হয় । আর তাই আমরা গোটা পৃথিবীকে স্বাভাবিক ভাবে দেখে থাকি । অধিকাংশ চতুষ্পদ স্তন্যপায়ী প্রাণী তা সে তৃণভোজী হোক কিংবা মাংসাশী সবাই মোটামুটি এভাবেই দেখে । কিন্তু একবার ভাবো তো জলজ প্রাণী মাছ অথবা খেচর প্রাণী পাখি তাদের ক্ষেত্রে সিস্টেম কিন্তু পুরো উল্টো । তাদের মাথার দু’পাশে দু’টো চোখ থাকার ফলে একই সঙ্গে সম্পূর্ণ ভিন্ন ইমেজ দেখে । ওদের পেরিফেরাল অবজারভেশন কনসেপ্টটাই আলাদা ।
– তাই বুঝি ! এতো দিন এসব ভেবেই দেখিনি ! সত্যি তোরা কতো জানিস ! কতো শিখেছিস ! ভাগ্যিস বললি !
চাঁদু আবার অতুৎসাহি হয়ে বলল
– মানুষের দেখার পদ্ধতি এ্যাপ্লাই করে থ্রি ডি সিনেমা বানানো হয় তা জানিস কি ? পাশাপাশি দুটো ক্যামেরা রিগে আটকে শ্যুট করা হয় । তারপর দুটো ইমেজ মার্জ করা হয় । সেই ছবি প্রজেক্ট করলে খালি চোখে ঝাপসা দেখায় । সেই জন্যই তো থ্রি ডি সিনেমা দেখতে হলে স্পেশাল চশমা পরতে হয় । দু’ চোখে দু’টো আলাদা রঙের কাঁচ দেওয়া হয় । প্রাইমারি কালার তিনটে ভাগ করে দেওয়া হয় । যার ফলে একটা ইলিউশন সৃষ্টি হয় আর আমরা মুভি এঞ্জয় করি । বোঝা গেলো ?
– বুঝলাম কিন্তু এখন আমার কি করণীয় তাই বল ?
– তুই জনি ওয়েসমুলারের নাম শুনেছিস ?
– নারে , সে কে মস্ত বড় বিজ্ঞানী বুঝি ?
– ধুস , তুই না একটা হোপ লেশ ! আরে উনি হলেন নির্বাক যুগের হলিউডের বিখ্যাত সিনেমা টারজান দ্যা এ্যপম্যানের নায়ক । স্বয়ং সত্যজিৎ রায় বাল্যকালে এই ছবি দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন এবং সে কথা নিজের স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ‘যখন ছোট ছিলাম’ এ লিখে গেছেন ।
– বেশ সে না হয় হলো । কিন্তু তোর পয়েন্টটা কি ?
– ভেরি গুড কোয়েশ্চেন , মন দিয়ে শোন । ওনার প্রাথমিক পরিচয় হলো উনি একজন সাঁতারু । যেমন তেমন সাঁতারু নয় , অলিম্পিক গেমসের গোল্ড মেডেলিষ্ট । দুর্দান্ত চেহারার জন্য ফিল্মে অ্যাক্টিং করার ডাক পান । কিন্তু অনেকেরই যেটা অজানা তা হলো মুলার সাহেব প্রথম জীবনে অর্থাৎ ছেলেবেলায় খুব রুগ্ন দুর্বল আর ক্ষীণজিবি ছিলেন । প্রায়শই ভুগতেন । এই অসুস্থতা দূর করতে ডাক্তার সাঁতার কাটা প্রেস্ক্রাইব করেন । শুরু হয় সুইমিং , কিছু দিন যেতে না যেতেই সেটা নেশায় পরিনত হয় । অল্প সময়ের মধ্যেই সবাইকে টেক্কা দিয়ে সেরা হয়ে ওঠেন আর তারপর তো বাকীটা ইতিহাস । এতো কথা বলার উদ্দেশ্য হলো লাইফ ইজ আনপ্রেডিক্টেবল্ এ্যান্ড ফুল অফ্ সারপ্রাইজেস । উই নেভার নো হোয়াট গোইং টু বি হ্যাপেন্ড । কার জীবনে কখন টার্নিং পয়েন্ট আসে আর কে কোন ডেস্টিনেশন রিচ করবে জোর দিয়ে বলা যায় না ।
– খুব ভালো জ্ঞানগর্ভ লেকচার । শুনতে বেশ লাগছে , চালিয়ে যেতে পারিস ।
বেগতিক দেখে কাজু আবার হাল ধরতে উদ্যত হলো ।
– বৌদি তুমি যদি বারংবার বুন্দির সামনে ওর চোখের সমস্যার কথা উল্লেখ করতে থাকো তবে ওর আত্মবিশ্বাসে আঘাত লাগে তাই না ? ঐ টুকু বাচ্ছা চাপ সহ্য করতে পারবে কেনো বলো ? এর ফলে ও ভেতরে ভেতরে ভেঙে পড়ছে যে ! সুতরাং তোমাকে ইমিডিয়েটলি এটা স্টপ করতে হবে । ওকে সাহস জোগাতে হবে । বোঝাতে হবে ওর কিছুই হয় নি । ওর খেলা বন্ধ করলে চলবে না । খেলাই হলো ওর প্রাণ , সেটা কেড়ে নিলে ও যে প্রাণহীন হয়ে পড়বে ! তুমি কি তাই চাও বলতো ?
– না না একি অলক্ষুণে কথা ! আমি তো এভাবে ভেবে দেখিনি ।
চাঁদু ঠিক এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিল । সিলি পয়েন্টের সহজ ক্যাচ লুফে নিয়ে বলল…

চলবে

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *