সকালে ঘুম ভেংগে উঠে দেখলাম শীতকাল আমার বারান্দা টপকে এসে দরজায় দাঁড়িয়ে আছে। তাকে দরজা খুলে দিয়ে বললাম ভিতরে এসো। আর লেপ কম্বলদের বারান্দার গ্রিলে গরম হতে মেলে দিলাম।…. হঠাৎ মনে পড়ে গেলো, আমার এক বন্ধু আমি আসব বলে রোদ্দুরে কম্বল গরম করে রেখেছিল। তোমরা বলবে এ আর এমন কি? আমার কিন্তু ভারি মিস্টি লাগল মনে পড়ে। খুব খুসি হয়ে শীতকালকে বললাম ভিতরে এসো।
ছোট বেলায় শীত আসত গুটি গুটি। এক দিন ভোরে দেখতাম, মা মশারীর ওপরে পাতলা চাদর চাপা দিয়ে দিয়েছেন। পাখার হাওয়া কমতে কমতে রেগুলেটর কটাস করে বন্ধ।চোখ বুজে চেঁচাই, “বন্ধ করলে কেনো ”
মা বলেন, “আচ্ছা বেরিয়ে এসো তো চাদরের ভেতর থেকে,সোনা। ”
মশারীর বাইরে বেরোলেই, ওরে বাবা, ছ্যাঁক করে কামড়ায় ঠান্ডা। মেজেতে পা রাখলেই ইসসস।
মা ঘরে পড়ার হাওয়াই চপ্পল, আর গরম জামা পড়িয়ে দেন ফ্রকের ওপরে। স্কার্ফ বেঁধে দেন কান ঢেকে। হাতের কাছে স্কার্ফ না থাকলে, কত সময় মায়ের সুন্দর গন্ধ ওয়ালা কটস উলের ব্লাউজ দিয়েই কান গলা পেঁচানো হয় ব্রাশ করতে করতে। হাতে জল লাগলেই হিহি শীত। কোন রকমে মুখ ধুয়ে ছুট্টে খাটে ওঠা। ততক্ষনে খাটে সুন্দর নরম সাদা ওয়াড় দেওয়া ন্যাপথালিনের মিস্টি গন্ধ মাখা পরিস্কার লাল লেপ এসে গেছে। তার মধ্যে ঢুকে পড়তে কি মজা, কি মজা।
শীত মানেই পাটালী গুড়। লাল পায়েস। পাটি সাপটা, দুধ পুলি,ক্ষিরে চোবানো লাউয়ের পায়েস। শীত মানেই মায়ের বানানো কড়াইশুটির কচুরি।
মোদ্দা কথা, শীতকাল মানেই রস আর উষ্ণতার খোঁজে বেরিয়ে পড়া জীবন।
আর বেঁচে থাকার আনন্দ