নতুন বাড়িতে আসার পর থেকেই প্রতি রাতে কিছু না কিছু একটা অঘটন ঘটেই চলেছে । প্রথম রাতে মনে হলো রান্নাঘরে কে যেন থালা বাসন নাড়ছে । গ্লাস , বাটির শব্দ আসছে । ভাবলাম বিড়াল ঢুকেছে । গিয়ে দেখি কিছুই নেই । সবই ঠিকঠাক আছে ।
ঘরটা কেনার সময় মা বার বার নিষেধ করে বলে ছিলেন — কি হবে পুরানো ঘর কিনে ! কত দিন বন্ধ হয়ে পড়ে আছে । কি জানি কত কি বাসা বেঁধেছে ! তাছাড়া আমাদের কি ঘরের অভাব , না জায়গার অভাব ! কি দরকার আছে কেনার !
— বাড়িটি অনেক কম দামে পেয়ে যাচ্ছি । তাছাড়া ওটি শহরের কাছাকাছি । আমার যেমন যাতায়াতের সুবিধা হবে , তেমন ছেলে-মেয়েদের ভালো স্কুল-কলেজের পড়াশুনারও সুবিধা হবে।
মল্লিকা ঠিক করেই রেখেছে ওই ঘরটি নেবেই । ওর এক আত্মীয় যোগাযোগ করে দিয়েছে । বেশ কয়েকটি রুম , সামনে উঠান , পাঁচিল দিয়ে ঘেরা বাড়ি । মল্লিকার খুবই পছন্দের । এক রকম ওর ইচ্ছাতেই কেনা ।
প্রথম দিন থেকেই গভীর রাত হলেই রাকিটা খুবই চিৎকার করছে । একে নতুন জায়গা তার উপর আশেপাশে ফাঁকা কোনও শিয়াল বা কোনও জন্তু দেখে থাকতে পারে ! তবে চিন্তার বিষয় হলো এক সকালে যখন দেখলাম আমাদের রাকি বাড়ির পিছনে মরে পড়ে আছে । রাতে তো ছাদে ছিল ! তাহলে কি ছাদ থেকে লাফ দিয়ে পড়ে মরে গেল ! নাকি কেউ মেরে দিলো !
তড়িঘড়ি সে দিনই বাড়ির ভিতরে ও বাইরে লাগিয়ে দেওয়া হলো সিসি ক্যামেরা । খেয়াল করে দেখলাম দিনের বেলায় সব কিছু ঠিক থাকলেও রাতে অস্বাভাবিক কিছু ঘটছে । বাড়ির পিছনে যেখানে বেশ কয়েকটি ফলের গাছ আছে সেখানে যেন কেউ আকুশি দিয়ে ফল পাড়ছে । অথচ সিসি টিভিতে দেখছি কিছু নেই । তাহলে ! কি হচ্ছে ! নাকি সবটাই মনের ভুল !
এক রাতে মনে হলো এক শিশু কাঁদছে । তার পর মনে হলো বারান্দার দোলনায় কে যেন দুলছে । আশ্চর্য বিষয় যে দোলনা বাঁধা ছিল সেটি কে খুললো ! কে-ই বা দুলছে !
এ ঘটনার পর থেকেই আমিও রীতি মতো ভয় পেতে শুরু করলাম । পরের দিন সকালে আশেপাশের মানুষদের বিষয়টি বলতে তারা যেন আশ্চর্য হলো না । উল্টে প্রতিবেশী হালদার বাবু বলেন — বাড়িটি নেওয়ার আগে আপনার উচিত ছিল ভালো করে খোঁজ খবর নেওয়া । এ বাড়িটি বেশ কয়েক বার বিক্রি হয়েছে । কিন্তু কেউ বেশি দিন থাকতে পারেনি । কোনও না কোনও কারণে চলে গেছে ।
খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম যে মানুষটি বাড়িটি তৈরি করে ছিলেন তিনি একগুঁয়ে ও তান্ত্রিক মতো মানুষ ছিলেন । জায়গাটি ছিল ছেলেপোঁতা। মানে এলাকার কোনও শিশু মারা গেলে এখানে পোঁতা হতো । সে কারণে এ জায়গাটাকে এলাকার মানুষ ছেলেপোঁতা নামে চেনে ।
সে জন্য হয়তো আমাদের এখানে আসার পর আশেপাশের মানুষজন একটু অন্যভাবে দেখতো । আর আমরা ভাবতাম নতুন এসেছি বলে হয়তো ।
দুদিনেই বাচ্চা দুটি কেমন যেন অসুস্থ অসুস্থ মনে হচ্ছে । সে কারণে ঠিক করে নিলাম স্ত্রীর কথা শুনে যা ক্ষতি হয়েছে , হয়েছে, আর নয় । গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাবো । মল্লিকা ভেবেছিল শ্বশুর বাড়ি থেকে আলাদা জায়গায় গিয়ে নিজের মতো সংসার করবে সেটা আর হলো না । এমন সব ঘটনার সাক্ষী হয়ে আর কোনও কথা বললো না । বাধ্যমেয়ের মতো গ্রামের বাড়িতে ফিরে যাওয়াটা মেনে নিলো ।
দেরি না করে বেশ কয়েকজন লোক ডেকে সব কিছু গুছিয়ে নিতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো । বাড়ির সবকটি তালাচাবি দিয়ে যখন মেন গেটের তালা লাগাচ্ছি ঠিক তখনই মনে হলো বাড়ির ভিতর থেকে বেশ কয়েকটি বাচ্চা খিলখিল করে হাসছে ।