সাপ্তাহিক ধারাবাহিক উপন্যাসে সোনালি (পর্ব – ৬৬)

রেকারিং ডেসিমাল

কিসের সঙ্গে কি দিয়ে যে মালা গাঁথা হয়,  একমাত্র যিনি নিয়তির রোলে গান করতেন আগেকার যাত্রা পালায়, কিংবা আজকাল, ওই বিগার পিকচার আঁকার শিল্পী বলে পরিচিত, একমাত্র তিনিই হয়ত জানেন।

অপরিচিত পরিবারের একটা মেয়ে, গয়না শাড়ি কাজল লিপিস্টিক না ভালবেসে, খালি গল্পের বই, আর গান শোনা আর নাচের রেওয়াজের সাথে চাট্টি ফুল ভালবাসে, এমন উদ্ভুট্টি সখকে কেন একজন নিখাদ পূর্ব প্রজন্মের গিন্নি, যাঁর বাজার আর রান্না করাই মস্ত সখ, তিনি পাত্তা দেন ?
আর কেউ এ নিয়ে ভেবেও দেখে না। ইস্তক বউয়ের নতুন বর, এই গোলগাল গিন্নির ছেলেও এ নিয়ে এত মাথা ঘামায় না।

কিন্তু বাজারে সুপটু মোটাসোটা মানুষটি রিকসাওয়ালার হাতে বাজার, মাছওয়ালা গোবিন্দর হাতে মাছের ব্যাগ ইত্যাদি দিয়ে হাঁসফাঁশ করে সিঁড়ি দিয়ে দোতলায় উঠেই ফ্রিজে একখানা শালপাতার মোড়ক সযত্নে তুলে রাখেন। কিংবা বউয়ের ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে বিয়েতে পাওয়া পেতলের ফুলদানি আলো করে থাকে এত্ত ফুল।
আয়নার আলোয় ফুলের রঙ দ্বিগুণ হয়ে ফুটে ওঠে।
হাসি ক্রমশ চওড়া হয় বউয়ের মুখে।

বউ মা হবে প্রথম বার। সাত মাসে সপ্তামৃত খাওয়াতে চান শ্বাশুড়ি। মেয়ে বউদের নিয়ে ঘরোয়া অনুষ্ঠান। টানা বারান্দায় কুলো ডালা মাঙ্গলিক জিনিসপত্র।
বউকে একখানা লাল টুকটুকে জরির চৌখুপি কাটা তাঁতের শাড়ি দিয়ে সাজিয়েছেন শ্বশ্রুমাতা। ধমক দিয়ে বলে রেখেছেন, সেজেগুজে আসবি চানের পর । ভুতের মত না। কি বউ জুটেছে আমার । একটু পান খেলেও কি সুন্দর লাগে, কিন্তু দ্যাখো,  তার কি কোন সাজের ছিরি আছে? বউ  বাধ্য মেয়ের মত ঘট ঘট করে ঘাড় নেড়ে, লাল শাড়ি, হার, ঝুমকো, চুড়, শাঁখা পলা বাঁধানো, ঢিলে লম্বা বিনুনি সব গুনে গুনে প্রেজেন্ট প্লিজ করে ফেলে।
ঘর থেকে বেরিয়ে বারান্দায় আসতেই দেখে ফ্রিজ থেকে শালপাতার মোড়ক বেরোচ্ছে।
উঁকি দিয়েই দেখেই,  খুব ভালো হয়ে যায় মন।
এই সব গয়না শাড়ি জবরজঙ পরার দুঃখ সব মুছে যেয়ে হাসি ফোটে।
মোড়ক খুলতেই গন্ধে ম ম।
সাদা ধবধবে যুঁইফুলের মোটা গোড়ে মালা।
পিছন ফিরে দাঁড়িয়ে পরে বউ শ্বাশুড়ি মায়ের সামনে।
বকুনি একটা শোনা যায় বটে।

কি জ্বালা, এত কাজের মধ্যে এও আমায় লাগিয়ে দিতে হবে?  উফ!
ক্লিপ কই?  দেখি।

কখনো কখনো, বকুনির মধ্যে কত আল্লাদ লুকিয়ে থাকে, কত তৃপ্তি, মেয়ে মানুষ ছাড়া তার হিসেব জানে কি কেউ।

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।