• Uncategorized
  • 0

মার্গে অনন্য সম্মান এস কে হাসমত আলী (সর্বোত্তম)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার

সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব নং – ৫০
বিষয় – ফিরে পাওয়া / চলো পাল্টাই

ফিরে পাওয়া

সুমিতের বিবাহের কথাবার্তা চলছে। সুমিতের বাবা মা মেয়ে দেখতে গিয়েছেন দূরের এক গ্রামে। মেয়ে দেখে সুমিতের বাবা মা’র খুবই পছন্দ।মেয়ের বাবা নেই মা আছেন। মেয়ের নাম অষ্টমী।
মেয়ের মাকে বাড়িতে আসার আমন্ত্রণ জানান।মেয়ের মা দু’জন প্রতিবেশী কে নিয়ে যথাসময়ে সুমিত দের বাড়িতে হাজির হন।
মেয়ে পক্ষেরও সুমিতের বাড়ি ঘর পরিবেশ দেখে খুবই পছন্দ হয়।
সুমিতের বাবা – আচ্ছা দিদিভাই অষ্টমীর জন্ম তারিখটা একটু বলতে পারবেন ?
অষ্টমীর মা – আমতা আমতা করে বলেন আমি ঠিক তারিখটা বলতে পারবো না।
– সেকি আপনার একমাত্র সন্তান তার জন্ম তারিখ বলতে পারবেন না !
– ঠিকই বলেছেন অষ্টমী আমার একমাত্র সন্তান কিন্তু আমি অষ্টমীর জন্মদাত্রী নই।
– তাহলে অষ্টমীর বাবা মা কে ?
– আমি জানিনা,এক দুর্গাপূজার অষ্টমীর দিন আমি ওকে খড়গপুর স্টেশন থেকে পাই। তখন অষ্টমীর বয়স দুবছরের মধ্যে হবে।ও স্টেশনে খুব কান্নাকাটি করছিল। কেউই থামাতে পারছিল না,ও কিছু বলতেও পারছিল না। কিন্তু আমি সামনে যেতে ও চুপ করে গেল। তখন রেল পুলিশ আমাকে বললো বাড়িতে নিয়ে যেতে। আপনি তো জানেন আমি রেলের চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। কেউ বাধা দেয় নি। আমাকে বলেছিল যদি বাবা মা’র খোঁজ পাওয়া যায় তাহলে ফিরিয়ে দিতে। অষ্টমীর দিন পেয়েছিলাম বলে ওর নাম রেখেছি অষ্টমী।
আমার ও একটি পুত্র সন্তান হয়েছিল কিন্তু প্রসবের দিনেই আমার মদ্যপ স্বামী টাকার লোভে এক নিঃসন্তান দম্পতিদের বিক্রি করে দেন।
পরে শুনেছিলাম সন্তু ও রুমা ভট্টাচার্য নামে ঐ দম্পতি গাড়ি এক্সিডেন্টে পরলোকগমন করেছেন এবং উনার আত্মীয়রা সন্তান কে কোনো অনাথ আশ্রমে রেখে আসেন। আমি অনেক অনাথ আশ্রমে খুঁজেছি কিন্তু কোথাও ঐ নামের হদিস আমি পাইনি। এদিকে আমার স্বামীও অত্যাধিক মদ্যপানের ফলে লিভার ও কিডনি বিকল হয়ে পরলোকগমন করেন।
অষ্টমী কে পাবার পর আমি ওকে অবলম্বন করে বেঁচে আছি।
এই কথা শোনার পর সুমিতের বাবার চোখমুখ যেন কেমন হয়ে যায়। এবং বলেন – অষ্টমীর কি ডানদিকের কোমোর এর নিচে কোনো জরুল আছে ?
অষ্টমীর মা – হ্যাঁ আছে তো, আপনি কি করে জানলেন !
সুমিতের বাবা – আজ থেকে আঠারো বছর আগে আমার পরিবার এবং আরও অনেক আত্মীয় স্বজন অষ্টমীর দিনে কোলকাতায় ঠাকুর দেখতে গিয়েছিলাম ঠাকুর দেখে ট্রেন করে হাওড়া থেকে ফিরছিলাম। ট্রেনে প্রচুর ভিড় হয়েছিল।ভিড় ঠেলে কোনো রকমে বাগনান স্টেশনে নেমেছিলাম। আমার মেয়ে ঘুমিয়ে পড়ার জন্য সিটের এক কোণে বসিয়ে রেখেছিলাম। পরিবারের অনেক মানুষ একসঙ্গে থাকার কারণে ভেবেছিলাম কেউ না কেউ নিশ্চয়ই ওকে নিয়ে নেমেছে।নামার পর যখন সব বাচ্চা দের দেখলাম দেখলাম আমার মেয়ে শিউলি নেই। আমরা অনেক স্টেশনে খোঁজ করেছি কিন্তু কেউ কোনো খবর দিতে পারলো না। এই শোক এ আমার স্ত্রী মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।
অষ্টমীর মা – অষ্টমী যদি শিউলি হয়ে থাকে তাহলে তো এই বিবাহ সম্ভব নয়। দাদা অষ্টমী কে আমার থেকে কেড়ে নেবার না তাহলে আমি বাঁচতে পারবো না।
সুমিতের বাবা – এই বিবাহ হবে এবং অনেক ধুমধাম করে হবে।
অষ্টমীর মা – সেটা কি করে সম্ভব !
সুমিতের বাবা – দেখুন সুমিত আমার ঔরসজাত সন্তান নয়। আমি আমার স্ত্রীর মানসিক ভারসাম্য ফিরিয়ে আনার জন্য সুমিত কে অনাথ আশ্রম থেকে এনেছিলাম এবং সুমিতের বাবা মা’র নাম ছিল সন্তু ভট্টাচার্য এবং রুমা ভট্টাচার্য।
এবার বুঝলেন দিদিভাই সন্তু আপনার সন্তান আর অষ্টমী আমাদের শিউলি।
সামনের লগ্নেই ওদের বিবাহ সম্পন্ন করা হবে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।