পুনিতের থাকার ব্যবস্থা শ্রেয়ানের ঘরেই করা হল। পেটপুরে চা ও পকোড়া খেয়ে ও ঘরে চলে গেল ।আমার আজ আর বেরোনোর ব্যাপার নেই । পুনিত আমাকে বলে শ্রেয়ানের ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়লো । আমিও আমার ঘরের দরজা এঁটে দিলাম।ডায়েরিটা বের করে পাতা উল্টে উল্টে দেখলাম । খাতাটার সব কটা পাতা লেখা হয়নি । শেষের কয়েক পাতা ফাঁকা আর পেছন, থেকে কয়েকটা পাতা আবার ছেঁড়া হয়েছে । হয়তো কিছু লেখার জন্য । ডায়েরিটা আবার ড্রয়ারে ঢুকিয়ে রাখলাম।
ড্রয়ারের ভেতর হাতে লাগলো প্লাস্টিকের লেটার, মানে লুলিয়ার ছেলের খেলনা । পিঙ্ক কালারের A, গ্রীন কালারের X, আর রেড কালারের H। বের করলাম লেটার তিনটে ।হাতের মুঠোয় ধরেই বেখেয়ালে ল্যাপটপটা অন করলাম । লুলিয়ার ছেলের কথা ভাবছিলাম। বোবা আর কালা বাচ্ছা ছেলেটাকে কিছু লোক নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে।বাচ্ছারা সাধারণত সত্যি কথা বলে ফেলে তাই খুঁজে এই বোবা কালা ছেলেটাকে কাজে লাগিয়েছে।কি শয়তান লোকগুলো । লেটার গুলো টেবিলের ওপর রেখে ল্যাপটপ ফোল্ডারগুলো খুললাম । Finland, Quito,wales, xai Xai আর Zeroo। প্রিন্টারটা অন করে ফোল্ডারের ভেতরের PDF document গুলোর প্রিন্ট নিলাম । তারপর কাগজগুলির উপর নির্দিষ্ট ফোল্ডারের নামগুলো লিখে রাখলাম । কাগজ গুলো পাশাপাশি রেখে সামঞ্জস্য খোঁজার চেষ্টা করলাম । বুঝলাম যে রেক্ট্যাঙ্গুলার প্যাটার্নগুলো রিপিট হয়েছে।এখন সমস্যা হল এই রেক্ট্যাঙ্গলগুলো দিয়ে কি বোঝানো হয়েছে আগে তো বুঝতে হবে । এগুলো Woard না Letter বোঝাচ্ছে জানা দরকার । ধরা যাক হাইপোথেটিক্যালি এগুলো letter বোঝাচ্ছে । ইংলিশ লেটার গুলোর ‘e’ লেটারটা সব থেকে বেশি ব্যবহার হয়ে । Huffman coding বা Murray code. দুই নিয়মেই দেখা যায় সবথেকে বেশি ব্যবহার হওয়া লেটার হল ‘e’। প্যাটার্নগুলোর মধ্যে পার্থক্য খুব সামান্য হলেও এইভাবেই একবার চেষ্টা করতে হবে । সব থেকে বেশি যে রেক্টঙ্গেলটা পাওয়া যাবে সেটাকে e ধরতে হবে । একটা জিনিস মাথায় এলো F, Q, W, X, Z ফ্রিকোয়েন্সি লিস্ট এ অনেক পরে আসে । যেমন Q, X, এবং Z সবচেয়ে কম ব্যবহার হওয়া লেটার । F এবং W এই দুটোও লিস্টে বেশ পেছনে তবে Q, X, Z এর আগে । তার মানে F ও W বাকি তিনটির থেকে ব্যবহার একটু বেশি। এই দুটি লিস্টে পোনেরো ও ষোলো নাম্বার আছে । মনোযোগ দিয়ে লাইন বাই লাইন সবচেয়ে বেশি সংখ্যার রেক্ট্যাঙ্গুলার খুঁজতে লাগলাম। দেখলাম ব্যাপারটা বেশ কঠিন এবং ধৈর্য সাপেক্ষ । যাইহোক অনেক্ষন দেখার পর বুঝলাম।
এই চিহ্নটি সব থেকে বেশিবার আছে । তাহলে এই চিহ্নটিকে e ধরা যেতে পারে। কিন্তু এই চিহ্নটির মধ্যে আর আর e এর মধ্যে কি সম্পর্ক? একটু খানি যদি বা আলোর আভাস পাওয়া যায়
তারপর আবার অন্ধকার । তবু হাল ছাড়লে হবে না । তাছাড়া ভুলে গেলে চলবেনা আমি ‘মেনসার মেম্বার ছিলাম । আমার বাবা ডঃ চোঙদারকে চিঠিতে লিখেছলেন, আমার ওপর তার আস্থা আছে। আমাকে যে তার কথার মর্যাদা দিতে হবে । ভাবলাম প্যাটার্নগুলোকে ম্যাগ্নিফায়িং গ্লাস দিয়ে এনলার্জ করে কিছু পাওয়া যায় কিনা দেখা যাক ।
ম্যাগ্নিফায়িং গ্লাস খুঁজে না পেয়ে PDF পেজটাকে ‘জুম ‘করে দেখলাম । ক্লকওয়াইস ও অ্যান্টিক্লকওয়াইস দুভাবেও দেখলাম । কিন্তু বোঝা গেল না ।
এবার কি করবো ভাবতে লাগলাম। তারপর একটা সাদা পেজে e লিখলাম এবং তার পাশে লিখলাম সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত প্যাটার্নটা ।গভীর ভাবে নিবিষ্ট মনে কিছুক্ষন ভাবলাম ।না এবারেও কিছু মাথায় এলো না হঠাৎ হাতঘড়ির দিকে নজর পড়তেই দেখি সাতটা বাজে । তারমানে কখন সন্ধ্যে হয়ে গেছে খেয়ালি করিনি । ল্যাপটপ ব্ন্ধ করে দিলাম । কাগজ গুলো ড্রওয়ারে ঢুকিয়ে রাখলাম । লুলিয়ার ছেলের খেলনা লেটার গুলো রাখার আগে নিজেই ওগুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলাম । আর একটা সম্ভাবনার কথা মাথায় এলো। কিন্তু সেটা পরীক্ষা করার জন্য আরেকজনের সাহায্য দরকার । ড্রওয়ার ব্ন্ধ করে বেল বাজালাম । দরজায় নক হল। খুলে দিলাম । বাল্মীকি চা নিয়ে হাজির।,”আমি মুচকি হেসে বললাম এটার জন্যই তোমায় দেখছিলাম, একদম রেডি করে এনেছো?। মনে মনে ভাবলাম আনবে না কেন ও অনেক ঘু ঘু ব্যক্তি ও । আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল সত্যিকারের চাকরের এতো এলেম হয়না।মুখ ফুটে না বলতেই হুকুম তামিল করতে পারে যে সে একজন ট্রেন্ড স্পাই বা হিউমান সাইকোলজিতে দক্ষ এজেন্ট হওয়ায় স্বাভাবিক । কোনো বিমান সেবিকা যদি ঝি হয়ে ঢোকে বা কোনো নামি হোটেলের সার্ভিস বয় চাকর হিসেবে ঢোকে । তাঁদের সার্ভিস দেখেই বোঝা যাবে যে তাঁরা ঝি বা চাকর ক্লাসের নয় । আমি বোকা তাই দুবছর বাল্মীকির স্কিল দেখেও বুঝতে পারিনি ওর আসল পরিচয়। কখনো সন্দেহ করিনি । আমি জিগেশ করলাম পুনিত উঠেছে কিনা । ও কেবলমাত্র “না “বলে চলে গেল ।