• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক কোয়ার্ক ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ৬৯)

ঊনসত্তর

এতক্ষন ধরে ডায়েরির সব কথা মনে মনে গুছিয়ে নিলাম । বাবা আমার ওপর এত বড় একটা গুরু দায়িত্ব দিয়ে গেছেন । বাবার এতো বড় আবিষ্কার সময়ের নীচে চাপা পড়ে গেছে? বাবা তার সবচেয়ে বড় আবিষ্কারের নামকরোনো করেছেন আমার নামের সঙ্গে মিলিয়ে । Quarko র শেষ চারটে লেটার যে আমার নাম তা কেউ না বুঝলেও আমি বুঝেছি । কিন্তু এই ব্যাপারটা সব থেকে বেশি যন্ত্রনা দিচ্ছে আমাকে, যে বাবাকে মরতে হল । আমার এখন ধারনা হচ্ছে বাবা আত্মহত্যা করেনি । তাকে খুন করা হয়েছে । তবে এটাও হতে পারে বাবার এমন একটা যুগান্তকারী আবিষ্কারকে বাবা বাঁচাতে গিয়ে । নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন । এখন রাত আড়াইটে বাজে । তাই মনটাকে শান্ত করে ঘুমের চেষ্টা করলাম । কাল কি করবো বা কি করা উচিত এখনও ঠিক করিনি । সকালবেলা ঘুম ভাঙলো একটা বিশ্রী শব্দে । ঘরের মেঝেতে ভারি লোহার কোনো জিনিস টানলে এই আওয়াজ হওয়ার কথা । আমার সিক্সথ সেন্স আমাকে সতর্ক করে দিল আর আমি দরজা না খুলে কি হোল দিয়ে ব্যাপারটা কি দেখার জন্য চোখ রাখলাম । দেখি বাল্মীকি লোহার ট্রাঙ্ক টানতে টানতে মেইন দরজার কাছে নিয়ে যাচ্ছে । সেখানে দাঁড়িয়ে দুটো লোক । একজন বিদেশী এবং একজন দেশি । আমার গায়ের লোম খাড়া হয়ে গেছে । লোক দুটি লোহার ট্রাঙ্কটা তুলে নিয়ে বেরিয়ে গেল । বাল্মীকি দরজা ব্ন্ধ করে ঘুরে দাঁড়ালো । ওর চোখ আমার ঘরের দরজার দিকে । ও আমার অস্তিত্ব টের পাবেনা । আমার জালনার পাল্লা গুলো কাঠের হওয়ার ঘর পুরো অন্ধকার । আমি তাড়াতাড়ি পাটিপে টিপে এসে খাটে শুয়ে পড়লাম । বিছানায় শুয়েই বুঝলাম বাল্মীকি আমার ঘরের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে । সম্ভবত সেও কি হোল দিয়ে আমার ঘরের ভেতরটা দেখার চেষ্টা করলো । আমি বিছানায় ঘাপটি মেরে শুয়ে থাকলাম নিশ্চল হয়ে । ছায়াটা সরেগেলো ঠিক মিনিট দশেক পড়ে । বাল্মীকি দরজায় ধাক্কা দিয়ে আমাকে ডাকলো “দাদা আটটা বেজে গেছে উঠবেননা?”। আমি একটু অপেক্ষা করে বাল্মীকি দুচারবার ডাকার পর আমি দরজা খুললাম । দেখে বোঝার উপায় নেই যে সে এখুনি কি একটা অপকর্ম করে এলো । কি অসম্ভব ধূর্ত । আমিও ওকে কিছু বুঝতে দিলাম না । এখন ওর বাজার যাওয়ার সময় । আমি বললাম,”তুমি বরং বাজার চোলে যাও আমি আরেকটু ঘুমাই কাল অনেকরাতে ঘুমিয়েছি”। তুমি ফিরে এসে চা করে দিও । তুমি বেরোলে দরজা ব্ন্ধ করে শুই, এসে বেল বাজিও “। বাল্মীকি বাজারে যাওয়ার জন্য তৈরি হয়েই ডাকতে এসেছিল, তাই আমার কথা মতোই ও বেরিয়ে গেল । ও বেরিয়ে যেতেই আমি মেন গেটে ছিটকিনি এঁটে দিলাম ।
ভাবছি তালে বাল্মীকিও কি শত্রু পক্ষের লোক? আমি কি চারিদিকে শত্রুপক্ষের লোক দিয়ে ঘেরাও হয়ে আছি? নিজের অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস পড়লো । দেরি করা যাবেনা । বাল্মীকির বাক্স মালপত্র খুঁজে দেখে ওর আসল পরিচয় জানতে হবে । জিনিসপত্র ঘেটে সাবধানে যেখানে যা ছিল তেমন করে রেখে দিলাম । কিন্তু ওর পরিচয় কিছু জানতে পারলাম না । তবে যা দেখলাম তাও বিস্ময়কর । একটা পুতলির মধ্যে একটা ভোজালি আর কয়েকটা বুলেট । তাহলে বন্দুকটা কোথায় গেল হয়তো সঙ্গে করে নিয়ে গেছে ।ভাবছি কে এই বাল্মীকি? আর কিছু খুঁজে না পেয়ে বসার ঘরের সোফার কোনে এসে দেখলাম কিছু কালো ছাপ খুব সম্ভবত রক্তের ছাপ । মুছে দেওয়ার পরও কিছুটা রয়ে গেছে । সোফার এক কোনে খুঁটিয়ে দেখলাম জমা রক্তের ছাপ । দাগটা মোছার অনেক চেষ্টা করেছে তাও খানিকটা থেকে গেছে । তাহলে কাল রাতের আর্তনাদ আমি ভুল শুনিনি । তারমানে বাল্মীকি কাউকে খুন করেছে । বাড়ির মধ্যে কে ঢুকলো? বাল্মীকি তাকে খুন করলো কেন? মানুষ মারা কি তার কাজ? বাল্মীকি বছর পঞ্চাশের একজন লোক । বেশ গাট্টা গতটা কিন্তু বেটে । আমাকে এসে বলে আমার নাম বাল্মীকি । আমার বাড়ি মেদিনীপুর । ঢাকুরিয়ায় থাকার সময় ওকে পাই । ওকে নিয়ে আসে আমার হাউসিং এর কেয়ারটেকার ।অন্তত শেষ দুবছর ধরে ও আমার সাথেই আছে । ঘুনাক্ষরেও মনে হয়নি বাল্মীকি কাউকে খুন করে তার লাশ ট্রাঙ্কএ পাচার করতে পারে ।তবে তার চেয়েও দুশ্চিন্তার ব্যাপার হল ওর যে দুজন সঙ্গী দেখলাম তার মধ্যে একজন বিদেশি । হয়তো সেই ডাকাত জার্মান দলেরই । বাল্মীকি তাহলে ডাকাত দলের সঙ্গেও যুক্ত? কত কিছুই তো হতে পারে । কোনো কিছুই আর অসম্ভব নয় । হয়তো শ্রেয়ানকেও বাল্মীকি অপহরণ করিয়েছে বাঃ অপহরণের সঙ্গে যুক্ত । আমার মন কিছুতেই মানতে চাইছে না যে বাল্মীকির মতো একজন ভালোমানুষ, অন্তত দুই বছরের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে বলছি, এসব অপকর্মের সঙ্গে যুক্ত হতে পারে । আমার পরিস্থিতি খুব বিপজ্জনক তা বেশ বুঝতে পারছি । প্রথমে লুলিয়া তার পর বাল্মীকি । শত্রুপক্ষ খুব নিপুনভাবে ঘুঁটি সাজাচ্ছে আমাকে ঘিরেফেলার জন্য । আমার ঝুকি নেওয়া ঠিক হবে না । সঙ্গে বেআইনি অস্ত্র রাখা যে জেল হেফাজতে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট তা আমার জানা আছে । আর্যমকে ফন করবো বলে ফন তুললাম । রিং করেও আবার লাইন কেটে দিলাম । আর্যমকে ফোন করা কতটা যুক্তি সঙ্গত আগে ভেবে দেখি ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।