চোখ খুললাম। পেট্-টা চোঁ চোঁ করছে ক্ষিদেয়। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম বেলা এগারোটা বাজে। উঠে বসার চেষ্টা করলাম। সারা গায়ে অসহ্য ব্যাথা। হাতচ্ছড়াগুলো আমায় নিয়ে হুজ্জুতি করছে নিশ্চই। কোনরখমে উঠলাম। পেছেনে বালিশ দিয়ে খাটে হেলান দিয়ে বসলাম। বেল বাজালাম বাল্মীকির উদ্দেশ্যে। হাঁকাহাঁকি আমার পছন্দ নয় তাই এই ব্যাবস্থা। সে এল, ওকে একটু স্যুপ আর পাঁউরুটি দিতে বললাম। বাল্মীকি বেড়িয়ে গেল হুকুম তামিল করতে। সঙ্গে সঙ্গেই শ্রেয়ান ঢুকল ঘরে। “আরে, বস্ কনগ্র্যাটস” শ্রেয়ান আমার রুম মেট। মানে আমরা একটা অ্যাপার্টমেন্ট শেয়ার করে থাকি। ছেলেটা খুব ব্রাইট এখন ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে। আসলে ও দিল্লির প্রবাসী বাঙালি। যদিও এতদিনে ওর ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে যাবার কথা কিন্তু দুবার ইয়ার লস্ করে ও এখন ফাইনাল ইয়ারে। আমার বা ওর কারোরই আর্থিক অসুবিধার জন্য ফ্ল্যাট শেয়ার করে থাকার দরকার নেই। তবু আমরা স্বেচ্চায় একসঙ্গে থাকি। আমাদের আলাপ রাজধানীতে, দিল্লি থেকে কলকাতা আসার সময়। অল্প আলাপেই ফ্রিকোয়েন্সি এমন ম্যাচ করে গেল যে আমরা ঠিক করলাম দুজনে একই জায়গায় থাকব। আসলে আমি তখন একটা ফ্ল্যাট কেনার কথা ভাবছি। ও আগে মেসে থাকত। চেঞ্জ করার চেষ্টা করছিল। তাই ওই প্রোপোসাল দিল যে আমার নতুন ফ্ল্যাট ও যদি ভাড়া দিয়ে থাকে তবে আমার আপ্তি আছে কিনা। আমি রাজি হয়ে যাই। আসলে আমার আত্মীয়স্বজন তো কেউ নেই কলকাতায়। ও থাকলে একটা ভাল বন্ধু সঙ্গ পাবে তাই ওর প্রস্তাবটা বেশ আনন্দের সঙ্গেই গ্রহণ করেছিলাম। গত একবছর ধরে আমরাও এক সঙ্গেই আছি।
ওর কথার উত্তরে আমি বললাম, “কনগ্র্যাটস্ কিসের আবার? ও বলল, “এই যে দুটো রাত হানিমুনে কাটিয়ে এলে”। আমি বললাম, ধুর! কি যে হল কিছুই বুঝলাম না! সব ট্যান হয়ে বেরিয়ে গেল মাথার ওপর দিয়ে”। শ্রেয়ান একটু সিরিয়াস হয়ে বলল, “কি হল বল তো বস্? তোমায় দেখে তো মনে হচ্ছে বেশ ঝড় ঝাপটা বয়ে গেছে তোমার উপর দিয়ে”। আমি তখন সব ঘটনা ডিটেলে বললাম। শ্রেয়ান বুদ্ধিমান কিন্তু ওর সবচেয়ে বড় গুণ হল, সব ব্যাপারে ওর ঝোঁক এবং জ্ঞান। ভনিতা করা ওর চরিত্রে নাই। ইঞ্জিনিয়ারিং-কে নাকি ওর একটা আর্ট মনে হয়। ও বলে ওই মোটা মোটা বইগুলোর তথ্য ও ইকোয়েসন কপচে ইঞ্জিনিয়ারিং হয় না। যার কল্পনা শক্তি আর ইনোভেসন নেই যে ইঞ্জিনিয়ারিং-এর কি বুঝবে? এই শিক্ষা ও পরীক্ষা পদ্ধতি ওর পছন্দ নয়। যাই হোক ওর অনেক গুনের মধ্যে একটা হল যে ও খুব ভাল শ্রোতা। স্বভাবতই আমার সব কথা ও খুব মনযোগ দিয়ে শুনল। ধাঁধার কথা সব শুনে ও চিৎকার করে উঠল “ইমপসিবল্! হোয়াট দা হেল! এ কি করে সম্ভব”? বলেই ছুটে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।
বাল্মীকি ঘরে ঢুকল ধূমায়মান স্যুপ আর ব্রেড নিয়ে। সঙ্গে সঙ্গেই হুড়মুড়িয়ে শ্রেয়ানও ঘরে ঢুকে বাল্মীকিকে প্রায় ধাক্কা দিয়ে বলে উঠল “আরে সর রে মিকি”। বাল্মীকি আমারই রিক্রুট। ঢাকুরিয়ায় আমার আগের ভাড়া বাড়ি থেকেই ও আমার সঙ্গে আছে। শ্রেয়ানেরও ওকে পছন্দ হয়েছিল। তাই নতুন কেনা ফ্ল্যাটেও ওর চাকরি ভাল থাকল। শ্রেয়ান শুধু ওকে বলেছিল “আমার ক্লিন সেভড লোক ভাল লাগে। তাই বাল্মীকি তোমায় আমি শুধু মিকি বলে ডাকব”। মিকি অনেক কৌশলে হাতের খাবারগুলো পতন রোধ করল। শ্রেয়ান খাটের ওপর একটা খবরের কাগজ ছুঁড়ে ফেলল খবরের কাগজের হেড লাইনটা আমার চোখে পড়ল। “হালতুর হিন্দুস্থান ব্যাংক লুট”।