• Uncategorized
  • 0

সাপ্তাহিক কোয়ার্ক ধারাবাহিক উপন্যাসে সুশোভন কাঞ্জিলাল (পর্ব – ৬৫)

পঁয়ষট্টি

লাভ কিছু হবেনা ভেবে থাকলেও ভেতরে একটা চাপা কৌতূহল ছিল । তাই কিছুদিন পর ওর কাছে এই ব্যাপারে খোঁজ নিতে গেলাম । ডিপার্টমেন্টে ABC র চেম্বারে ঢোকার আগেই চেম্বারের ভেতর থেকে প্রচন্ড বাকবিতন্ডার আওয়াজ পেলাম । জার্মান ভাষায় ABC কেউ শাশাচ্ছে আর ABC তাকে জার্মান ভাষায় কিছু বোঝাচ্ছে। আমি ভাবলাম এই অবস্থায় আমার চেম্বারে ঢোকা অনধিকার প্রবেশ হবে । তাই ঘরের বাইরেই অপেক্ষা করতে লাগলাম । বন্ধ দরজার ওপাশ থেকে । সব কথাই কানে আসতে লাগলো । লোকটা একসময় ABC কে মেরে ফেলার হুমকি দিলো । আমার বেশ অস্বস্তি ও রাগ হচ্ছে । ওর মতো একজন নিরীহ মানুষকে কেউ এভাবে কথা বলতে পারে? হুমকি দিতে পারে? ব্যাপারটা বুঝেই উঠতে পারছি না । কানটা খাড়া করে শুনতে যদি কিছু বোঝা যায় । হঠাৎ ভেতরে দুমদাম শব্দ হতে লাগলো । লোকটা কি ABC কে মারছে? আমি আর ধৈর্য্য রাখতে পারলামনা ।ABC আমার বিশেষ বন্ধু । ওর বিপদ হোলে আমি উপস্থিত থেকেও কিছু না করতে পারলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না । তাই যা ভাবে ভাবুক আমি দরজা ঠেলে ABC র চেম্বারে ঢুকে পড়লাম। চেম্বারে ঢুকে দেখি দানবের মতো চেহারার একজন সাদা চামড়ার লোক টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে । আর ABC টেবিলের অন্য পাশে নিজের চেয়ারে বসে আছে । বুঝলাম যে মারা মারি হয়নি । হয়তো দানবটা উত্তেজনার বসে সজোরে টেবিল চাপড়েছে ।। ওরাও আমাকে দেখে অবাক হয়ে গেছে ।ABC উঠে দাঁড়াল আর সাদা চামড়ার লোকটা বিকৃত ভাবে আমায় দেখে বির বির করতে করতে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল ।
লোকটা চলে যেতেই ABC স্বাভাবিক ভাবে আমাকে বসতে বলল। আমি বসেই লোকটার পরিচয় জানতে চাইলাম । কি নিয়ে বাকবিতনণ্ডা হচ্ছিলো তাও জানতে চাইলাম । আসলে আমার আর ABC র মধ্যে যা সম্পর্ক তার মধ্যে কোনো গোপনীয়তা নেই । ABC আমাকে বলল যা তা হল, ও যে অ্যালকেমি সোসাইটির মেম্বার সেই সোসাইটি দুভাগ হয়ে গেছে । একদল প্রাচীনপন্থী ও গোড়া । আর একদল ভিন্ন মতাবলম্বী তাই তারা বিদ্রোহী । প্রথম দল সাবেকি রয়্যাল অ্যালকেমি সোসাইটি আর দ্বিতীয় দল নব গঠিত সোসাইটি অফ অ্যালকেমি মাস্টার্স । দ্বিতীয় দলটি যেন সর্বহারাদের দল । এই দলে যারা আছে । তাঁদের বেশির ভাগি ইহুদি, এশীয় ও আফ্রিকান । হয়তো শোষিত জাতের প্রতিনিধি । মনে হয় হলোকাস্টের শিকার, কিংবা পোলিশ রিফিউজি অথবা নেহাতই থার্ড ওয়ার্ল্ড কান্ট্রির হার হাভাতে । স্বভাবব্শত ABC এই দ্বিতীয় দলেই জয়েন করেছে। ABC র দ্বিতীয় দলে যোগ দেয়াটা প্রথম দল অর্থাৎ প্রাচীনপন্থীরা মেনে নিতে পারছে না ।কারণ ABC যার শিষ্য তিনি প্রথম দলের একজন মহারথী । ব্যাপারটা অনুধাবন করলাম বটে কিন্তু মনে মনে আমার হাসিও পেল। হায় রে! স্বপ্ন বিলাসী পাগলদের মধ্যে আবার ভাগাভাগি । যাইহোক যে জন্য আমি গিয়েছিলাম । সেই ব্যাপারে ABC কে জিজ্ঞাসা করলাম ।ABC বলল যে আমার অনুমান আর পরীক্ষা একেবারে সঠিক । রক্তের সেই পদার্থ তারও অচেনা । কিন্তু হলপ করে বললো পদার্থ টি কোনো ভাবে দ্রব্য নয় তাই খাওয়ার মাধ্যমে শরীরে ঢোকেনি ।তাহলে হয়ে গ্যাসের মাধ্যমে শরীরে ঢুকেছে অথবা রোমকূপ দিয়ে ঢুকেছে । এক্ষেত্রে চামড়া দিয়ে ঢোকার সম্ভবনা বেশি । কারণ রোগীদের চামড়াতেও কিছু প্রতিক্রিয়া দেখা গেল । পদার্থটা হয়তো প্লাসমা স্টেট এ ছিল । চামড়ার সঙ্গে তার ভালোই কন্টাক্ট হয়েছে । ABC বলল ও ওই তিনজন রোগীর সাথে কথা বলতে চায় । ও বেশ উত্তেজিত কারণ নতুন এলিমেন্টের আবিষ্কারের গন্ধ পাচ্ছে ও । ABC আরও বলল এই নতুন এলিমেন্টের মলিকিউলার স্ট্রাকচার ও স্টাডি করে ফেলেছে । এর একটা মলিকিউল নাকি Q শেপ দিয়ে ব্যাখ্যা করা যায় । একটা মলিকিউলের পাঁচটা এটোমের চারটে গোলাকার মুক্ত আর ডানদিকের মাঝের টার সাথে আরেকটা যুক্ত । শুনে আমারো একটু এলিমেন্টের উৎস জানতে আগ্রহ হচ্ছে । আমি ওকে বললাম কাল বা যত তারা তাড়ি সম্ভব ওই তিনজন রুগীর যোগা যোগ হদিশ দিয়ে দেবো । এই সব কথা হয়ে গেলে আমরা অন্য ব্যক্তিগত আলোচনা করলাম । বুঝলাম ABC মোটেই ভালো নেই । ওর পার্সোনাল, কনজুগল, ও সোশ্যাল লাইফ সবই বেশ সংকটে আছে । ও যেন গুটিয়ে গিয়ে বিজ্ঞান চর্চার মধ্যেই ডুবে থাকতে চায় । একমাত্র ওর ছেলের কথা উঠলেই শরীরে প্রাণ ফিরে পায় ।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।