মার্গে অনন্য সম্মান ড.সুকান্ত কর্মকার (সেরা)

অনন্য সৃষ্টি সাহিত্য পরিবার 

সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব – ৬০
বিষয় – দোসর/সুখী গৃহকোণ / সমর্থন / জন্মাষ্টমী

সুখী গৃহকোণ

দুপুর একটা পেরিয়ে যেতেই কাঞ্চনা দুপুরের খাবার
নিয়ে হাজির হলো জমির ধারে। খরিপের শতাব্দী ধান কিছুদিন
আগেই জমি থেকে উঠে গেছে। এখন জমিতে সরষে চাষের
প্রস্তুতি চলছে। অগ্রহায়ণ মাসের হালকা শীত বাতাসের গায়ে
সবে শিহরণ জাগাতে শুরু করেছে।
সকাল থেকে কাজ করতে করতে সহদেবের পেটের
খিদেটা চনমন করে ওঠে। কাঞ্চনা এসেছে দেখে সে উঠে আসে
জমি থেকে। জমি থেকে একটু দূরে পুকুরে হাত ধুয়ে আসে।
আজ কাঞ্চনা একটু বেশি যত্ন করে রেধেছে। বাড়িতে লাগানো
পুঁই শাক আর ডিংলি দিয়ে ঝোল রান্না করেছে। গ্রামের পাড়ায়
বিক্রি করতে আসা চুনো মাছ কিনে ঝাল বানিয়েছে। আজকের
বিশেষ দিনে একটু ভালো-মন্দ না খেলে কি ভালো লাগে!
বছরের বেশির ভাগ দিনই তো নুন মাখা পান্তা ভাত পেঁয়াজ,
কাঁচালঙ্কা দিয়ে চিবানো। আজকে যে ওদের কুড়ি বছরের
বিবাহবার্ষিকী, সেটা কি সহদেবের মনে আছে ? সহদেব
আসতেই কাঞ্চনা পরম যত্নে ভাত বেড়ে দেয়।
সহদেব একটু আবাক হয়েই খেতে শুরু করে। বলে
ওঠে, “কাঞ্চনা, আজ তুমি বড়ো ভালো রান্না করেছো।” কাঞ্চনা
মুখ টিপে শুধু হাসে। বলে ওঠে, “সবটুকু ভাত খেয়ে নেবে।
ফেলে দিও না।” কাঞ্চনা জানে সহদেব তার ঐটুকু জমিতে
ফসল ফলানোর জন্য হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে, যাতে কিনা দুটো
পয়সা ঘরে আসে। ছেলেটা অনেক কষ্ট করে পড়াশুনা চালায়,
এবার মাধ্যমিক দেবে। পাড়ার একজনকে ধরে পড়ানোর দায়িত্ব
দিয়েছে। তাকেও মাস গেলে সামান্য মাইনে দিতে হয়। তাই
পরিশ্রম তো করতেই হবে।
সহদেবের খাওয়া হলে কাঞ্চনা উঠে পড়ে, ছেলেটা একা
বাড়িতে আছে। তাছাড়া তাকেও বাড়ি গিয়ে খেতে হবে। স্বামীকে না
খাইয়ে সে কোনদিনই খায় না।
সহদেব কাজ শেষ করে একটু তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরে
আসে। তারপর বেরিয়ে যায়। বেলা ছোট হয়ে আসছে। ঝুপ করে
সন্ধ্যা নেমে আসে গ্রামের বাড়িগুলোর ওপর। সন্ধ্যা পার করে
সহদেব ঘরে ফিরে আসে। ধীরে ধীরে রাত গাঢ় হয়। পড়া শেষ
করে ছেলেটা শুতে চলে যায়। সহদেব শুতে যাবার আগে
ঘরের দাওয়ায় কাঞ্চনাকে ডাকে।
কাঞ্চনা কাছে আসতেই তার হাতে তুলে দেয় একটা
চাঁপা হলুদ রঙের ডুরে শাড়ি। কাঞ্চনা বিস্মিত হয়ে বলে ওঠে,
“হঠাৎ আমাকে শাড়ি কিনে দিলে ?”
সহদেব শাড়িটা খুলে কাঞ্চনার গায়ে চাপিয়ে দিয়ে বলে
“আমি ভুলিনি যে আজ আমাদের কুড়ি বছরের বিয়ের দিন।
এবারের ধান বেচে যে টাকা পেয়েছিলাম, তার থেকে তোমার
কাপড়ের টাকাটা সরিয়ে রেখেছিলাম। আজকের সন্ধ্যাবেলার
হাট থেকে কিনে আনলাম। তোমার পছন্দ হয়েছে ?”
কাঞ্চনার চোখের কোণ আনন্দে ভিজে যায়। আঁকড়ে
ধরে শাড়িটা নিজের বুকে। অনুভব করে ভালোবাসার গন্ধটা
আজও অমলিন তার ছোট অভাবী কুটিরে।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।