চিঠি -তে শমিত কর্মকার

শ্রীচরণেষু বাবা,
দীর্ঘদিন পর তোমাকে আবার চিঠি লিখছি। এখন তো ফোনের যুগ ফোনেই সব কথা বলা হয়ে যায়। কিন্তু বাবা চিঠির মাধ্যমে নিজের আবেগটা ফুটে ওঠে তুমি তো তখন কাছে থাকো না। আজ দীর্ঘদিন হলো আমি অনেক দূরে পশ্চিমবঙ্গ থেকে। তুমি কেমন আছো? আর তোমার বৌমা আর পুচকু? তোমার কথা সবসময়ই মনে পরে তাই আজ চিঠিতেই সে কথাগুলো লিখছি। ফোনে তো সব বলতে পারি না । জানো তো তুমি আমি লেখালেখি করি, এইমাত্র শারদীয় সংখ্যার জন্য দুটো গল্প লিখে খেতে যাচ্ছি। তোমার খাওয়া কি হয়ে গেছে। ছোটবেলায় তোমার ঘরের দেওয়ালে টানানো সেই নাটকের ছবিটা আজও মনে ভেসে ওঠে। তুমি সেই যে সলিল চৌধুরীর গ্রুপে নাটক করতে । কিন্তু তোমার চাকরি-সুত্রে অনেক দূর চলে যেতে হয় পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে। তুমি সব ছেড়ে নিজের ভালোবাসাকে বিসর্জন দিয়ে সংসার এবং আমাদের জন্যে তুমি সব ছেড়ে দাও।বাবা তোমার সেই নীল রঙের মোটা খাতাটা সেটাও আমার খুব মনে পড়ে তুমি যখন একা থাকতে চেয়ারে বসে সেই হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গানগুলো করতে, তুমি পাতার পর পাতা সব গান লিখে রেখে দিয়েছিলে। সেই গানগুলো শুনে মন ভরে যেত বাবা আমি সবসময়ই ভাবি তুমি ভালো থেকো। সাথে তোমার পুচকু বউমা এবং মা সকলেই জেনে ভালো থাকে। আমি সামনের সপ্তাহে বাড়ি ফিরব। শেষ লাইনটা লিখতে গিয়ে একটি ফোন আসে আমার ছেলের ফোন। আমি চমকে উঠি এত রাত্রে আমার বাবা ফোন করছে? না, এতো আমার ছেলের গলা। বাবা, দাদুভাই না ঠান্ডা হয়ে গেছে, কি বলছিস রে? বলতে বলতেই ফোনটা কেটে গেল। ঠিক দশ মিনিট পর আবার ফোন দাদুভাই আর নেই আমার চিঠি লেখাই থাকলো আর দেওয়া হলো না।
ইতি তোমার হতভাগ্য ছেলে।