বাল্মীকি যেমন স্বাভাবিক রয়েছে আমিও তেমনি স্বাভাবিক রয়েছি অন্তত বাইরের দিক থেকে ।বাল্মীকি অবশ্য এমনিতেই কথা কম বলে । আমিও যে খুব বলি তা নয় । তবে বাল্মীকি ও আমার মধ্যে কথা কমই হয়ে । আমার ব্রেকফাস্ট দেওয়ার সময় শুধু জিজ্ঞাসা করলো “দুপুরে খাবেন তো?”আমি ওর দিকে না তাকিয়ে বললাম “না, আমি একটু পর বেরিয়ে যাব ।”আমি বাল্মীকির অগোচরে ওকে আর চোখে দেখে যাচ্ছিলাম । গত দু বছরে ওকে আমার কোনো দিনের জন্য সন্দেহ হয়নি । কেমন নির্লিপ্ত এবং বোকা সেজে থাকে । কে বলবে এই লোক মানুষ খুন করতে পারে । কিন্তু গতরাতের আর্তনাদের শব্দকে বেমালুম অস্বীকার করা এবং আজ সকালের কি হোল দিয়ে দেখা সবকিছুর পর ওকে নির্দোষ ভাবার কোনো লজিক খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না । আমি বেলা দশটা নাগাদ বের হলাম । ট্যাক্সি ধরে সোজা প্রিন্সেপ ঘাট । ট্যাক্সি থেকে কাউকে ফলো করতে লোকেট করতে পারলাম না । অবশ্য না পাওয়ারই কথা । কারণ এরা প্রফেশনাল লোক দিয়ে কাজ করায় । বলা যায়না ট্যাক্সিওলাই হয়তো ওদের লোক । আমি ট্যাক্সি থেকে নেমে গেট দিয়ে ঢোকার সময় একবার চারপাশটা দেখে নিলাম । না কিছু বোঝা গেল না । আর্জমার কথা মতো লাইট পোস্ট এর নীচে গিয়ে কোনো চটি দেখতে পেলাম না । চিন্তিত হলাম । তাহলে আর্জমা কি আসেনি? নাকি ফোনে ওর কথা বুঝতে পারিনি । আইডিয়াটা বেশ ভালো লেগেছিল। আর্জমা যে এত শার্প হয়ে গেছে আমার ধারণা ছিল না । আশে পাশে একটু খোঁজ করা উচিত ।ঠিক তাই ল্যাম্প পোস্টের কাছে একটা ঝোপের মধ্যে একটা চটি দেখতে পেলাম । ডান পায়ের হাওয়াই চটি । নতুনই মনে হচ্ছে । কেউ মনে হয়ে চলতে চলতে লাথি মেরে ল্যাম্প পোস্টের কাছ থেকে ঝোপের কাছে সরিয়ে দিয়েছে । চটির গায়ে ৫ নম্বর লেখা ।গঙ্গার ঘাটের দিকে এগিয়ে গেলাম । তিনটে নৌকো দাঁড়িয়ে আছে পাড়ের দিকে ।মাঝ গঙ্গায় আরও নৌকো ভাসছে ।বাঁ দিকে তাকালে বিদ্যাসাগর সেতু । যেন হাত বাড়ালেই ধরা যাবে ।কিন্তু নৌকো গুলোর গায়ে লেখা নাম্বার দেখে সব গুলিয়ে গেল । নৌকোর নম্বর গুলো W দিয়ে শুরু ।তারপর আরও চারটে সংখ্যা । কিভাবে চটির নম্বরের সাথে নৌকোর নম্বর মেলাবো ভাবছি ।যে তিনটে নৌকো পাড়ের কাছে তাঁদের নম্বর গুলো ছিল W1391,W1523,W1301 মাঝ গঙ্গায় ভাসতে থাকা নৌকো গুলোর নম্বর বোঝা যাচ্ছে না ।। তবে এটা ঠিক আর্জমা যদি এসেই থাকে তবে আমি বুঝতে পারবো না এমন ব্যবস্থা কখনোই করবে না । তাই মাঝগঙ্গার নৌকোর সম্ভবনা বাতিল করে দিলাম । থাকলে পাড়ে কাছের নৌকো তিনটির মধ্যে যে কোনো একটির মধ্যে আছে । হঠাৎ মাথায় এলো চারটে নম্বরের যোগফল দিয়ে ইন্ডিকেট করেনিতো? একটা নৌকোর নম্বর W1301 অর্থাৎ 1+3+0+1=5। তাহলে নিশ্চই এই নৌকোটাতেই আর্জমা আছে । আমি দ্বিধা না করে সটান ওই নৌকোয় উঠে পড়লাম ।
এখানকার নৌকো গুলোর বেশ বদনাম আছে । ছোই দেওয়া পর্দা ফেলা নৌকো গুলো হল নারী পুরুষের অবৈধ মিলনক্ষেত্র । এই নৌকোটায় কোনো মাঝি ছিলনা । নৌকোর ভেতর দুজন বসে আছে একজন নারী একজন পুরুষ । বাইরে থেকে কথা শোনা যাচ্ছে । ছাউনিটা পর্দা ফেলা বলে ভেতরটা দেখার উপায় নেই । আমি পর্দা সরিয়ে দেখলাম আর্জমা বসে আছে আর একটু তফাতে আরেকজন যুবক । আমি ঢুকতেই বলল আর্জমা বলল, “আয় অর্ক । আচ্ছা আলাপ করিয়ে দিই ইনি সাব ইন্সপেক্টর পুনীত সিং ।”ছদ্দবেশী পুনীত নমস্কার জানালো । আমিও প্রতিনমস্কার করলাম ।আর্জমা বলল,” পুনীত লেটস মুভ “। পুনীত আমার দিকে তাকিয়ে সৌজন্যের হাসি হেসে বেরিয়ে গেল ।পুনীতের ছদ্দবেশ মাঝির মতো । মোটা গোফটাও বোধহয় নকল । মুখে গায়ে এক দু পোচ কালো রং মাখা । আর্জমাও মেকআপ করেছে । চুড়িদার পড়েছে কিন্তু মাথায় উইগ বিনুনি করা আর মুখেও বেশ লাউড মেকআপ । আমি বললাম,”কিরে এতো আয়োজন করেছিস কেন,”। আর্জমা বলল,”বাবু ঘাস খেতে তো আর IPS হয়নি । যখন ফোন করলি তখনি বুঝেছি বেশ ঘাবড়ে গেছিস, কাগজ ওলার পোস্টপেইড ফোন থেকে ফোন করছিস, আবার লুকিয়ে দেখা করতে চাইছিস । তার মানে তোর ফোন ট্যাপড “আমি হতবাক হয়ে বললাম, “ইমপ্রেসড বাট কি করে বুঝলি?” “আমি ফের ওই নাম্বারে কলব্যাক করেছিলাম ।একঝলক হেসে বলল আর্জমা । আর নাম্বার থেকে কানেকশন বৃত্তান্ত জানা খুব সহজ । আর যখন লুকিয়ে দেখা করার কথা বললি বুঝলাম ইউ আরে বিন স্পাইড । তাই এই ব্যবস্থা । এবার বলতো ব্যাপারটা কি? বেশ কিছু দিন ধরেই মনে হচ্ছে তুই কিছু লুকোচ্ছিস ।সব ব্যাপার বলছিস না. প্লিজ বল । আই ক্যান হেল্প ইউ । বিলিভ মে “। আমি বললাম,”হ্যাঁ জানি রে, তাইতো তোর কাছেই ছুটে এলাম, আই রিয়েলি নিড ইউর হেল্প “। নৌকোর ঝাকুনিতে বুঝলাম নৌকো চলছে । আমি অর্জমাকে একদম গোড়া থেকে শেষ অব্দি বলতে লাগলাম ।