T3 || ১লা বৈশাখ || বিশেষ সংখ্যায় শমীক জয় সেনগুপ্ত

পয়লা বৈশাখ, একলা নয়
পয়লা বৈশাখ বললেই স্মৃতির সঙ্গে বেশ কিছু টুকরো ভালোলাগা ভেসে ওঠে। কতগুলো মুখ যারা হয়তো কালের নিয়মে হারিয়ে গেছে কিন্তু মনে সর্বদা বিদ্যমান, কিছু আচার নিয়ম যা সারা বছর না মেনেও শুধুমাত্র এই একটা উৎসবকে উপলক্ষ করে ক’দিনের জন্য ফিরে আসে .. এই সব সূক্ষ্ম ও একান্ত নিবিড় অনুভূতি নিয়ে নববর্ষের পরব আসে আমাদের জীবনে। মনে আছে ছেলেবেলায় জেনারেল নলেজে পড়তে হত গ্রেগরিয়ান দিনপঞ্জীর হিসেবে চতুর্থ মাস অর্থাৎ এপ্রিলের ১৪ এবং ১৫ তারিখ হিন্দুশাস্ত্র মতে বাঙালী নববর্ষ। কিন্তু বাঙালীই বোধহয় একমাত্র জাতি যারা ধর্মের ঘেরাটোপ নয় নিজেদের ঐতিহ্য ও ভালোবাসায় এই উৎসবকে করে তুলেছে বাঙালীর শুভ সূচনার উৎসব। এইদিনটা তাই কেবলমাত্র হিন্দুদের উৎসব বা অন্য কোন ধর্মের উৎসব এ নয়, এই কথা কোন বাঙালী মানতে পারবে না। কারণ এইদিন ভারতবর্ষে যেমন আদর ও আচার অনুষ্ঠানের সঙ্গে পালন করা হয়, ঠিক একইভাবে ১লা বৈশাখকে বাংলাদেশেও বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা ও নানা ধরনের সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে বরণ করে নেয় আপামর মানুষ। দিনটা তো আসলে বছরের শুরুর দিন, তাই সারা বছর যাতে সুখে সম্বৃদ্ধিতে ও শান্তিতে ভালোভাবে কাটানো যায় তারই আয়োজনে ধনী দরিদ্র, জ্ঞানী এবং অশিক্ষিত প্রায় সব মানুষই নিজের ও নিজের প্রিয় মানুষজনের প্রার্থণা ও শুভেচ্ছা দিয়ে এক নতুন সময়ের সূচনায় ব্রতী হয়।
যদিও বিষয়টা নববর্ষ বরণের তবু পয়লা বৈশাখ ( পয়লা <পহেলা < প্রথম) শব্দটার সঙ্গে বাঙালীর জনজীবন ওতোপ্রোতভাবে জড়ানো । দেশের অন্যপ্রান্তে কোথাও বৈশাখী (উত্তর ভারত), কোথাও বিষুব (তামিলনাডু) বা চৈত্র সংক্রান্তির দিন আসাম ত্রিপুরা আদি পূর্বাঞ্চলে যেখানে বিহু ও বৈ-শা-বি অনুষ্ঠিত হয় এই একইদিনে কিন্তু পয়লা বৈশাখ বললেই কোথাও যেন একটা প্রাণের ছোঁয়া পাই। যদি ইতিহাসের কথা বলি তবে বলতে হয় আমাদের এই বঙ্গাব্দ যা অর্ধেক মানুষজন জানে বলে মনেই হয় না তা কিন্তু এই এই পয়লা বৈশাখে শুরু হয় না। আসলে গৌড়ের রাজা শশাঙ্ক (যার রাজ্যকাল আনুমানিক ৫৯০ খৃস্টাব্দ থেকে ৬২৫ খৃস্টাব্দ) সৌরপঞ্জিকার ভিত্তিতে যে বর্ষপঞ্জির প্রচলন করেছিলেন সেই দিনটি ছিল ২০শে মার্চ ৫৯৪ খৃস্টাব্দ। বাংলার মাস হিসেবে যেটা ছিল চৈত্র মাস। পরবর্তীকালে সম্রাট জালালুদ্দিন মহম্মদ আকবর তাঁর শাসনকালে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন চান্দ্রমাসের ওপর নির্ভরশীল হিজরী বছর যা সৌর বছরের থেকে ১১ – ১২দিন পিছিয়ে তাকে সৌর পঞ্জিকাতে রূপান্তরিত করবার। বাংলা কৃষিপ্রধান অঞ্চল। এখানে চাষ আবাদ থেকে সব কাজই ঋতুর ওপর নির্ভরশীল। আর ষড়ঋতুর বৈচিত্র একমাত্র এখনেই দেখা যেত। ফলে সম্রাটের কথা মত ইরান বংশোদ্ভূত বিশিষ্ট জ্যোতির্বিজ্ঞানী আমির ফতুল্লাহ শিরাজী এই বর্ষপঞ্জির প্রচলন করেন ১৫৮৪ খৃস্টাব্দে, যদিও সম্রাটের নির্দেশে পঞ্জিকা প্রচলনের জন্য আরো ২৯ বছর পূর্বে সম্রাটের রাজ্যাভিষেকের সময় থেকে এই বঙ্গাব্দের গণণা শুরু করা হয়। হিজরী বর্ষপঞ্জি অনুসারে এই বঙ্গাব্দ যখন শুরু হয় তখন রমজানের মাস ছিল বৈশাখ। আর পবিত্র রমজানের কথা মাথায় রেখেই এই মাসকে বঙ্গাব্দের প্রথম মাস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
ছোটবেলা থেকে এটা দেখেই বড় হয়েছি যে নববর্ষ শুধুমাত্র একদিনের আনন্দ উৎসব নয়। সেই নীলের দিন থেকে বাড়িতে পুজো পুজো গন্ধ। সকাল থেকে ঘরদোর ঝাড়পোঁছ করা, পুরোনো যা কিছু অব্যবহার্য তাদের এক জায়গায় করে তাদের বাড়িছাড়া করানোর একটা চল আমাদের আছে। এটা প্রায় সব বাড়িতেই হয়। মায়েরা সন্তানের মঙ্গল কামনা করে নীলকন্ঠের জন্য ব্রত পালন করেন। আমি বরাবরই এই কটা দিনের জন্য মুখিয়ে থাকতাম। একে তো দুর্গাপুজোর পর একটা উৎসব যেখানে নতুন জামাকাপড় পাওয়ার রেওয়াজ আছে। তায় বাড়ির একমাত্র ছেলে আর মামাদের একটা মাত্র ভাগ্না হওয়ার সুবিধা এই যে দরকারের বেশী নতুন জামা কাপড় পেতাম। তাই নীল চড়ক কাটিয়েও নববর্ষের দিন দুবেলা দুটো নতুন কাপড় গায়ে উঠতো। নীলের দিন মা সন্ধের সময় নীলের ঘরে (শিব মন্দিরে) বাতি জ্বালিয়ে আসার পর ঐদিনটা আমরা ফলাহারই করি।
অমৃতমন্থনের সময় যে কালকূট হলাহল ওঠে, তার হাত থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করতে শিব সেই বিষপান করে নীলকণ্ঠ হন। কিন্তু কালকূট এর প্রভাবে সে নিজেই নিষ্প্রভ হয়ে ওঠে। তখন দেবী পার্বতী তারা রূপধারণ করে সেই বিষকে শিবের কন্ঠে রোধ করেন এবং তা সহ্য করবার ক্ষমতা প্রদান করে। সেই থেকে শিব নীলকন্ঠ। এটা গেল পুরাণের গল্প। ষষ্ঠীও মূলত লৌকিক ব্রত। লৌকিক ব্রতর আখেটিক খণ্ডে বলা হয় নীলকণ্ঠের সঙ্গে দেবী নীলাবতীর (যে কিনা মা দুর্গারই আরেকটা রূপ) বিবাহ সুসম্পন্ন হয় এই চৈত্র সংক্রান্তির আগের দিন। নীলকন্ঠ ও নীলাবতীর বিয়ের উপাখ্যান এবং একইসঙ্গে শিবকে সন্তানরূপে স্তনদান করে সমস্ত জগতকে ও শিবকে দেবী তারা যে রক্ষা করেন এই দুই আখ্যানকে মিলিয়ে সন্তানের মঙ্গলার্থে এই ব্রত পালন করা হয়। মূলত এটি শিব পূজা এবং সন্তানের মঙ্গল কামনা করা হয় বলে একে ষষ্ঠী হিসেবে অভিহিত করা হয় । নইলে এই তিথি কোনদিনই ষষ্ঠী তিথি নয়। আরেকটি লৌকিক কাহিনী আছে, এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ ব্রাহ্মণীর কথা। তাদের সন্তান জন্মানোর পরই সে সন্তান মারা যেত। ফলে সন্তান যাতে বেঁচে থাকে তাই তারা অনেক ব্রত পুজো ইত্যাদি করতো। অবশেষে কাশীর কোন এক ঘাটে দেবী ষষ্ঠীর তাদের দেখে কৃপা হয় ও সেই সময় দেবী বিধান দেন ওদেরকে নীলষষ্ঠীর ব্রত করতে। ষষ্ঠীর নিজেও লৌকিক দেবী হলে পুরাণ অনুসারে মা দুর্গার স্কন্ধমাতা রূপটিই হচ্ছে ষষ্ঠী। সেখানেই সে ষড়ানন কার্তিকের জননী। এবার এ সবই আমাদের বিশ্বাস আর পরম্পরা। আসল কথা হল মা সন্তানের মঙ্গল সব সময় চায়, এই দিনটিও তেমনি এক দিন যেদিন সব মায়েরা বিশ্বাস করেন এই ব্রত তাদের সন্তানদের দীর্ঘায়ু ও নীরোগ রাখবে।। যদিও সঠিকসময় কালের হিসেব আমার জানা নেই, তবে গাজনের আড়ম্ভ বোধহয় বাংলার পাল রাজাদের আমল থেকে। কারণ ঐ সময়টাই অখণ্ড বঙ্গভূমিতে বৌদ্ধধর্মাবলম্বী মানুষদের প্রতিপত্তি ও সম্বৃদ্ধির কথা আমরা ইতিহাসে পাই। আর এই সময় থেকেই বৌদ্ধদের একটি শাখা আবার প্রাচীণ বৈদিক ধর্মে নিজেদের বিশ্বাস ফিরে পেতে থাকে। ফলতঃ তারা পুনঃরায় হিন্দু হয়ে ওঠে। এবার আমাদের সাত পুরোনো তর্ক – “হিন্দুত্ব কোন ধর্ম না, বরং একটি সনাতন দর্শন ….” নিয়ে কথা বাড়াবো না, কারন দোরগোড়ায় যে দাঁড়িয়ে সে হল গাজন ও চড়ক উৎসব ।
তো কথা হচ্ছিল সেই বৌদ্ধদের নিয়ে যারা আবার হিন্দু হলেন। কিন্তু হলে কি হবে ? বৌদ্ধধর্মে যে তন্ত্রসাধনার প্রচলন ছিল তা তারা নিয়ে এল হিঁদুয়ানির ধাঁচে। এই সময়ই রাঢ় অঞ্চলে ধর্মঠাকুরের রমরমা বাজার … টি.আর.পি অনুযায়ী উনি এক নম্বর নায়ক। মাটি খুঁড়ে যে সব জায়গা থেকে ধর্মের মূর্তি পরে প্রত্নতত্ত্ববিদরা বের করে এনেছিলেন তার মধ্যে এক এক জায়গায় যেমন তথাগত গৌতমের প্রভাব বেশী দেখা যাচ্ছিল আবার কোথাও পিণাকীর ধ্যানমগ্ন অবয়বের সাদৃশ্য চোখে পরবার মত ছিল। তা যাই হ’ক, শিবই হও আর বুদ্ধদেব – বাংলার মানুষ তাকে ধর্ম বলে মেনে নিল। ঘেঁটু, ওলাইবিবি, বিষহরির মতই বাংলার লেবেল সাঁটা স্বগৃহের লোকাল ঠাকুর … অর্থাৎ লৌকিক দেবতা। আর ঠাকুর থাকবে যেখানে সেখানে তার মাহাত্ম্য তো থাকতেই হবে….নইলে আর কিসের হাই প্রোফাইল ? মাহাত্ম্য থেকে পূজো অর্চনা… আর তার থেকেই ভক্তিমূলক আখ্যান, পালাগান এবং অতি অবশ্যই একটি জলজ্যান্ত মঙ্গলকাব্য । ঘনরাম চক্রবর্তী, ময়ুরভট্টের মত পণ্ডিত কথক ঠাকুরেরা ধর্মমঙ্গল লিখে ধর্মঠাকুরকে করে তুললেন ক্লাসিক দেবতা।
রাঢ় বঙ্গ, রুখা মাটির দ্যাশ – মানুষ ওখানে প্রকৃতির প্রতিকুলতার সাথে লড়াই করে জীবনধারন করতো। ফলে নানান কসরত তাদের দৈনন্দিন মেহনতী জীবনের অঙ্গ হয়ে গেছিল। এই কসরত ও বৌদ্ধদের তন্ত্রবিদ্যার যে আচার আচরন তাই দিয়েই শুরু হয় ধর্মঠাকুরের উৎসব বা গাজন উৎসব । চৈত্রকে আদিবঙ্গে বৎসরের প্রথম মাস হিসেবে মানা হত … তাই তারা সারামাস ব্যাপী শুদ্ধাচার পালন করে সংক্রান্তির দিন নানা রকম কসরতের খেলা দেখিয়ে, মেলা বসিয়ে এই উৎসব ও ধর্মের ব্রত উদযাপন করতো।
পরবর্তীকালে ধর্মঠাকুরের ক্রেজ কমে এলে, বা তাকে শিবের অংশ হিসেবে হিন্দুদের বড়সর একটা অংশ দেখতে শুরু করলে এই উৎসব শিবের গাজন রূপে পরিচিতি পেতে শুরু করে। লৌকিক ধর্মের ব্রত তখন উত্তরবৈদিক যুগের প্রধান দেবতা শিবের বিবাহ উৎসব এর আকার নেয়। তাই সঙের দল শিব-গৌরী সেজে মাঙ্গনে বেড়োয়। আর কৃষিপ্রধান সমাজ পায় এক নতুন উৎসব …. গাজন।গ্রামেগঞ্জে এখনো শুনি গাজনের সং বেড়োয়, চড়কতলায় মেলা বসে, কিন্তু আজন্ম কলকাতায় বেড়ে ওঠা আমাদের কাছে চৈত্র সংক্রান্তি মানে নতুন বছরের কাউন্টডাউন শুরু। কখনো কখনো চৈত্রের দুপুরে বা একটু বেশী বেলায় মাগনের জন্য লোক জন আসে, হাঁক পারে “ বাবা তারকনাথের চরণে সেবা লাগিইইইই ….. মহাদে—–ব”। ঢাক ঢোল পিটিয়ে সে এক কাণ্ড হয় যেন। সংক্রান্তির দিন আমাদের বাড়িতে সব রান্নাই নিরামিষ, আর রাতে ভাত নয়। সমস্ত বাসনপত্র ধুয়ে মেজে, আমরা অপেক্ষা করি একটা নতুন সকালের জন্য। অনেককেই দেখেছি চৈত্র সংক্রান্তির সন্ধ্যায় তিনরাস্তার মোড়ে চালভাজার গুঁড়ো উড়াতে। ওপার বাংলার অনেক মানুষই বিশ্বাস করেন যে চালের ছাতুর সঙ্গে সঙ্গে তারা তাদের দুঃখ হতাশা এবং সমস্ত বিপদও উড়িয়ে দিচ্ছেন, আর বছরের শেষদিন নিজের সঙ্গে করে এই সব মন খারাপের অনুভূতি ও আশঙ্কাদের নিয়ে পারি দিচ্ছে অজানার পথে। দিনটার মতই তারাও আর ফিরে আসবে না।
নববর্ষের সকাল মানেই আমাদের একরাশ অন্যরকম ভালোবাসা বয়ে আনা। নানা ধরনের বৈঠকী আড্ডা, আর প্রভাতফেরি দিয়ে শুরু হত সকালটা। জল খাবারের আগে চা পর্বে সিঙারা আর জিলিপি থাকবেই। আমার এক মামার কাকভোর থাকতে থাকতেই কালীঘাটে মায়ের বাড়িতে লম্বা লাইন ঠেলে পুজো দিয়ে আসতো। সঙ্গে চলে লক্ষ্মী গনেশ পূজো। শালুতে মোড়া লাল খাতায় সিঁদুর আর তেল হলুদ দিয়ে কয়েনের ছাপ তুলে রাখা, সারা বাড়িময় ধূপ ধূনোর গন্ধের সঙ্গে মিশে যাওয়া ফুল আর মিষ্টির গন্ধ। আসলে যাদের ব্যাবসা আছে, তারা এমন কি সাধারণ মানুষজনও কালীবাড়িতে পুজো দিয়ে সবার মঙ্গল চেয়ে দিনটা শুরু করতো। বছরের প্রথম দিন ভালভাবে কাটলে বাদবাকি দিনগুলোও যে সুন্দরভাবেই কাটবে এই বিশ্বাস সবার মনের ভিতরে বদ্ধমূল। আমাদের বাড়িতে ভোরবেলা থেকেই স্নান আহ্নিক সেরে বাড়ির মহিলারা সব দরজাতে শ্বেতচন্দন আর সিঁদুরের ফোটা ও স্বস্তিক চিহ্ন আঁকেন। তারপর তারা বাদবাকি সব কাজে হাত ছোঁয়ায়। আর মজা হচ্ছে এই যে সারাদিন গান বাজনা, অতিথি সমাগম সব কিছু থাকলেও আমাদের ছোটদের মন পড়ে থাকতো সন্ধ্যাবেলার জন্য। এখন তো হালখাতার রেওয়াজ খুব একটা দেখা যায় না, কিন্তু আমরা ছেলেবেলা থেকে অপেক্ষা করতাম কখন সন্ধে নামবে আর আমরা দল বেঁধে ভাই বোনেরা বাড়ির বড়দের সঙ্গে গয়নার দোকান বা যে যে জায়গা থেকে হালখাতার নিমন্ত্রণ আসে সেখানে যাব। আমার আবার পছন্দের ছিল জলে গোলা রসনা আর কোন দোকান যদি কুলফিমালাই করতো তো কথাই নেই। এখন ভাবলে হাসিই পায় এই রঙে গোলা জল খেতে যাওয়ার লোভে নিয়ম করে বইখাতা নিয়েও বসতে হয়েছে, আবার দুপুরে খেতে বসে খাসির মাংসও পরিমাণে কম খেয়ে ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছ। মা বলেন বছরের প্রথমদিন সব ভাল কাজ একটু একটু করে করে রাখা ভাল। আসলে ছেলেবেলায় অল্পে সন্তুষ্ট হওয়া যায়, আর যত বড় হই চাহিদা বাড়ে, লোভ বাড়ে। নিজের সঙ্গে থাকতে আজকাল এত বেশী ভালো লাগে যে রোজই তাই একান্তযাপন চলে। কিন্তু এর মধ্যেও কোথাও পুরোনো সুর ভেসে আসে, যে সুরে পয়লা বৈশাখকে বরাবরই মনে হয়েছে এক করবার উৎসব। তাই যে যতই প্যাঁচ পয়জার দিয়ে পয়লা বৈশাখকে একলা (১লা) বৈশাখ হিসেবে দেখাক না কেন আমরা আজও অপেক্ষায় থাকি কখন নববর্ষের ভোর আসবে, কখন যেন আম্মার গায়ে লেপটে থাকা পুরোনো আমি এই নতুন আমিকে শুভেচ্ছা জানাবো, বলবো – “আগামীদিনগুলো খুব ভাল কাটাও হে, শুভ নববর্ষ”।