শেষ কবে ওর সঙ্গে কথা হয়েছিল মনে নেই অপলার। জ্যোতিষ্ক বলেছিল – ও অপলাকে নয়, ভালবাসে অপলার ভাই অনলকে। শুনে পাথরের মত দাঁড়িয়ে ছিল অপলক দৃষ্টি নিয়ে। কিন্তু পরের মুহুর্তে ভেবেছিল, ভাই আর ও যদি ভাল থাকে, থাকুক না। এসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে হাসপাতালের কেবিনের সামনে হঠাৎ দেখা। জ্যোতিষ্ক একটু ভারিক্কি হলেও এখনো ওর মধ্যে একটা ছেলেমানুষ লুকিয়ে আছে। এত দুশ্চিন্তার মধ্যেও মুখে হাসি। অনলকে বলছে, “ভাবিস না… তোকে আমার আগে যেত দেবো না”। অনল হাসপাতালে, কবিনের বেডে … ওর রাজরোগ।
অনল আর জ্যোতিষ্কর সম্পর্ক কেউ মানেনি। অন্যদিকে অপলা বিয়ে করে বাবার পছন্দের পাত্রকে। তারপর… সংসার এক ল্যাবরেটরি। ভালবাসা আর একঘেয়েমি পাইল হয়ে বাই-প্রোডাক্ট যাই হোক ভাই আর বোনের দেখা হল দশ বছর বাদে। তাও জ্যোতিই ফোন করেছিল। বলেছিল – “পলা, তুই না এলে ও যে ভালভাবে মরতেও পারবে না”।
সেদিন রাগে অভিমানে কত কড়া কথা বলেছিল সে জ্যোতিকে। পার্থ বলেছিল ওভাবে না বলতে। কিন্তু কথাগুলো পলা নিজের ভাই-এর শোকে বলেছিল না কি নিজের তা পার্থও বোঝেনি। ক্রাইসিস ওভার হলেই ওরা নিউজিল্যাণ্ড চলে যাবে। আর দেখাও হবে না। এসবই বলছিল অনল। অপলা ওর গায়ে হাত বুলিয়ে দিচ্ছিল আর চোখের জল মুছছিল সবার অগোচরে।
দশটা বছর। আগে পলার হাঁচি কাশি হলেও জ্যোতি বুঝতো। বলত- আমি না বুঝলে চলবে, আফটার অল বেস্টিজ। আজ কি ও বুঝছে যে পলার মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
এমন সময় কাঁধে একটা হাতের ছোঁয়া অনুভব করল পলা। পার্থ দাঁড়িয়ে। চোখে যেন এক শতাব্দীর জিজ্ঞাসা। পার্থ কি বুঝতে পারে ওকে!
পার্থ – ওরা ভাল আছে অপলা। ওদের জন্য জানি তোমার কষ্ট হচ্ছে কিন্তু দেখো ওরা সামলে উঠবে। চল বাড়ি যাই। বাড়ি ফিরতে হবে এবার।
করিডোর দিয়ে নিঃশব্দে হেঁটে চলল দুটো শরীর। কেবিনের ভিতর আরো দুটো শরীর। দুজোড়ারই পথ আলাদা, ভাল থাকা আলাদা। আচ্ছা, জীবনে বেস্টিজের সংজ্ঞাও বদলে যায় তাই না… ?