অণুগল্পে সুদীপ ঘোষাল

মাছ

সংসার চালাতে হয় আয় বুঝে।ব্যয় করতে হয় সামর্থ্য বুঝে।
সনাতনের ষাট বছর বয়স। এখন হিসেব করে, গুছিয়ে,চিন্তা ক’রে চলতে হয়।
সনাতন কাউন্সিলর ছিল যখন,তখন রোজ সকালে একটা পাঁচশ টাকা বের করে বলত,সব থেকে বড় মাছটা দিবি, চালাকি করবি না,আমারটা যেন সবথেকে বড় মাছ হয়।
বাজারে সকলে আড়ালে লুকিয়ে বলত ,সনাতনবাবু রোজ সকালে পাঁচশ টাকার নোট কোথায় পান? অবাক কান্ড, রোজ সকালে পাঁচশ টাকার নোট ভাঙিয়ে তার দিন শুরু হয়।
তারপর কত বসন্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলে এগিয়ে গেল।রাজনীতির গতিপথ পাল্টায়,দিন পাল্টায় আর তাল মিলিয়ে পাল্টায় সকলের জীবনের গতিপথ।
এখনও সনাতনেরর ষাট বছরের কঙ্কালখানা দেখলে অনেকেই পাশ কাটায়, সনাতন বোঝেন।আর বোঝেন,সে বর্ষাও নাই, আর সে ব্যাঙও নাই। আমাকে আর ভয় পাওয়ার কিছু নেই রে।কিন্তু যার শুরু হয় ভয়ঙ্করভাবে তাকে সহজে কেউ বিশ্বাস করতে পারে না।কখন যে কী হয়।
এখনও বাজারে যেতে হয় তাকে।তার ছেলেটা তাকে পাশ কাটিয়ে কলকাতায় বউ,ছেলে নিয়ে সুখে আছে।তার স্ত্রী রুগ্ন তবু কাজ করেন, এখনও দুবেলা দুমুঠো খান।বাজার থেকে ফিরলে সনাতনের স্ত্রী ব্যাগ খোলেন আর বের করেন, ‘একশ গ্রাম চুনোমাছ’।
– কত দাম নিলো গো।চুনোমাছগুলো খুব টাটকা।
সনাতন বলেন,চুনোমাছও তিনশ টাকা কেজি গো।আর মাছ খাওয়া যাবে না,পৌষমাস চিরকাল থাকে না গো।পরিবর্তনই সংসারের নিয়ম।
তার স্ত্রী বলেন, ঠিক বলেছো,দুঃখ কোরো না।রোজ মাছ খাওয়ার কী প্রয়োজন। আলুসিদ্ধ আর ভাত হলেই আমাদের বেশ চলবে দুজনের।জীবনে কত মাছ তো খেলাম, বলো?
সনাতন ভাবেন,এবার বোধহয় আর মান রাখা যাবে না।ক্রমশ জীবন, যৌবন একদিন শুকিয়ে যায় শীর্ণ নদীস্রোতের মত।
সনাতনের স্ত্রী জানেন, সনাতন শুকনো কিশমিশের মত, মরমে মরে শুকিয়ে গেছেন অনেক আগেই।এখন কেবল অতীত নিয়েই বেঁচে আছে। এখন তার জীবনটা পাকা ফলের মত।
কবে যে ঝরে পড়বে, কে জানে?

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *