T3 || অবিস্মরণীয় নজরুল || বিশেষ সংখ্যায় শর্মিলা ঘোষ

চেতনায় নজরুল
কখনও বিদ্রোহী কবি কখনও গানের বুলবুল, কখনও গণসঙ্গীত ,কখনও সাম্পানের গান, নজরুল চেতনা আজো বিবেকে আসীন ,আজো সাম্য বাদের সোপান……
নজরুল ইসলাম তাঁর ব্যতিক্রমী কবিতা,গান, উপন্যাস,নাটক,গল্প,প্রবন্ধ,
এবং রাজনৈতিক চেতনার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতা, সাম্রাজ্যবাদ উপনিবেশবাদ, মৌলবাদের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ ভাবে কলম ধরেছিলেন।
তাঁর জীবনের নানা আলোচিত বিষয়গুলো নিয়েই তাঁকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা।
শুধু কবিতায় নজরুল কে আটকে রাখা যায়না। ইংরেজ সরকারের ঘুম ছুটিয়ে দিয়েছিলেন যে বাঙালি কবি তাঁর বিদ্রোহগাথা কতটুকুই বা আলোচিত হয়!!
ইংরেজ সরকার শুধুমাত্র তার রচনাকে নিষিদ্ধ করেই ক্ষান্ত হয়নি,তাঁকে গ্রেফতার ও কারাদন্ডে দন্ডিত পর্যন্ত করেছিলেন। বিচারাধীন বন্দী হিসাবে ১৯২৩ সালে ৭ই জানুয়ারি নজরুল আত্মপক্ষ সমর্থন করে যে জবানবন্দি প্রদান করেন বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তা “রাজবন্দীর জবানবন্দী” নামে পরিচিত। নজরুল ইসলাম প্রায় চল্লিশ দিন একটানা অনশন করে ইংরেজ সরকারের জোর জুলুমের প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।এই মহামানবের জীবন নানা বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ।শুধু কবি হিসাবেই অনেকে তাঁকে মনে রাখেন অথচ জীবনে নানা রকম পেশায় তিনি যুক্ত ছিলেন।
আনুমানিক ১৯১৭ সাল থেকে ১৯২০ সাল পর্যন্ত সামরিক জীবনের পরিধির মধ্যে তিনি বেঙ্গলি রেজিমেন্টের একজন সাধারণ সৈনিক থেকে ব্যাটেলিয়ান কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার অবধি হয়েছিলেন।এর সঙ্গেই তিনি সাহিত্যচর্চা চালিয়ে যেতেন।
নজরুলের সাংবাদিক জীবনের শুরু হয় ১৯২০ সালে কোলকাতায় আসার পর।শেরে বাংলা ফজলুল হকের সম্পাদনায় , মুজফ্ফর আহমদ ও কাজী নজরুল ইসলামের যুগ্ম সম্পাদনায় শুরু হয় সান্ধ্য দৈনিক “নবযুগ”।এর জন্যেও ইংরেজ সরকারের বিরাগভাজন হন তিনি।
১৯৩৮ সালে রবীন্দ্রনাথের
“গোরা” ছবির সংগীত পরিচালক ছিলেন তিনি।যদিও বিশ্বভারতী মিউজিক বোর্ডের অনুমোদন পাওয়া যায়নি।তখন নজরুল, নরেশ মিত্র,সতু সেন কে সঙ্গে নিয়ে রবীন্দ্রনাথের সাথে দেখা করে অনুমোদন এনেছিলেন।
১৯৩৮ সালেই নাট্যনিকেতনে মঞ্চস্থ হয়েছিল শচীন সেনগুপ্তের কালজয়ী ঐতিহাসিক নাটক ‘সিরাজদৌল্লা’।এই নাটকের সংগীত রচয়িতা ও
সুরসংযোজক ছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম।
একাধারে শ্যামাসঙ্গীত ও গণসঙ্গীত রচনা করেছেন নজরুল। সেই সঙ্গে আধুনিক বাংলা গানে ইসলামী গানের ধারা সংযোজন করেন।
নজরুলের যে ইসলামী গানটি ১৯৩২ সালে শিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহমদের কন্ঠে অভূতপূর্ব বাণিজ্যিক সাফল্য আনে তা হলো,’ ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ’।
শ্যামা সঙ্গীত রচনা করতে গিয়ে লিখেছিলেন–
“ভক্তি, আমার ধুপের মতো,
উর্ধ্বে ওঠে অবিরত।
শিবলোকের দেব দেউলে,
মা’র শ্রীচরণ পরশিতে।
রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুর পর নজরুলের ব্যথাভরা হাহাকার আর নজরুলের মৃত্যুর পর বাঙালির যন্ত্রণা বুঝি আজো হৃদয়ে বাজে।
গান নাটক কবিতা আর রাজদ্রোহীতার এমন মেল বন্ধন বাঙালি সত্ত্বাকে গর্বের আসনে বসায়। নজরুলের মতো সাম্যবাদী স্পষ্ট উচ্চারণ ,বিবেক জাগ্রত করা চেতনার স্বরলিপি কজন লিখতে পেরেছেন খুব সন্দেহ আছে। বর্তমান রাজনৈতিক সামাজিক সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে আরো বেশিকরে নজরুল নিয়ে আলোচনা হোক, চর্চা হোক। মানুষ মননে নজরুলকে স্থাপন করুক সাম্যবাদের নিরীখে।
তথ্যসূত্র – বিভিন্ন পত্র পত্রিকা