গদ্যানুশীলনে সুদীপ ঘোষাল (গল্প সিরিজ)

বিবেকের চড়

বাসে উঠেই একটা লোক এক সুন্দরী মহিলার   পিছনে দাঁড়ালো।বাসে বেশ ভিড়। এই লোকাল বাসগুলো একদম, যাকে বলে নড়বড়ে। খাটালা বাস দুলতে দুলতে চলেছে। লোকটি আরামসে পিছনে ধাক্কা মারছে। বাসের কুড়ি জোড়া চোখ কমপক্ষে নজর রাখছে। কে একজন বলে উঠলো, শালা দেখেও সুখ। এবার মহিলা গর্জে উঠলেন,সকালে উঠেই গাঁজা সেবন করেছেন মনে হয়। একটু সরে দাঁড়ান। নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখুন। লোকটি নির্বিকার। হেলদোল নেই। গভীর চিন্তায় মগ্ন মনে হয়।
বুঝলাম,লোকটার কপালে কষ্ট আছে।

একটা বছর চল্লিশের যাত্রী   লোকটাকে বললো, দু কান কাটা আপনার। সরে দাঁড়ান। তা না হলে এক ঘা নিচে পড়বে না। সাবধান।
এইসব যাত্রীরা  মেয়েদের  সাহায্যের জন্য ছুটে যায় তাড়াতাড়ি।কিন্তু প্রয়োজনে  হাওয়া হয়ে যায়।
হঠাৎ মহিলাটি ঘুরে দাঁড়িয়ে লোকটার গালে সপাটে এক চড় মারলেন।    লোকটি চড় খেয়ে বসে পড়লেন।
মহিলাটি একটু অবাক হলেন। লোকটি কোনো প্রতিবাদ করলেন না কেন?কি হলো উনি বসে পড়লেন কেন?  যতই হোক মায়ের জাত তো। চড় মেরে ভয় হচ্ছে তার। তিনি বলছেন, লোকটাকে, একটু দেখুন না। হয়ত মাথা ঘুরে গেছে।
বছর পঁচিশের একটি ছেলে এগিয়ে গিয়ে  বললো,বসে কেন?  উঠে বসুন। যান নেমে যান। না হলে দেবো আর এক চড়। বদমাশ কোথাকার। আরও পাঁচজন কন্ডাকটরকে ডাকলেন।অভিযোগ করলেন বসে থাকা লোকটার বিরুদ্ধে।
কনডাক্টর ভাড়া নিতে এলেন। সবাই ভাড়া দিলেন। কিন্তু লোকটি বসে    আছে। কন্ডাকটর ভাড়া নিলেন না তার কাছে। একটা সিট খালি হলে বসিয়ে দিলেন।
মহিলা জিজ্ঞেস করলেন,ভাই ওনার ভাড়া নিলেন না কেন?
কন্ডাকটর বললেন, আপনি চড় মারলেন    দেখলাম। কিন্তু যাকে মারলেন সে দেখতে পায় না আপনার আমার মত। কথাও বলতে  পারেন না। তবু উনি ভিক্ষা করে একটা অন্ধদের জন্য সেবাশ্রম চালান।
মহিলাটি হঠাৎ করে কেঁদে ফেললেন। বাসের মধ্যে একটা থমথমে পরিবেশ।
আমি নিচে নেমে ভাবলাম, নিঃশব্দে বিবেকের চড়টা, মহিলার গালে বেশ জোরেই লেগেছে। তা না হলে উনি কাঁদবেন কেন?
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।