(৫)
কলকাতার রাস্তা গুলো রাত্রি বাড়লে শুনশান হয়ে যায় একদম। হুস হুস করে এক একটা গাড়ি চলে যায় কোন দিকে না তাকিয়ে বেপরোয়ার মত। সোহাগের বাড়িটা দাদুর আমলের ,নিচের তলা ভাড়া দেওয়া। ওপরের অংশটা সোহাগের বাবা ফ্ল্যাটের মত বানিয়ে নিয়েছেন একদম ।সোহাগ তাকিয়ে থাকে দূরে সাউথ সিটি বিল্ডিং এর দিকে। পায়রার খোপের মতো একটার পর একটা ঘর সাজানো ।লাইটগুলো জ্বলতে থাকে ,রাত্রি বাড়লে, কিছু কিছু আলো নিভে যায়। আকাশের দিকে তাকায় সোহাগ। বাইরেটা আজ গুম মেরে রয়েছে। মেঘ উঠেছে ভীষণ ।লাল হয়ে গেছে রাত্রির আকাশ ।সোহাগ শাটারটা টেনে রুমের লাগোয়া ঝোলানো বারান্দায় এসে দাঁড়ায় ,হালকা হাওয়া ছেড়েছে ।গুড়ুম গুড়ুম করে ডাকছে মেঘ —ছোট ছোট চুল গুলো সোহাগের চোখে মুখে এসে পড়ে। সোহাগ ভাবে অচেনা মানুষের সাথে কি করে সারা জীবন চলবে। ওকে ওর মত করে সবার পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয় তাছাড়া চিরাগ ওকে যতটা চেনে আর কেউ ততটা নয়। আচ্ছা চিরাগের কথা মা ভাবল কেন !সোহাগ চিন্তা করে এটা সত্যিই যে চিরাগ ছাড়া ওর মন কেউ ভালো বোঝে না ,অথচ চিরাগকে বিয়ে করার কথা সোহাগ কোনোদিন ভাবেই নি ।আহারে বেচারী– যখন শেষের আইসক্রিমটা কেড়ে নিয়েছিল সোহাগ,তখন চিরাগের মুখটা দেখার মতো হয়েছিল। রাগলে কিন্তু চিরাগের মুখটা দারুণ দেখায় ,নাকটা তেমনি ফুলে যায়, সোহাগ তো মাঝে মাঝে গাল টিপে দেয়, সেদিন যখন পাঞ্জাবি পড়ে এসেছিল কলেজ ক্যাম্পাসে বার্ষিকী অনুষ্ঠানে রতিকান্তের মত লাগছিল।আর ওই নেকু অনন্যা চিরাগের গা ঘেঁষে সেলফি তুলছিল অসহ্য লাগছিল তার। দুদিন পরে যখন সাত সকালে ফোন করে বলল যে ওর সাথে ঝগড়া হয়েছে কি যে আনন্দ আর তৃপ্তির ঝর্না বইছিল মনে। সোহাগ ফিরে আসে নিজের রুমে, ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে চিরাগ ফোন করেছিল বেশ কয়েকবার ,সময়টা দেখে কল ব্যাক করে সোহাগ ,”বল রে ভ্যাবলা।”
“ওই মোটি তোর বিয়ে ঠিক হয়ে গেল?”
“খুব আনন্দ নারে তোর শালা আমি বলে মরে যাচ্ছি ঝামেলায়!”
“কেনরে আবার কি হলো?”
“আজ কি বার রে?থার্সডে ?সানডে অংশুর মা-বাবা আসবেরে একেবারে আশীর্বাদের থালা সাজিয়ে। তুই ও আসিস, মা ফোন করবে তোকে।”
“বলিস কি! তোকে বিয়ে করতে রাজি হল? যাক বিয়ের মেনুটা যখন ঠিক করবে ডাকিস আমায়।”
“হ্যাঁরে ছোটলোক তোর তো ভালো লাগবেই আর কোনো মোটি তোকে জ্বালাবে না, ট্রামে চড়ার জন্য বায়না করবে না ,আইসক্রিম খাওয়ানোর জন্য মাথা খাবে না ,ময়দানে হাওয়া খেতে নিয়ে যেতে বলবে না ,আমিনিয়ার বিরিয়ানি খাওয়াতে…..”এইটুকু বলেই সোহাগ ফ্যাচ করে কেঁদে ফেলল।”
“এই মোটি তুই কাঁদছিস কেন?? সোহাগ সোহাগ?” সোহাগ করে ফোন কেটে দিয়েছে!