গল্পেরা জোনাকি তে শম্পা গুপ্ত – ১

রূপলাগি
হ্যালো কে বলছেন?
আমি , সৌরিশ।আপনার ট্রু কলার নেই?
‘ওহ আপনি! না নেই। ওসব ওতো পারিনা। ছেলে সব সেট করে দেয়। বলুন।’ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তুলিকা।
“কদিন ফেসবুকে অন দেখছি না।ভাবলাম শরীর খারাপ হলো কিনা।সাহস করে ফোন করলাম।” সৌরিশের সাফাই।
“হ্যাঁ নম্বর তো দিয়েছি ফোন করার জন্যই।”হেসে ওঠে তুলিকা, “না কিছু হয় নি। আমার মাঝে মাঝে কিছু ভালো লাগে না। ডিপ্রেশন।”
সৌরিশ কিছুক্ষণ চুপ ক’রে থাকে। তারপর বলে,”খুব দেখতে ইচ্ছে করছে আপনাকে। আপনার আন্তরিক কথা আমার ভালো লেগেছে। ম্যাসেঞ্জারে কথা বলতে ইচ্ছে করে না।”
“এই তো বেশ ভালো। আবার দেখার কী দরকার। দেখলে তো আপনার ভালো নাও লাগতে পারে।”,তুলিকা মজা করে ।
“না না নিশ্চয়ই ভালো লাগবে। আপনি খুব মিষ্টি আর বেশ স্মার্ট।”সৌরিশ বেশ উৎসাহে বলতে থাকে।
“দেখি পরে জানাবো ।এখন রাখছি। পড়তে আসবে।” ফোনটা তুলিকা কেটে দেয়।
গত আটমাস তুলিকা আর সৌরিশ ফেসবুক ফ্রেন্ড। রাতের দিকে সৌরিশ মেসেজ করে। তুলিকা তখন পোস্টগুলো দেখে। বিশেষ কারো সাথে কথা বলে না।লাইক কমেন্ট করে। সারাদিন সময় হয় না। অফিস ,টিউশন ,সংসার।
এর মাঝেই একদিন সৌরিশ রিকোয়েস্ট পাঠায়। তুলিকা অ্যাকসেপ্ট ক’রে নেয়। রোজ সৌরিশের প্রশ্ন এত রাতে তুলিকা জেগে থাকে কেন?
এভাবেই সময় একটু একটু করে ওদের কাছে আনছিল।দুজন ক্লান্ত ধ্বস্ত মানুষ।পরিবারের সমস্ত না পাওয়ার দাবী মেটাতে মেটাতে দু’জন কুঁজো হয়ে যাওয়া মানব মানবী একটু শান্তির খোঁজ করে রোজ তিনটে চারটে কথার মাঝে।
একদিন সৌরিশ তুলিকার বয়স জানতে চায়।
“আমি আপনার থেকে বেশ খানিকটা বড়োই হবো”,তুলিকা হাসতে হাসতে বলে। “কিন্তু বয়েস জেনে কী হবে? বন্ধুত্বের কোনো বয়েস হয় না। মানসিক মিলই তো বন্ধুত্ব। আমি বড়ো হলে কী বন্ধুত্ব করা যাবে না ?”
সৌরিশের অস্থিরতা বেড়ে যায়। আপনাকে দেখে একদম তো বোঝা যায় না।আপনি ঠিক বলছেন না।
খুব মজা ক’রে কথা বলেন তো!
তুলিকা বিষন্ন স্বরে বলে, “একটুও মিথ্যে বলছিনা। আচ্ছা আমি স্মার্ট বা মিষ্টি দেখতে যদি না হই তাতে কী অসুবিধা বলুন তো?”
“আপনি বেশ ফর্সা লম্বা তাইনা?”সৌরিশ কেমন একনাগাড়ে বলতে থাকে,”আপনি বেশ সুন্দর। ”
এতক্ষন তুলিকা সহ্য করছিল। “শুনুন আমার আপনার সাথে এসব কথা বলার সময় নেই। রাখুন।”
তুলিকা ফোন সুইচ অফ ক’রে দেয়।