অণুগল্পে সুদীপ ঘোষাল

আলোরঙের ম্যাডাম
ধমাস, দুম…করে বোমা ফাটছিল রাস্তায় কোন একটা গণ্ডগোলের জন্য।
মানুষে মানুষে বিভেদ এখন চরম হয়ে উঠেছে।
তার মাঝে পড়ে গেছিল ইতু ম্যাডাম। ইতু ম্যাডাম একটা স্কুলে পড়ান। বিয়ে করেন নি।সংসার তরীর কান্ডারী তিনি। তার তরী সাতজন যাত্রীতে বোঝাই। ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই ইতু ম্যাডামের তরীতে।
ছাত্রীরা, ইতু ম্যাডাম ক্লাসে ঢুকলেই আলোরঙের হয়ে যেত। তাদের মুখমন্ডলের চাঁদ, ধুয়ে দিত পাশ ফেলের কচকচানি।
ইতু ম্যাডাম তার পাঠদানের যাদুকাঠি বুলিয়ে কালো বোর্ডে ছাত্রীদের রঙীন ভবিষ্যতের ছবি আঁকতেন।
ইতু ম্যাডাম একদিন স্কুলে না এলে, স্কুলে আসত প্যাঁচার দল, তারা দিনকে রাত বানিয়ে দিলে, ছাত্রীরা ম্লানমুখে বাড়ি ফিরত। কেউ বলার থাকত না,ওদের ওপর অবিচার করো না, ওরা শিশু।
ইতু ম্যাডাম আজ স্কুলে এসে ক্লাসের ভিতরে ছাত্রীদের সঙ্গে ভিজতে ভিজতে চলে গেলেন মনগঙ্গার তীরে। সেখানে চল্লিশ মিনিট জম্পেশ জোয়ারে সাঁতার কেটে স্টাফরুমে বসলেন।
স্টাফরুম কন্টকপূর্ণ হতেই ছেঁড়া মনটাকে সেলাই করার জন্য মেয়েদের সঙ্গে টিফিন সারলেন ধীরে ধীরে।
তারপর আবার মোমবাতি নিয়ে ঢুকলেন শ্রেণীকক্ষে,আলো ছড়িয়ে বের হলেন আপন তরীর সন্ধানে। হাঁটতে হাঁটতে চলে এলেন বড় রাস্তায়। তিনি গুণগুণ করে গান গাইছেন,
‘একা মোর গানের তরী, ভাসিয়ে দিলেম নয়নজলে’ ইতু পূর্ণ হলেন গানের ছোঁয়ায়।
তার গন্তব্যের দিকে কী একটা গন্ডগোল হচ্ছে। হাজার মানুষ একে অপরকে আঘাত করছে। দুটি রাজনৈতিক দলের অমানবিক লড়াই শুরু হয়েছে।কেউ কারও কথা শুনছে না।
ইতু ভাবেন… রাস্তার রঙ লাল কেন?
কৌতূহলী ইতু ভিড়ে ঢুকতেই হারিয়ে গেলেন,অমানুষের মাঝে।
অনেক কালো হাত এগিয়ে আসে লোভের আড়ালে। কার হাত চেনা দায়।হাতগুলো সমাজ ছিঁড়ে, লজ্জা ছিঁড়ে, ভূষণ মাটিতে গড়িয়ে পৈশাচিক আনন্দে মশগুল।
ইতু রক্তাক্ত, হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন।এ যেন বল্কলহীন বৃক্ষ, আরোহী ডাল নাড়ায়, পাতা ছেঁড়ে।
ইতুর চিৎকার ঢাকা পড়ে যায় গন্ডগোলের বিভৎস শব্দে,
ধমাস, দুম করে আবার বোমা ফাটে।
আলোরঙের ম্যাডামেের ছায়া দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে প্রতিবাদে রাস্তায় নামে।