জীবন যেমন
সোমা নিজে পছন্দ করে এক বেকার ছেলেকে বিয়ে করে। তার নাম সমীর। তার ঘরবাড়ি কিছুই নেই। শেষে কাটোয়ার এক জঙ্গলঘেরা জায়গা নন্দনপাড়। কাটোয়ার একপ্রান্তে তারা একটা ঘর বাড়ি তৈরি করল।কোনরকমে থাকার মতো। বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে তারা সেই ঘরে থাকতো। বেড়া দিয়ে ঘেরা ঘরের ঘেরা ঘরের চারধার।খড়ের চালে কত শান্তি। দুইজনের ঘর সংসার করত চুটিয়ে।তারপর তাদের কোলে এলো পুত্রসন্তান। কিভাবে তারা কষ্ট করে কুড়ি বছর কাটাল সেখানে, ভগবান জানেন।খোলা মাঠে কত রকমের সাপ ঘরে ঢুকে পড়ত। কত দূরে বাজার। সেই দূর থেকে বাজার করতে হতো। টিউশনি করতে যেতে হত দশ মাইল দূরে। দুজনেই ছাত্র পড়িয়ে পরিশ্রম করে তবে সংসার চলত। ছেলের দুধ, খাবার আনা সবকিছু সোমার ওপর নির্ভরশীল ছিল। এত কষ্ট হতো যে ভাষায় বর্ণনা করা যায় না।
কুড়ি বছর পরে যখন কোন রাস্তা হল না। তখন তারা সেই কষ্টের দিনগুলোর বিনিময়ে সুখ কিনল। বাড়িটা বিক্রি করে দেওয়া র কথা ভাবল। আরও কিছু টাকা জোগাড় করে শহরে বাড়ি কেনার কথা ভাবল।
এতদিনে তিলে তিলে জমানো কষ্টগুলো জমিয়ে তারা স্বপ্ন দেখল একটা জাহাজের মত বড় বাড়ি তৈরি করেছে। অভাবের ঘরে মন্থর গতিতে জীবন চলত। তার স্বামী আবার ঠিকমতো কলমে আলো ছড়াতে শুরু করল, আর সে আকাশ হতে পারল সোমার জ্ঞানের জ্যোৎস্নার বিনিময়ে। তার স্বামীর লেখক জীবনে আকাশ হওয়ার স্বপ্নে সোমা কোনদিন বাধা দেয় নি।শুধু ভাবে যে সে শুধু তার স্বামী ও সন্তানের সুখের কথা। তবু তারি মাঝে কত দুখসুখ মিলেমিশে একাকার। আজ তারা সমস্ত জমানো টাকার বিনিময়ে তাদের নতুন বাড়ি কিনেছে, গাড়ি কিনেছে। কম্পিউটার কিনেছে। নিজের ছেলের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করেছে।
বাড়ির নাম রেখেছে জাহাজবাড়ি।