গদ্যানুশীলনে সুদীপ ঘোষাল (সিরিজ – ৬)

জগৎবেড়া জাল

তখন আমার আস্তানা নদীর ধারের বাংলোয়। ঘোর অমাবস্যার অন্ধকারে বসেছিলাম বারান্দায়।
 সব কিছুর  মাঝেই ঋতুজুড়ে আনন্দের পসরা সাজাতে ভোলে না প্রকৃতি।  সংসারের মাঝেও সাধু লোকের অভাব নেই।  তারা মানুষকে ভালোবাসেন বলেই জগৎ সুন্দর  আকাশ মোহময়ী, বলেন আমার মা। সব কিছুর মাঝেও সকলের আনন্দে সকলের মন মেতে ওঠে।  সকলকে নিয়ে একসাথে জীবন কাটানোর মহান আদর্শে আমার দেশই আদর্শ।

সত্য শিব সুন্দরের আলো আমার দেশ থেকেই সমগ্র পৃথিবীকে আলোকিত করুক।

এইসব চিন্তা করছি এমন সময়ে  হঠাৎ আমার কানের পাশ ঘেঁষে বেরিয়ে গেল সশব্দে এক গুলি। আমি অবাক। জঙ্গলের ভিতর আমার বাংলোর হদিশ কেউ জানে না নিজের লোক ছাড়া। তাহলে আমাকে গুলি করে মেরে ফেলার লোক কে?  পেশায় আমি গোয়েন্দা। শত্রুর অভাব নেই। কিন্তু আমার এই গোপন বাংলোর খবর পাঁচজন জানে। তারা সকলেই আমার নিকট আত্মীয়। আমার বৌ, ছেলে, রমেন, পিয়ু আর শ্যামল। বৌ, ছেলেকে সন্দেহ তালিকায় রাখি কি করে?  তবু…
আর রমেন, পিয়ু আর শ্যামল তিনজনই আমার খুব ভাল বন্ধু। তাহলে কে?  কে? কে? এই রহস্যে মোড়া ব্যক্তি।
তারপরদিন সকালে অফিসে গেলাম। হাসিমুখে সকলের সঙ্গে কথা বললাম। বুঝতে কেউ যাতে না পারে তার জন্য অনেক অভিনয় করলাম। কোন হদিস পেলাম না।
খুব কঠিন এক পরীক্ষায় আমাকে সফল হতেই হবে। ছেলে, বৌ কাউকে বললাম না কথাটা।
প্রায় একমাস পর বাংলোয় বসে আছি অন্ধকারে। একটা কালো মূর্তি মনে হল সামনে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে। অমাবস্যার রাতে অন্ধকারের সুযোগ নিতে চায় খুনী। আমি পাশ থেকে দেখলাম চেয়ারে বসানো বড় পুতুলটার উপর পরপর তিনটে গুলি করে খুনী পালাচ্ছে। ও বুঝতেই পারে নি আমার সাজানো নাটক। আন্দাজ করেছিলাম ঠিক। তবে নিশ্চিত হওয়ার জন্য ছুটতে লাগলাম মুখোশধারীর পিছনে পিছনে। শেষে ধরে ফেললাম বাম হাতে কলার চেপে। ডান হাতে আমার সার্ভিস রিভলবর। মুখোশ টেনে খুললাম। তাকে দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম।
অনেকদিন থেকে শ্যামল আর পিউয়ের একটা পরকিয়া সম্পর্ক চলছিল। পিউ শ্যামলকে পছন্দ করত না। সে বারবার সেকথা আমাকে বলেছে। পিউ বলত শ্যামল কবি । ওসব কবিত্ব আমার ভাল লাগে না। শালা ভিখারি, ভ্যাগাবন্ড। বেশ পয়সাওয়ালা এক রসিকের খোঁজে আমি আছি। দুদিন শালা আমার সঙ্গে বিছানায় শুয়েছে। একদম বিনা পয়সায়। বিয়ে করা বৌ নয় আমি। ওকে বারণ করে দিবি। আমি বলেছিলাম, ও তোকে ভালবাসে। ওরকম বলিস না। টাকাপয়সার সঙ্গে প্রেমের তুলনা করিস না।
পিউ বলেছিল, আমি তোকে ভালবাসি। ওর কাছে আমি যাব না।
আমি রেগে বলেছিলাম, পিউ আমার সংসার আছে। ছেলে আছে। আর শ্যামল বিয়ে করেনি আর তুই বিধবা। তোরা বিয়ে করে নে। সুখে থাকবি দুজনে।
পিউ জেদ করে বলল, আমি তোকেই চাই। আর যদি না পাই আমি সব শেষ করে দেব।
আমি বলেছিলাম, কি শেষ করবি।
— আমি নিজেকে শেষ করে দেব।
তারপর হয়ত চিন্তাভাবনা পাল্টে পিউ প্ল্যান পাল্টেছিল। আমি বিষয়টা গুরুত্ব দিই নি। কিন্তু পিউ শ্যামলের পোশাক পরে ছেলের সাজে কালো কাপড় ঢাকা দিয়ে আজ আমাকেই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবার প্ল্যান করেছিল।
একটুর জন্য আমি বেঁচে গেছি…
পিউ বলল, তাহলে আমি কাকে গুলি করে মারলাম।
আমি বললাম, সব কথা থানায় হবে। প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবি।
ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।