• Uncategorized
  • 0

ধারাবাহিক গল্পে সুদীপ ঘোষাল (অন্তিম পর্ব)

বাড়ি নিয়ে বাড়াবাড়ি – ৮

অনিল এসেছে। একজন খরিদদার এনেছে।অনিল তাকে বলছে, কেনার আগে আপনার জমির যে কোনও একদিকে একটি সাধারণ গর্ত করুন৷ এবার এই গর্ত খুঁড়ে তোলা মাটি দিয়ে গর্তটি ভরাট করে ফেলুন৷ গর্তটি ভরাট হয়ে যাওয়ার পর মাটির পরিমাণটি লক্ষ্য করুন৷ যদি দেখেন গর্তটি ভরাট হয়ে যাওয়ার পরেও সামান্য মাটি রয়ে গেছে তাহলে জানবেন জমিটি শুভ৷ যদি একটুও মাটি অবশিষ্ট না থাকে তবে জমিটি মধ্যম শ্রেণির৷ কিন্তু যদি সমস্ত মাটি গর্তে ফেলার পরেও গর্তটি যদি ভরাট না হয় তবে জানবেন জমিটি বসবাসের অযোগ্য৷
আমি বললাম,স্যার আমার বাড়ির প্ল্যানটা করে নিতে হবে।অনিল বললো,হবে কিন্তু ইনিও আমার বন্ধু। বাস্তু দোষ থাকলে বাড়ি নেবে না। আমি বললাম,ওসব কুসংস্কারের কথা ছাড়তো। অনিল বলল,এরজন্যই তোকে বাড়ি বিক্রি করতে হচ্ছে। ওনাকে আর অসুবিধার মধ্যে ফেলব না। তারপর আবার শুরু করলো,শুনুন বাস্তুশাস্ত্রের কথা। আপনি বাস্তু জমিটির কিছু অংশ কোদাল দিয়ে কুপিয়ে তিল বীজ বুনে দিন৷ এরপর প্রতিদিন বিকালে ও জমিতে জল দিন৷ লক্ষ্য রাখুন ওই তিল বীজের অঙ্কুরোদগমের সময়কালটি৷ যদি তিন দিনের মধ্যে ওই তিল বীজ অঙ্কুরিত হয় তবে জমিটি শুভ৷ পাঁচ দিন লাগলে মধ্যম শ্রেণির জমি৷ যদি সাতদিন বা তার বেশি সময় লাগে তাহলে জমিটি গৃহনির্মাণের অযোগ্য৷এইভাবে অনেক ঘরোয়া পদ্ধতির মাধ্যমে বাস্তু সমস্যা নির্ধারণ বা সংশোধন করা যায়৷
ক্রেতা বলল,যে কোন জন্য জমির আকার কি রূপ হওয়া উচিত। অনিল বললো,জমির পরিমাণ যেমনই হোক না কেন তার আকার বা আকৃতিটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ স্বল্প পরিমাণ জমি হলেও তার আকার যদি সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় তবে সেই জমি গৃহনির্মাণের পক্ষে উপযুক্ত৷ তাই সেখানে বসবাস শান্তিপূর্ণ হয়৷ অন্যথায় দোষযুক্ত জমিতে বসবাস করলে নানা রকম বিপর্যয় হতে পারে৷ মোটামুটিভাবে আয়তাকার, বর্গাকার, বৃত্তাকার জমি বাড়িঘর নির্মাণের পক্ষে অশুভ৷ তবে একথা ঠিক সর্বগুণ সম্পন্ন জমি পাওয়া অত্যন্ত দুঃসাধ্য ব্যাপার৷ তাই ছোটোখাটো বাস্তুদোষ থাকলেও অভিজ্ঞ বাস্তু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ সেই দোষত্রুটির সংস্কার করে নেওয়াই যায়৷
বাস্তুশাস্ত্রে সিঁড়ি নির্মাণের গাইডলাইন বাড়ির সৌন্দর্য্যের অন্যতম অংশ এই সিঁড়ি৷ বাস্তুশাস্ত্র অনুসারে সিঁড়ি এমনভাবে নির্মাণ করা উচিত তা যেন ঘড়ির কাঁটার মতো ঘোরে অর্থাত্‍ ক্লক ওয়াইজ’ভাবে ঘুরবে৷ সিঁড়ি এমনভাবে হওয়া উচিত তা যেন পূর্ব থেকে পশ্চিমদিকে ওপরে উঠে যায়৷


বাড়িটা শেষপর্যন্ত বিক্রি হল না। দাম কমতে কমতে তলানিতে ঠেকেছে।অনিলকে পাশ কাটিয়ে বললাম,আর বিক্রি করব না। আমি বাস্তু প্ল্যান বের করে দোতলা করব লোন নিয়ে। তারপর নিচের তলা ভাড়া দিলে মাসে ছহাজার পাব। ব্যাঙ্কের কিস্তির টাকাটা হয়ে যাবে। আবার দোতলাটাও হবে। অনিল বলল,বাড়ি বিক্রি করতে গিয়ে তোর রেজারেকশন হয়েছে।আমি বললাম, তার অর্থ কি?
অনিল বলল,পুনরুজ্জীবন হল তোর।
আমি বললাম,দোতলা বাড়ি পেলে ছেলেটা তো থাকতে পারবে। বিক্রি করতে নেই বাড়ি। বাড়ি তো মন্দিরের মত।

সমাপ্ত

ফেসবুক দিয়ে আপনার মন্তব্য করুন
Spread the love

You may also like...

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

কপি করার অনুমতি নেই।